অর্পিতা লাহিড়ীঃ উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বনগাঁ মহকুমার গোপালনগর শ্রীপল্লীর এই বাড়িতেই কেটেছে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যিক জীবনের অনেকটা সময়। ইছামতী থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বের এই বাড়িতে বসে বিভূতিভূষণের কলম জন্ম দিয়েছে পথের পাঁচালি, ইছামতীর মত কালজয়ী সব উপন্যাসের।কে বলতে পারে অপু-দূর্গা, ইন্দির ঠাকরুণ, সর্বজয়া, হরিহরেরা হয়ত উঠে এসেছিলেন এই সেই সময়কার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকেই। হয়তবা বাঙালির শৈশব -কৈশোরের হিরো শঙ্করের চাঁদের পাহাড়ের আ্যডভেঞ্চারের প্লট তৈরি করে দিয়েছিল ইছামতী। রবীন্দ্রনাথের যদি হয় পদ্মা, শরৎচন্দ্রের রূপনারায়ণ তবে বিভূতিভূষণের ইচ্ছামতী। আজকের মত তখন তার শীর্ণ কচুরিপানা ক্লিষ্ট চেহারা ছিলনা। প্রকৃতিপ্রেমিক বিভূতিভূষণের দিনের বেশির ভাগ সময়টা কাটত এই ইছামতীর ঘাটে বসে লেখালেখি করেই। বাড়িটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্মৃতিররেখা’। তবে, ওই নামকরণ হয় বিভূতিভূষণের মৃত্যুর পরে।
শ্রী পল্লীর এই বাড়ির লাগোয়া তৈরি হয়েছে বিভূতিভূষণ স্মৃতি রক্ষাপার্ক।রয়েছে সাহিত্যিকের একটি মূর্তিও রয়েছে। রয়েছে গেস্ট হাউস। তবে নেই যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ। আক্ষেপ ঝরে পড়ে কেয়ারটেকার সনৎ দাসের কথায়।
১৮৯৪ খ্রিঃ ১২ ই সেপ্টেম্বর কাচড়াপাড়ার কাছে ঘোষপাড়া – মুরাতিপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্ম নেন বিভূতিভূষণ। বনগাঁর কাছে গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশন স্কুলের শিক্ষক ছিলেন তিনি। । এই স্কুলেই তিনি আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন। এই মহান কথাসাহিত্যিক ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা নভেম্বর তারিখে বিহারের (বর্তমানে ঝাড়খন্ড) ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে (১৩২৮ বঙ্গাব্দ) প্রবাসী পত্রিকার মাঘ সংখ্যায় উপেক্ষিতা নামক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। ভাগলপুরে কাজ করার সময় ১৯২৫ সালে তিনি পথের পাঁচালী রচনা শুরু করেন। এই বই লেখার কাজ শেষ হয় ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে। শ্রীপল্লির এই বাড়ি আর ইছামতীর পারেই লেখা হয় এই কালজয়ী সাহিত্য। স্মৃতিররেখা বাড়িতে আজও ভিড় করেন সাহিত্যনুরাগীরা। আম,জাম, বড়বড় গাছ দিয়ে ঘেরা এই বাড়িতে আজও কান পাতলে যেন শোনা যায় সেই সব অমর সৃষ্টির অনুরণন।
ছবি অর্পিতা লাহিড়ী