আহমদ আবদুল্লাহ:
এখন আর মোদি ২.০ সরকার নেই। ক্ষমতায় এসেছে এনডিএ-র কোয়ালিশন সরকার। শীর্ষে কিন্তু হাল ধরে আছেন মোদিজি, অমিত শাহজি, নাড্ডাজি-রাই। বাদ শুধু মোদিজির প্রিয় স্মৃতি ইরানি। তবে তাঁকে রাজ্যসভায় আনা হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মোদিজি ৩.০-তে তাঁর নীতি এবং জুলুমের রাজনীতি কি বিন্দুমাত্র কমেছে? অবস্থা দেখে কিন্তু মনে হচ্ছে নীতিশ এবং নাইডু-র উপর এখন খানিকটা নির্ভরশীল হলেও মোদি আছেন মোদিতেই। জনগণের ভোট-বার্তা ও সংঘ পরিবারের সংযত হওয়ার নিদান মোদিজি ও তাঁর সরকারকে বিন্দুমাত্র দমাতে পারেনি।
প্রথমেই হামলা হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখিকা অরুন্ধতি রায়ের উপর। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর যিনি বিজেপি কর্তৃক তখত্-এ সমাসীন হয়েছেন, তিনি অরুন্ধতি রায়ের উপর কালাকানুন ইউএপিএ আইনে মামলা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, ষাটোর্ধ্ব এই লেখিকাকে এনডিএ সরকার দিল্লির তিহার বা আরও কোনও কুখ্যাত জেলে পাঠাবে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তিনি নাকি ‘দেশদ্রোহমূলক’ ভাষণ দিয়েছেন। ঘটনাটি অবশ্য ২০১০ সালের। এবার সরকার গড়ার পর প্রথমেই অমিত শাহজি-দের মনে হয়েছে ‘দেশ-বিরোধী’ না হলেও অরুন্ধতি রায় অবশ্যই মোদি-বিরোধী। তাই তাঁকে ঠান্ডা করতে হবে। এ জন্য তাঁদের ভাঁড়ারে ছিল ইডি, সিবিআই, এনআইএ, ইনকাম ট্যাক্স আরও কত বাহিনী। বাঘা বাঘা বিরোধীদের ঠান্ডা করা হয়েছে। ‘অন্য পরে কা কথা’ মুখ্যমন্ত্রীদেরও ছাড় দেওয়া হয়নি। তাঁরা সব জেলে পচছে। এবার অরুন্ধতির ভাগ্যে কী আছে, তা খোদায় মালুম। মোদি, শাহ বা সরকারের বিরুদ্ধে বললেই তিনি ‘দেশদ্রোহী’। ঠিকানা তাঁর তিহার। জামিনের কোনও সম্ভাবনাই নেই। রে আগে তিস্তা শিতলাবাদকেও একইভাবে কারাগারে রাখা হয়েছিল। তবে অরুন্ধতি রায়ের সৌভাগ্য তাঁর উপর ‘আতঙ্কবাদী’ তকমা চাপানো হয়নি। শুধু তাঁকে ‘দেশদ্রোহী বানিয়েই কম্ম সারা হয়েছে। তার অর্থ এই দাঁড়াচ্ছে, বিরোধীদের গ্রেফতারি এবং তিহার জেলে পাঠানো সমানে চলবে। নাইডু কিংবা নীতিশ এতে কোনও বাধা দেবেন না। আর অরুন্ধতি রায়কে নিয়ে মোদির এই দুই সহযোগী একটি বাক্যও খরচ করেননি।
এরপর দেখা যাচ্ছে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে ফের ফ্রিজ থেকে ‘গো-মাংস’ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এটা যে ‘গো-মাংস’ তার প্রমাণ সংগ্রহের জন্য বিন্দুমাত্র সময়োক্ষেপ করা হয়নি। হাজির হয়েছে বুলডোজার। পুলিশ যে বাড়ির ফ্রিজ থেকে ‘গো-মাংস’ আবিষ্কার করেছে, শুধু সেই বাড়িটি নয়, বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে আরও ১০টি বাড়ি। যদি কোনও মুসলিমকে সরকার অন্যান্যদের মতো বাড়ি প্রদান করে, তাহলে যে ভয়ংকর কান্ড হতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে গুজরাতে। সরকারি কর্মচারির এক মুসলিম মহিলাকে ফ্ল্যাট প্রদান করায় তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে সেই শহরে। ওই মুসলিম মহিলার ভালো বাড়িতে বাস করার সাধ চিরতরে ঘুঁচে গেছে। তাঁর অবস্থা ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ কিংবা ‘আগে তো প্রাণ বাঁচাই’ গোছের। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে যার ফ্রিজে ‘গরুর গোশ্ত’ পাওয়া গেল, শুধু তার বাড়ি নয়, গুঁড়িয়ে দেওয়া হল গরিব নিম্নবিত্তের আরও ১০টি বাড়ি। কোন আইনে? সেই প্রশ্ন মোদিজির সাগরেদদের না করাই ভালো। আইন ও প্রশাসন তাঁদের হাতে। তাই আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ভারতীয় সংবিধানকে লঙ্ঘন করেই তাঁরা নিজেরাই বিচারক।
তাই বুলডোজারের শাসন চলছিল, চলবে। এতে কোনও রুকাওয়াট কেউ খাড়া করতে পারবে না। যে চেষ্টা করবে, তার বিরুদ্ধেই জারি হবে হুলিয়া।
তাই বোঝা যায়, মোদি সরকার যেমন ছিল এখনও তেমনটিই আছে। ফ্যাসিবাদীপন্থায় কোনও বিরতি পড়েনি।