অর্পিতা লাহিড়ীঃ করোনার দাপট একটু কমতেই বাঙালি আবারও পর্যটনমুখী। শুক্রবার ছিল দোল, শনি,রবিবার এর সঙ্গে যুক্ত করে নিয়ে বেরিয়ে পড়া গেল। অফিস থেকে ছুটি মিলেছে দু দিনের। সাংবাদিক বন্ধু অমৃতা চক্রবর্তীর ফোন। একটু রহস্য রোমাঞ্চের সন্ধানে গেলে হয়না।
কোথায় যাওয়া যায়, আমরা তো শঙ্করের মত চাঁদের পাহাড়ে আ্যডভেঞ্চারে যেতে পারবোনা। তবে শঙ্করের স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বনগ্রাম বা বনগাঁ তে পাড়ি জমালে কেমন হয়।
সাংবাদিক বন্ধুর মনে ধরল প্রস্তাবটা। একটু গুগল ঘেঁটেঘুঁটে দেখা গেল মঙ্গলগঞ্জে নয়া পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নীলকুঠি বেশ নামডাক আছে। পাশেই ইছামতীর ওপারে পারমাদানে বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য। সঙ্গে ইছামতী তে নৌকা বিহারের সুযোগ।
শিয়ালদহ স্টেশন থেকে সকাল আটটা দশের বনগাঁ লোকাল। দশটার মধ্যে বনগাঁ। পেটাই পরোটা দিয়ে পেটপুরে ব্রেকফাস্ট করে আমরা এবার মঙ্গলগঞ্জে নীলকুঠি অভিযানে। নীলকুঠি কে অনেকে আবারও কাটাসাহেবের কুঠিও বলেন।
বনগাঁ থেকে ১৫ টাকা টোটো ভাড়া দিয়ে চাকদা বাসস্ট্যান্ডে। চাকদা বাসস্ট্যান্ড থেকে আমরা ২০০ টাকা দিয়ে রিজার্ভ করলাম অটো। যেটা নাটাবেড়িয়া হয়ে সরাসরি আমাদের নামিয়ে দেবে মঙ্গলগঞ্জ, নীলকুঠিতে। বনগাঁ থেকে মঙ্গলগঞ্জ কমবেশি ৪০ কিলোমিটার রাস্তা। অটোচালক সমীর ঘোষের সঙ্গে জমে উঠল গল্প।
জানা গেল ১৮০৩ সালে বনগাঁ নাটাবেড়িয়ার কাছে মঙ্গলগঞ্জে এক জমিদার ছিলেন মঙ্গলচন্দ্র আশ। তাঁর ছেলে লক্ষণচন্দ্র আশ বিলেতে গিয়েছিলেন লেখাপড়া করতে। লেখাপড়া যখন শেষের মুখে তখন তাঁর কিছু বিলিতি বন্ধুবান্ধব জোটে। তারা লক্ষণচন্দ্রকে বোঝায় যে দেশে ফিরে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হবে নীল চাষ।আশ পরিবারের হাত ধরে মঙ্গলগঞ্জে শুরু হয় নীলচাষ।তবে নীলকর সাহেবের স্বরূপ সামনে আসতে স্থানীয় কৃষকদের বেশি সময় লাগেনি। অত্যাচারী নীলকর সাহেবকে হত্যা করে গ্রামবাসীরা। তারপর থেকে এইভাবেই ভগ্ন হয়ে পড়ে আছে এই কুঠিবাড়ি।
নীলকুঠির পাশেই রয়েছে পারমাদান বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য। একটা নৌকা নিয়ে ভেসে পড়ুন ইছামতীর বুকে। পানকৌড়ি, মাছরাঙারা আপনার মন ভালো করে দেবে।চাইলে নৌকা পাড়ে রেখে প্রবেশ করুণ অভয়ারণ্যে। প্রবেশমূল্য ১৬০ টাকা।
আরও একটু আ্যডভেঞ্চার চাইলে রাত কাটান পাশেই ব্যাকপ্যাকার্সের টেন্টে। অনলাইনে বুকিং করতে পারেন। রাতের গাড় আঁধারে নীলকুঠি আপনার কাছে অন্য রূপে ধরা দেবে। আর তবে দেরী কেন। বেরিয়ে পড়ুন রহস্য রোমাঞ্চের সন্ধানে মঙ্গলগঞ্জ নীলকুঠিতে।( ছবি অর্পিতা লাহিড়ী)