Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন

বহড়ুতে সাংসদ ঘনিষ্ঠ নির্দলদের বুথে তৃণমূলের ভোট বাড়লেও বিধায়ক ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের বুথে ভোট কমলো

Bipasha Chakraborty

Published: 25 June, 2024, 08:22 PM
বহড়ুতে সাংসদ ঘনিষ্ঠ নির্দলদের বুথে তৃণমূলের ভোট বাড়লেও বিধায়ক ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের বুথে ভোট কমলো

 

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,জয়নগর : জয়নগর লোকসভা নির্বাচনে জয়নগর বিধানসভার ১২ টি পঞ্চায়েত ও একটি পৌরসভার মধ্যে তৃণমূল একটি পঞ্চায়েত বাদে সবকটিতে এগিয়ে থাকলেও ধর্মীয় মেরুকরণে বহু জায়গাতে এমনকি জয়নগর বিধানসভার বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের নিজের বুথেও পিছিয়ে  গিয়েছে।

গত পঞ্চায়েত ভোটে এই বিধানসভার ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১ টিতে তৃণমূল ক্ষমতা পেলেও একমাত্র বহড়ু ক্ষেত্র গ্রাম পঞ্চায়েত তারা দখল করতে পারিনি।এই পঞ্চায়েতে ২০২৩ সালে ভোটের সময় বোমাবাজি, বুথ দখল সহ একাধিক অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল এমনকি পুন: নির্বাচন  হয়েছিল চারটি বুথে।

এখানে মূলত লড়াই হয়েছিল শাসক দলের বিদায়ী সাংসদ  ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন প্রধান মতিবুর রহমান লস্করের সাথে শাসক তৃণমূল বিধায়ক ঘনিষ্ঠ তৎকালীন উপপ্রধান মজিবর রহমান লস্করের সাথে, সম্পর্কে তাঁরা আবার দুই ভাই। সে সময় পঞ্চায়েতের টিকিট বন্টন বিধায়কের হাতে থাকার ফলে সাংসদ ঘনিষ্ঠরা টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে ভোট নেবে জয়লাভ করে এই বহড়ুতে।

প্রধান হন নির্দলের মতিবুর রহমান লস্কর এবং উপপ্রধান হন বিজেপির সংগীতা মন্ডল এবং তৃণমূল বিরোধী আসনে বসে।বিরোধী দলনেতা হন ইন্দ্র মন্ডল। আর এই লোকসভা ভোটের আগে বিদায়ী সাংসদ ঘনিষ্ঠ নির্দলের প্রধান মতিবুর রহমান লস্কর তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা মন্ডলের হয়ে প্রচারে নামেন। এবারে আসা যাক এই ভোটে বহড়ু ক্ষেত্র পঞ্চায়েতের বুথ ভিত্তিক ফলাফল বিন্যাস।

উল্লেখ্য, এই পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৬ টি, যার মধ্যে তৃণমূল ও নির্দল সাতটি করে এবং বিজেপি পায় দুটি আসন।এবারের লোকসভা নির্বাচনে এই পঞ্চায়েতে ৮১ নম্বর বুথে তৃণমূল ৪৬৮ বিজেপি ৮, ৮২ নম্বর বুথে তৃণমূল ৭১৩ বিজেপি ১৩, ৮৩ নম্বর বুথে তৃণমূল ৬৬৮ বিজেপি ১৬, ৮৪ নম্বর বুথে তৃণমূল ২৪১ বিজেপি ৪৮০, ৮৫ নম্বর বুথে তৃণমূল ৫৯৫ বিজেপি ১৪, ৮৬ নম্বর বুথে তৃণমূল ৪৮৪ বিজেপি ৭,  ৮৭ নম্বর বুথে তৃণমূল ৩২৬ বিজেপি ২৬০, ৮৮ নম্বর বুথে তৃণমূল ৩৬৫ বিজেপি ২১৫, ৮৯ নম্বর বুথে তৃণমূল ৩৫৬ বিজেপি ৫০৭, ৯০ নম্বর বুথে তৃণমূল ৩৬২ বিজেপি ৫৯০, ৯১ নম্বর বুথে ৭০২ বিজেপি ৮, ৯২ নম্বর বুথে তৃণমূল ৩৬৭ বিজেপি ৩২৪, ৯৩ নম্বর বুথে ৪১৬ বিজেপি ৩৭৬, ৯৪ নম্বর বুথে ১৬৮ বিজেপি ৩৮৯। এই পঞ্চায়েত থেকে তৃণমূল বিজেপির থেকে ৩৭৮৪ টি ভোট বেশি পায়। দেখা যাচ্ছে নির্দলের হাতে থাকা ৮১, ৮২, ৮৩, ৮৫, ৮৬,৯১ ও  ৯৩ নম্বর বুথগুলিতে তৃণমূল ব্যাপকহারে লিড পায় অথচ তৃণমূলের হাতে থাকা ৮৯ ও ৯০ নম্বর বুথে তৃণমূল পিছিয়ে থাকে বিজেপির থেকে। আবার ৮৭,৮৮ ও ৯২ নম্বর বুথে খুব কম ভোটে তৃণমূল বিজেপির থেকে বেশি পায়। এবং বিজেপির নিজের হাতে থাকা ৮৪ নম্বর ও ৯৪ নম্বর বুথে বিজেপি নিজেদের দখলে রাখতে সমর্থ্য হোন। ৮৯ নম্বর বুথে বহড়ু অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি কৌশিক দাসের স্ত্রী সুকন্যা দাসের বুথে ১৫১ ভোটে পিছিয়ে পড়ে তৃনমূল, আবার বিরোধী দলনেতা ইন্দ্র মন্ডল এর ৮৭ নম্বর বুথে মাত্র ৬৬ ভোটে তৃণমূল এগিয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে বহড়ু ক্ষেত্র পঞ্চায়েতের বিরোধী দলের নেতা তৃণমূল কংগ্রেসের ইন্দ্র মন্ডল বলেন, নির্দলের প্রধান বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বুথ গুলোতে বিজেপির হয়ে প্রচার করে। আমাদের বুথ গুলোতে তৃণমূলের ভোট কমিয়ে বিজেপির ভোটকে বাড়াতে সাহায্য করে সে। বহড়ু অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি কৌশিক দাস বলেন, ধর্মীয় মেরুকরণে সারা রাজ্যের মতন বহড়ুতেও  পড়েছে। আর সেই কারণে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বুথগুলিতে তৃণমূল ভালো ফল করলেও হিন্দু বুথ গুলোতে তৃণমূল পিছিয়ে পড়ে কিছুটা বিজেপির কাছে।  

আমাদের হিন্দু প্রধান এবং বাকি বুথ গুলোতে ভোট  মার্জিন কিছুটা কমে গেছে তবে এ বিষয়ে আমাদের বুথ ভিত্তিক আলোচনা চলছে তাই এ ব্যাপারে আমরা এখনো মতামত দিতে পারবো না দলীয় নিয়ম মেনে।

বহড়ু ক্ষেত্র গ্রাম পঞ্চায়েতের সাংসদ পন্থী প্রধান  মতিবুর রহমান লস্কর বলেন, আমরা নির্দল হলেও তৃণমূল করি।গত পঞ্চায়েত ভোটে  বিধায়কের হাতে টিকিট থাকায় আমরা সাংসদ ঘনিষ্ঠ বলে টিকিট পাইনি তাই আমরা নির্দল হিসেবে পঞ্চায়েতে লড়াই করে বিধায়ক পন্থী তৃণমূলকে বিরোধী রেখে বোর্ড গঠন করি।এরা এই ভোটের প্রচারে তেমন ভাবে কোন কাজ করেনি।

ভোটের প্রচারে জয়নগর বিধানসভার বিভিন্ন অঞ্চলে বিধায়ক ও সাংসদ একসাথে প্রচারে বের হলেও বহড়ুতে সেভাবে দুজনকে একসাথে প্রচারে অংশ নিতে দেখা যায়নি। আর তার থেকেই আবার বহড়ুতে বিধায়ক ও সাংসদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে না তো সেই প্রশ্নই ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে।

Leave a comment