Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন

দ্বিতীয় ফরেন্সিক রিপোর্টে বিস্ফোরক তথ্য, আইআইটি-র মেধাবী ছাত্র ফায়জানকে হত্যা করা হয়েছে

Puber Kalom

Puber Kalom

Published: 17 June, 2024, 03:16 PM

বিশেষ প্রতিবেদক: শেষ পর্যন্ত খড়গপুর আইআইটি-র ছাত্র ফায়জান আহমেদ-এর হত্যা রহস্য সামনে এলো। উজনী অসমে দাফন করা ফায়জানের লাশ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে পুনরায় কলকাতায় আনা হয়। আর তারপর ফায়জানের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। এই দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নেতৃত্বে ছিলেন ড. এ কে গুপ্ত। তিনি আদালতে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের যে প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করেছেন তাতে ড. গুপ্ত স্পষ্ট বলেছেন, এটা কোনও আত্মহত্যার ঘটনা নয়।

বরং আইআইটি-র এই মেধাবী ছাত্রটিকে খুন করা হয়েছে। ফায়জানের ঘাড়ে রয়েছে গুলি করার খত। এ ছাড়া ঘাড়ে তাকে ছুরি দিয়েও আঘাত করা হয়েছে। ফায়জানের মাথার খুলির ডানদিকের টেম্পোরাল হাড়টি মিসিং ছিল। তার মেরুদণ্ড এবং পিছনের দিকেও ছিল আঘাত ও রক্ত। আর তাকে বিষ দিয়ে হত্যার কারও কোনও প্রমাণ মেলেনি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের এই রিপোর্টটি প্রকাশ হওয়ার পরে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তিনসুকিয়ার এই মেধাবী মুসলিম তরুণটিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
এটি ২০২২ সালের ঘটনা।

তাঁর মা তখনই প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাঁর ছেলের লাশ কয়েকদিন পরে কেন পাওয়া গেল? সে তো হস্টেলে ছিল। হস্টেল সুপার বা অন্য কর্তৃপক্ষরা কেন ফায়জানের খোঁজ করল না? তিনি বলেন, তাঁর ছেলে যে হস্টেলের রুমে থাকত, সেখানে তার সমস্ত কিছু রয়েছে। অথচ তাঁর ছেলের লাশ পাওয়া গেছে অন্য একটি নির্জন হস্টেলে। এ নিয়েও কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ কোনও মন্তব্য করেনি।
ফায়জানের অর্ধগলিত রক্তাক্ত লাশ দেখার পরই তাঁর মা রেহানা আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর ২৩ বছরের ছেলের লাশ দেখার পর তিনি রক্ত এবং অন্যান্য যেসব চিহ্ন দেখেন, তাতে তাঁর স্পষ্ট মনে হয় এ কোনও আত্মহত্যার ঘটনা নয়। তাঁর আদরের ছেলেকে খুনই করা হয়েছে। সে-কথা তিনি আইআইটি-র যে প্রতিনিধিকে সামনে পান তাঁকে বলেও ছিলেন। বলেছিলেন পুলিশকেও। কিন্তু কেউ তাঁর কথা বিন্দুমাত্র গ্রাহ্য করেননি।

উজনী অসমের তিনসুকিয়ায় ছিল ফায়জানের বাড়ি। সে প্রথম থেকেই একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। পড়াশোনার জন্য যে বেশ কয়েকটি পুরস্কারও পেয়েছিল। ফায়জানের মা রেহানা আহমেদ ‘পুবের কলম’-কে বলেছিলেন, বড় আশা করে ফায়জানকে তাঁরা খড়গপুর আইআইটি-তে ভর্তি করিয়ে ছিলেন। এই খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাওয়ায় তাঁদের আন¨ের সীমা ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যা হল, তা আপনাদের সামনে রয়েছে।

ফায়জানের মা খবর পাওয়ার পর বিমানে করে কলকাতায় আসেন। পরে যখন তিনি খড়গপুরে উপস্থিত হন তখন কোথায় তাঁর প্রতি সমবেদনা দেখানো হবে, তা না করে তিনি যেন সঙ্গে সঙ্গে ফায়জানের লাশ নিয়ে চলে যান, তার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। কেউ তাঁর কোনও কথা শুনতেই রাজি হচ্ছিলেন না।

তাঁর লেখা কোনও অভিযোগপত্র পুলিশ বা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতে রাজি ছিল না। শেষ পর্যন্ত তিনি ডিএম-এর ঘরে গেলে, আয়েশা রানির তৎপরতায় তাঁর লিখিত পত্র পুলিশ গ্রহণ করে।

বোঝাই যাচ্ছিল, সকলে মিলে কোনও কিছু লুকোতে চাইছে। আর তাতে জড়িত রয়েছে পুলিশ, প্রথম ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার এবং খড়গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ভেবেছিলেন এভাবেই মেধাবী ও প্রতিভাধর ছাত্র ফায়জানের নির্মম হত্যাকাণ্ডকে তাঁরা চাপা দিতে পারবেন।

ফায়জানের মা রেহানা আহমেদ গ্রামের খুবই সাদাসিধে সরল এক গৃহবধূ। কিন্তু তাঁর মধ্যে রয়েছে ছেলের জন্য ইনসাফ পাওয়ার জন্য ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা। তিনি কলকাতায় থেকে মামলা করে গেছেন এবং কোনও ভয়-ভীতি, প্রলোভনের কাছে মাথানত করেননি।

হাইকোর্টের নির্দেশে এই ঘটনার নতুন করে তদন্ত করার জন্য যে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট গঠন করা হয়েছিল, তার প্রধান কে জয়রামন সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরাও আমাদের তদন্ত রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দিয়েছি। তবে আমরা হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনও ক্লু পাইনি। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সিটও খড়গপুর পুলিশের লাইনেই তদন্ত করেছে এবং তাদের রিপোর্টও খড়গপুর পুলিশের সাজানো কিস্সা-কেই মান্যতা দিয়েছে। তবে খ্যাতনামা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সব জারিজুরি এবং সব লুকোচুরিকে ফাঁস করে দিয়েছে।

এখন কথা হচ্ছে, কে বা কারা এবং কেন ফায়জানকে এত নির্মমভাবে হত্যা করল? কেন এই নৃশংস খুনকে লুকানোর জন্য খড়গপুর পুলিশ, প্রশাসন, আইআইটি কর্তৃপক্ষ এবং ময়নাতদন্তকারী ডাক্তাররা একজোট হলেন? কেন প্রথম ময়নাতদন্তের সময় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও তা ভিডিয়োগ্রাফি করা হল না? এই প্রশ্নগুলির উত্তর অবশ্যই খুঁজতে হবে। হাইকোর্টের শুনানির সময় হয়তো বা আরও তথ্য সামনে আসবে। ‘পুবের কলম’ পত্রিকাও এ নিয়ে অন্তর্তদন্তমূলক রিপোর্ট প্রকাশ করবে।

  

Leave a comment