Mon, July 1, 2024

ই-পেপার দেখুন

নিট বিতর্কের মধ্যেই নেট বাতিলে ক্ষোভের আগুন দেশজুড়ে

ইমামা খাতুন

Published: 21 June, 2024, 08:00 PM
নিট বিতর্কের মধ্যেই নেট বাতিলে ক্ষোভের আগুন দেশজুড়ে


নয়াদিল্লি, ২১ জুন:  মঙ্গলে পরীক্ষা। বুধে বাতিল! পরীক্ষার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাতিল করা হল ইউজিসি-নেট পরীক্ষা। ৯ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ হতাশার গ্রাসে। কারো চোখে ক্ষোভের আগুন, কারও হতাশার ছায়া। নেট-কেলেঙ্কারির কালিমায় লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে? এমন নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে পরীক্ষার্থীদের মনে। পরীক্ষা বাতিলের খবর  প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন পরীক্ষার্থীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁদের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ দেখছেন দেশবাসী। সব কিছু উজাড় করে নিজেদের স্বপ্নপূরণে নেট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তাঁরা। এতদিনের কঠোর পরিশ্রম এক লহমায় কি করে বাতিল ঘোষণা হতে পারে। অজানা আশঙ্কা তাঁদের মনে চেপে বসেছে। পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের কোনও জবাব এনটিএ-র কাছে নেই। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের পরীক্ষা বাতিল সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেই তারা ক্লান্ত-শ্রান্ত! এনটিএ মারফত কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক পরীক্ষা বাতিলের কারণ হিসেবে জানিয়েছে, ‘ইউজিসি-নেট পরীক্ষায় অস্বচ্ছতা লক্ষ্য করা গেছে। তাই স্বচ্ছতার খাতিরে পরীক্ষা বাতিল করা হল।’ 
এবার এনটিএ দু’ভাগে ওএমআর (অফলাইন) মোডে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। মোহিনী (নাম পরিবর্তিত) কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি স্কলার এবং ইডব্লিউএস ক্যাটাগরির অন্তর্গত। বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন।  তিনি বললেন, আমি এখন পিএইচডি করছি। বেশ কয়েকবার নেট উত্তীর্ণ হয়েছি। কিন্তু আমার লক্ষ্য জেআরএফ (জুনিয়র রিসার্চ ফেলেশিপ)। তাহলে আমি পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের দায়িত্বও পালন করতে পারব। সেজন্য আমি আবার ইউজিসি নেট পরীক্ষা দিয়েছিলাম। দিল্লিতে আমার বাড়ি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে পরীক্ষা কেন্দ্র দূরে পড়ে। এতদূরে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। একে তো ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় প্রথমে ই-রিকশা, তারপর মেট্রো এবং তারপর অটো করে দিল্লির রোহিনী এলাকার পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাই। যাতায়াতেই প্রায় ৮০০ টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়াও পরীক্ষার প্রস্তুতির কঠোর পরিশ্রম, সময় অর্থ, মানসিক পরেশানির পর যদি শুনতে হয় এনটিএ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তাহলে একজন পরীক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা কেমন হয়, তা একজন পরীক্ষার্থীই বুঝতে পারবেন। মোহিনীর আরও প্রশ্ন, আগে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হত, এখন হঠাৎ বলা হল অফলাইনে পরীক্ষা হবে এবং প্রশ্নের উত্তর ওএমআর শিটে পূরণ করতে হবে। বুঝতে পারছি না এনটিএ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল?
ইউজিসি ভারতীয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সহকারী অধ্যাপকের চাকরি এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম এবং জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপে ভর্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন পত্র ফাঁস নিয়ে কেন্দ্র সরকার পূর্বেই আইন চালু করার পর ইউজিসি-নেট পরীক্ষা এই নতুন আইনের প্রথম বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়াল।  শিক্ষা মন্ত্রকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘পরীক্ষা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে, শিক্ষা মন্ত্রক ইউসিজি-নেট জুন, ২০২৪ পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন করে আবার পরীক্ষা নেওয়া হবে। নেট পরীক্ষায় অস্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে সিবিআইয়ের হাতে বিষয়টি হস্তান্তর করা হবে।’ শিক্ষা মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের পর এনটিএ-র ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এর আগে, মেডিকেলে ভর্তির জন্য এনটিএ-র ব্যবস্থাপনায় নিট পরীক্ষাতে কারচুপি ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। এই মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
পাবলিক এক্সামিনেশনস (অন্যায় উপায় প্রতিরোধ) আইন, চলিত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদে পাস হয়েছিল, কেউ যদি পরীক্ষার সময় অন্যায় উপায় অবলম্বন করে তাহলে তিন থেকে পাঁচ বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। এই সাজা নেট পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের ছাত্র শিনচান চ্যাটার্জি বলেন, ‘এনটিএ-র কর্মীদেরও চেকিং করা উচিত। যারা প্রশ্নপত্র নিয়ে আসে, যারা বিতরণ করে তাদেরও ভালোভাবে চেকিং করা উচিত। যেখানে প্রশ্নপত্র ছাপা হয়, সেখানে যথাযথ নজরদারি করা উচিত, নয়তো এসব বন্ধ করা কঠিন। 
 

Leave a comment