Wed, June 26, 2024

ই-পেপার দেখুন

ঈদ-উল-আযহার নামায ছেড়ে, কুরবানিকে কুরবান করে, গ্রামবাসীরা ঝাঁপিয়ে পড়লেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষদের বাঁচাতে! কী বলবেন বিদ্বেষের কারবারিরা?

Bipasha Chakraborty

Published: 18 June, 2024, 12:51 PM
ঈদ-উল-আযহার নামায ছেড়ে, কুরবানিকে কুরবান করে, গ্রামবাসীরা ঝাঁপিয়ে পড়লেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষদের বাঁচাতে! কী বলবেন বিদ্বেষের কারবারিরা?

 

 

পুবের কলম প্রতিবেদক: ভারতবর্ষ আছে সেই ভারত বর্ষতেই, পশ্চিমবাংলা আছে পশ্চিমবাংলাতেই। আমাদের দেশের যে বহুত্ববাদের সংস্কৃতি ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা সবদিক থেকেই সফল, যদিও দেশের একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী বহুবার চেষ্টা করে চলেছে কিভাবে একটি জনগোষ্ঠীকে নিশানা বানানো যায়। কয়েক সপ্তাহ আগেও এই রাজ্যের বেশ কিছু নেতা যে সম্প্রদায়কে এনকাউন্টারের হুমকি দিয়েছিলেন এবং কথায় কথায় এই রাজ্যকে যোগী রাজ্য করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন সেই রাজ্যে গতকাল সোমবার ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পর, যারা সবার আগে এগিয়ে এসেছিল তারা হচ্ছে এই রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়। মিলনের বার্তার পরিবর্তে যারা বিদ্বেষের বার্তা দিয়েছিলেন তাদের কাছে গতকালের রেল দুর্ঘটনা শিক্ষা দিয়ে গেল।

যে সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এই রাজ্যের সংখ্যালঘুদেরকে ঘুরিয়ে হুমকি দিচ্ছিলেন তাদের কাছে বার্তা দিল গতকালের রেল দুর্ঘটনা।
 সকাল পৌনে নটা নাগাদ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা হয় ফাঁসিদেওয়ার কাছে রাঙাপানি রেলস্টেশনের কাছাকাছি। এখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে যে গ্রামগুলি দেখা যায় এই গ্রামগুলিতে বাস করে মুসলিম সম্প্রদায়। বিকট আওয়াজে দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসী চমকে উঠে এটা ভেবে কিছু একটা ঘটেছে। 
ঈদের নামাযের শেষে দোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল গ্রামের সাধারণ মানুষ ঈদের নামায ছেড়ে ছুটে গেলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত রেলের কাছে। 
রেল কর্তৃপক্ষের কাছে খবর গিয়েছে ঠিকই কিন্তু কর্তৃপক্ষ আসতে আসতে যে সময় নিয়েছেন তাতে আর যাই হোক আরো অনেক মানুষের মৃত্যু হতে পারত এরা তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার কার্যের হস্তক্ষেপ না করলে।


ঈদু উল আযহার নামাযের দোয়া ছেড়ে কয়েকশো মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছে উদ্ধার কাজে। বাড়ি থেকে চাদর জল খাবার সবকিছু নিয়ে সে হাজির গরিবগুর্ব মুসলিমরা। 
গতকাল কুরবানির দিনে কুরবানি হয়নি রাঙাপানি রেলস্টেশন সংলগ্ন মুসলিম গ্রামগুলিতে।
এলাকার মসজিদের ইমাম মহম্মদ বসিরউদ্দিন বলেন, “কোনও বাড়িতে রান্না হয়নি। সোমবার কুরবানি ইদ ছিল। কোনও বাড়িতে কুরবানি হয়নি। যুবক, মহিলা সকলে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন। জখম যাত্রীদের কোলে নিয়ে মেডিক্যালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন গ্রামবাসীরা। পরে উদ্ধারকারী দল পৌঁছয়।” 
গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ আজিবুল, মহম্মদ রাহুলেরা বলেন, ‘‘মানুষের আর্তনাদ শুনে, দেহাংশ রেললাইনে পড়ে থাকতে দেখে কেঁদে ফেলেছিলাম। চুপ করে বসে থাকতে পারিনি।’’

মানবতার ডাকে সাড়া দিয়েছেন এই এলাকার মুসলমান সমাজ। তবুও শুভেন্দু অধিকারী সুকান্ত মজুমদারের কন্ঠে এদের বিরুদ্ধে  বিদ্বেষ ছড়ানো হবে। একবারের জন্য কি শুভেন্দু অধিকারী কিংবা সুকান্ত মজুমদার বলবেন গত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে যে প্রচার আমরা করেছি মুসলমানদের বিরুদ্ধে তা ঠিক নয়। 
মুহাম্মদ আজিবুল, মোঃ মোমিন মোহাম্মদ শফিকুল মুহাম্মদ রাহুলরা মানবতার যে বার্তা গতকাল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর দিয়েছেন তাতে আর যাই হোক বিদ্বেষের রাজনীতির কারবারিরা অন্ধকারে মুখ ঢাকতে বাধ্য হবে।
 

 

Leave a comment