Mon, July 1, 2024

ই-পেপার দেখুন

জম্মুর যুবককে চলন্ত ট্রেন থেকে বাইরে নিক্ষেপ, একমাস পর অভিযোগ নিল পুলিশ

আবুল খায়ের

Published: 28 June, 2024, 05:21 PM
জম্মুর যুবককে চলন্ত ট্রেন থেকে বাইরে নিক্ষেপ, একমাস পর অভিযোগ নিল পুলিশ

 

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ সেনা অফিসার হওয়ার দু'চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে ট্রেনে চেপে। হাসপাতালের বিছানায় বেঁচে থাকার লড়াই করছে বছর তেইশের তরতাজা জম্মুর এক যুবক। পুলিশের বিরুদ্ধেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠছে। ঘটনাটি ঘটেছে ১৯ মে। শ্রী মাতা বৈষ্ণ দেবী কাটরা জম্মু এক্সপ্রেসে করে জম্মুর গ্রেটার কৈলাসের বাসিন্দা তুষার ঠাকুর জম্মু থেকে আহমেদাবাদ যাচ্ছিলেন সার্ভিস সিলেকশন বোর্ডে (এসএসবি) ইন্টারভিউ দিতে। ট্রেনের মধ্যে একদল যুবক ধূমপান করছিল। তুষার তার প্রতিবাদ করায় তাকে চলন্ত ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। লুধিয়ানা স্টেশনের কাছাকাছি স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে।

এক ইংরেজি দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে আহত তুষার বর্তমানে লুধিয়ানার দয়ানন্দ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেড় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গিয়েছে। বর্তমান সে চলৎশক্তিহীন।

তবে ঘটনায় সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একমাস পর লিখিত অভিযোগ জমা নেয় লুধিয়ানার জিআরপি থানা। ১৯ মে ঘটনার পর থেকে আক্রান্ত যুবকের বাবা মা বারবার নানাভাবে আবেদন করার পর অবশেষে ২৪ জুন এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, একমাস অজ্ঞান থাকা অবস্থায় আক্রান্তের বাবা মার আবেদনের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করতে অস্বীকার করে পুলিশ। অবশেষে  সোমবার হাসপাতালের বিছানায় বসে কোনরকমে একটি অভিযোগ টাইপ করে পুলিশকে পাঠায় তুষার।

আক্রান্তের বাবা বীরেন্দর সিং জম্মু বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মচারী। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এর আগে তার ছেলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) চাকরির পরীক্ষায় লিখিত এবং ইন্টারভিউয়ে উত্তীর্ণ হলেও সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এ দিন যাচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরপরই জিআরপিকে জানানো হলেও একমাস তারা কোনও অভিযোগ জমা নেয় নি। একইসঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন বীরেন্দর। জিআরপির বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন শোকগ্রস্থ পিতা।

তুষার পুলিশকে মেইল করা অভিযোগপত্রে জানান, “ট্রেনে আমি শৌচালয়ে গিয়েছিলাম। যেখানে একজন পাগড়ি পরা লোক-সহ আমার বয়সী তিনজন লোক ছিল। তারা সিগারেট খাচ্ছিল। আমি তাদের ট্রেনের ভেতরে ধূমপান করতে নিষেধ করি। যখন বেরিয়ে এলাম, তখন তিনজন ছেলে আমাকে ধরে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। পড়ে যাওয়ার পর, আমার কিছু মনে নেই। তবে আমি যদি সেই ব্যক্তিদের দেখি তাদের চিনতে পারব। আমি প্রায় একমাস ভেন্টিলেটরে ছিলাম। আজকেও, আমার নাকে ও গলায় খাবার এবং অক্সিজেন সাপোর্টের জন্য পাইপ আছে যার কারণে আমি কথা বলতে না পারলেও কিন্তু আমি ঠিকমতো টাইপ করতে পারছি।" একইসঙ্গে তার অভিযোগ, তার যাবতীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার শাংসাপত্রের ব্যাগটি ট্রেনেই থেকে গেছে।  

লুধিয়ানা জিআরপি থানার ইন্সপেক্টর যতিন্দর সিং জানান, আক্রান্ত যুবকের বয়ান রেকর্ড করার জন্য তারা অপেক্ষা করছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি বর্তমানে জবানবন্দী দেওয়ার মত অবস্থায় না থাকলেও লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন। আমারা আজ্ঞাত পরিচয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছি।  লুধিয়ানা রেলস্টেশনের পার্শববর্তী সব স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

তুষারের বাবা জানান, বিগত এক মাস যাবৎ ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচারের জন্য কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হবে বলে তিনি জানান। তার পরেও তার ছেলে শুধুমাত্র বসতে পারবে। তুষার আদৌ আর কোনদিন হাঁটতে পারবে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়।     

Leave a comment