'দুর্ভাগ্যজনক' কে সুরেশকে প্রার্থী করা নিয়ে প্রতিক্রিয়া অভিষেকের
গতকাল ইউজিসি-নেট পরীক্ষা নিয়ে আজকে বাতিল ঘোষণা কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের
'প্রতারণার শিকার, ওদের কথামতো না চললে বুলডোজার নিয়ে আসবে', জমি দখলের অভিযোগে মন্তব্য সাংসদ ইউসুফ পাঠানের
পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় দেশ। এরই চাঞ্চল্যকর দাবি করল ধৃত এক পরীক্ষার্থী। অনুরাগ যাদব নামে গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি প্রকাশ্যে এসেছে। পুলিশের কাছে নথিভুক্ত করা জবানবন্দিতে ধৃত অনুরাগের দাবি, পরীক্ষায় বসার আগে সে যে প্রশ্নপত্রটি পেয়েছিল সেটির সঙ্গে পরীক্ষার দিনের প্রশ্নপত্র পুরোপুরি মিলে যায়।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'ইন্ডিয়া টু ডে' প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। নিট পরীক্ষার একদিন আগে ২২ বছর বয়সী অনুরাগকে কোটা থেকে পাটনায় ডেকে আনের তার মামা বিহারের দানাপুর নগর পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার সিকন্দর প্রসাদ যাদবেন্দু। এবং তার হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি প্রশ্নপত্র এবং তার উত্তর। পরীক্ষার শেষে পুলিশ অনুরাগকে গ্রেফতার করে।
প্রকৃতপক্ষে, ৪ জুন যখন নিট পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় তখন দেখা যায় এইপ্রথম একসঙ্গে ৬৭ জন পরীক্ষার্থী টপার তালিকায়। শুধু তাই নয় এরা প্রত্যেকেই ৭২০-র মধ্যে ৭২০ নম্বরই পায়। শীর্ষদের তালিকা দেখার পরেই নিট পরীক্ষায় কারচুপির প্রসঙ্গ উঠেছিল। ১৩ জুন এনটিএ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে গ্রেস মার্কসহ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আবার নেওয়া হবে, তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ এখনও প্রশমিত হয়নি। বিহার এবং গুজরাত থেকে প্রশ্ন ফাঁসের খবরে এনটিএ-র বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সিবিআই তদন্তের দাবিও করা হয়। কারচুপির মামলায় পাটনা ও পঞ্চমহল থেকে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাটনায় ৪ ছাত্র-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এবং পড়ুয়াদের পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য দলটি লক্ষাধিক টাকা নিয়েছে। পঞ্চমহলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নেওয়া হয় এবং সঠিক উত্তর পূরণ করে উত্তরপত্র জমা দেয় দলটি।
এই ঘটনায় পুলিশ পৌঁছায় পাটনার জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সিকান্দার প্রসাদ যাদবেন্দুর কাছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। তিনি পরীক্ষার কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। পাটনার শাস্ত্রী নগর থানার পুলিশ অনুরাগ যাদবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেছে।
ধৃত অনুরাগ যে স্বীকারোক্তি দিয়েছে তা হল, 'আমার নাম অনুরাগ যাদব (২২ বছর)। আমি পারিদা থানা হাসানপুর, জেলা সমষ্টিপুরের বাসিন্দা। আমি শাস্ত্রীনগর থানায় ইন্সপেক্টর তেজ নারায়ণ সিং-এর সামনে ভয় বা চাপ ছাড়াই, লোভ বা প্রলোভন ছাড়াই আমার আত্মপক্ষ সমর্থনের বিবৃতি দিচ্ছি। আমি কোটার অ্যালেন কোচিং সেন্টারে থেকে নিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার মামা সিকান্দার যাদবেন্দু দানাপুর মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে ৫ মে ২০২৪-এ নিট পরীক্ষা আছে। কোটা থেকে ফিরে এস। পরীক্ষার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি কোটা থেকে ফিরে আসি এবং আমার মামা আমাকে ৪ মে রাতে অমিত আনন্দ, নীতীশ কুমারের কাছে রেখে যান। এখানে নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্র দেওয়া হয়েছিল। আমাকে এটি পড়ে রাতের মধ্যে মুখস্থ করানো হয়েছিল। আমার সেন্টার ছিল ডিওয়াই পাতিল স্কুলে। যে প্রশ্নপত্রটি মুখস্থ করার জন্য দেওয়া হয়েছিল আমাকে, সেই একই প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে। পরীক্ষার পর হঠাৎ পুলিশ এসে আমাকে ধরে। আমি আমার অপরাধ স্বীকার করেছি। এটা আমার বক্তব্য।'
অন্যদিকে সিকন্দর প্রসাদ যাদবেন্দু পুলিশের কাছে চাঞ্চল্যকর বিবৃতি দেন। তিনি বলেন যে সে ৪ জন নিট প্রার্থী আয়ুষ রাজ, শিবনন্দন কুমার, অভিষেক কুমার এবং অনুরাগ যাদবকে পাটনায় থাকতে সাহায্য করেছিলেন। অনুরাগ ছিল তার শালার ছেলে। মা রিনা কুমারীর সঙ্গে পাটনায় এসেছিল সে। যাদবেন্দু বলেছেন যে তিনি একটি র্যাকেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন যা কেবল নিট নয়, বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) এবং ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছিল। এছাড়া প্রার্থীরা যে গেস্ট হাউসে ছিলেন তার বিলও পাওয়া গিয়েছে। গেস্ট হাউসের বিল বইতে একজন 'মন্ত্রী জি'-এর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি অনুরাগ যাদব এবং তাঁর সহযোগীদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এই গেস্ট হাউসটি পাটনা চিড়িয়াখানা এবং পাটনা বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত। এই প্রসঙ্গে বিহারের ডেপুটি সিএম বিজয় সিনহা বলেন, গেস্ট হাউসে আটক ব্যক্তিরা প্রীতম নামে একজনের সঙ্গে জড়িত।
যাদবেন্দুর বিবৃতি থেকে পাওয়া পরীক্ষার্থী অভিষেক কুমারের বাবা অবধেশ কুমারের একটি চিঠির সামনে এসেছে।সেই চিঠিতে তার ছেলেকে নিট পরীক্ষায় পাস করার জন্য কিছু কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে। চিঠিতে তাঁর দাবি, " নিট পরীক্ষায় আমার ছেলে পাস করানোর জন্য আমি এক বছর আগে তাদের জন্য একটি ব্ল্যাঙ্ক চেক সই করে দিয়েছিলাম।" অবধেশ কুমার তার চিঠিতে লিখেছেন, যাদবেন্দুকে দেওয়া ব্ল্যাঙ্ক চেকের মাধ্যমে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ লক্ষ টাকায় রফা হয়েছিল।