পুবের কলম প্রতিবেদক: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উপাচার্য নিগ্রহ হয়েছে, তাতে প্রকাশিত ভিডিয়ো ও অডিয়োতে জিম নওয়াজ নামক এক ব্যক্তিকে ‘নেপথ্য পরিচালক’ হিসেবে অনেকে চিহ্নিত করেছেন। জিম নওয়াজ অবশ্য বলেছেন, এই ভিডিয়ো বা অডিয়োগুলি পুরনো। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, পুরনো হোক বা নতুন, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নাক গলানোর অধিকার তাঁকে কে দিয়েছে, কী করে তিনি ছাত্রদেরকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ভাঙচুর অশান্তি দেওয়ার প্ররোচনা দেন? কী করে তিনি বলেন, পুলিশ তাঁর নিয়ন্ত্রণে বা পুলিশকে বলে দেওয়া হয়েছে শীর্ষ পর্যায় থেকে পুলিশকে বলে দেওয়া হয়েছে পুলিশ কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। অবাধে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের ভেতরে মারমুখী ছাত্র বা প্রাক্তন ছাত্ররা যা খুশি করতে পারে। এই শীর্ষ পর্যায়ে কারা রয়েছেন? তাঁদের পরিচয় কী?
জিম নওয়াজ এ প্রসঙ্গে কয়েকজনের নাম করেছেন। তাঁরা হচ্ছেন, এমপি নাদিমুল হক, মন্ত্রী গোলাম রব্বানি, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম প্রমুখ। এমনিতেও জিম নওয়াজ সবসময় এদের নাম উল্লেখ করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, সরকার ও প্রশাসনে তাঁর প্রভূত ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু উল্লেখিত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন মন্ত্রী গোলাম রব্বানি ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, জিম নওয়াজ তৃণমূলের কেউ নয়। তাঁরা জিম নওয়াজকে কোনওভাবেই আলিয়া সম্পর্কে কোনও নির্দেশ দেননি।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে: মমতা
রাজ্যে নতুন করে সাম্প্রদায়িক অশান্তি বাঁধানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে বিরোধীদের আগুন নিয়ে না খেলার জন্য সতর্কও করে দিয়েছেন। সিপিএম-বিজেপি এবং কংগ্রেসকে একই বন্ধনীতে ফেলে ‘পোকা, ধোঁকা ও বোকা’ বলে কটাক্ষের বাণ-ও হেনেছেন। পাশাপাশি আলিয়াকাণ্ড নিয়ে প্রথমবার মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বভারতী-কাণ্ডে কেন সেখানকার উপচার্যকে গ্রেফতার করা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি বলেন, ‘আলিয়াতে পুলিশ যা পদক্ষেপ করার তা করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, আলিয়াতে যারা পড়াশোনা করে তারা সকলেই ভালো। কিন্তু সেখানেও ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ থাকতে পারে। যে কটু কথা বলেছে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমাদের এখানে পুলিশ অ্যাকশন নেয়। কিন্তু বিশ্বভারতীতে যা করছেন ভদ্রলোক, আমি ভদ্রলোকই বলব কারণ আমার মুখ দিয়ে যেন খারাপ কথা না বেরোয়। সেখানে কি কোনও অ্যাকশন হয়েছে?
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিগ্রহের ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত গিয়াসউদ্দিন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন ছাত্র। উপাচার্যকে নিগ্রহের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর রবিবার গিয়াসউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ দিন রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়কে রমযানের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ছাত্রনেতার নামে এরা কলঙ্কঃ ফিরহাদ হাকিম
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনা ন্যক্কারজনক। সম্প্রতি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, তা একজন ছাত্রনেতার কলঙ্ক। বিগত নির্বাচনের সময় জিম নওয়াজ আমার সঙ্গে বেশ কিছু সংখ্যালঘু বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। সম্প্রতি আনিস খানের বিষয় নিয়েও উনি কিছু সাজেশন আমাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার অর্থ কখনোই এটা হতে পারে না যে আমি এই ধরনের কোনও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাবার ইনস্ট্রাকশন দিয়েছিলাম। যেকোনও অন্যায়ের প্রতিরোধে পুলিশ তার নির্দিষ্ট আইন মেনে রুল বুক মেনে পদক্ষেপ নেবে। পুলিশ কারোর ইনস্ট্রাকশনে চলবে না।
পুলিশের কাজকে প্রভাবিত করা যাবে না, বলে এ দিন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাণ্ড নিয়ে জিম নওয়াজের বিষয়ে কড়া অবস্থান স্পষ্ট করলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, জিম নাওয়াজ তৃণমূলের কেউ নন।
পাশাপাশি তিনি এ দিন দুঃখ প্রকাশ করে ফিরহাদ জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের আপ লিফটমেন্টের কথা মাথায় রেখে তার এই স্বপ্নের আলিয়া ইউনিভার্সিটি তৈরি করেছেন। সম্প্রতি রাজ্যে একের পর এক বেশ কয়েকটি অবাঞ্চিত ঘটনা যেভাবে ঘটে গিয়েছে, তাতে আমি একজন সংখ্যালঘু প্রতিনিধি হিসাবে আমার মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।
সমাজে মাস্টারমশাইদের সম্মান সবার উপরে। তাই মাস্টারমশাইদের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে আমরা শিখিনি। মাস্টারমশাইদের সব সময় পায়ের দিকে তাকিয়ে তাদের সম্মান জানিয়ে কথা বলতে হয়। তাই মাস্টারমশাইদের অসম্মান করলে তা কখনোই বরদাস্ত করা হবে না সাফ জানালেন ফিরহাদ।
ফিরহাদ দাবি করেন, ‘এই ধরনের কোনও ঘটনার নির্দেশ তিনি দেননি। তিনি বলেন, আলিয়ায় যা হয়েছে তা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। এই ঘটনায় একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে আমার মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।’
অডিয়ো-ভিডিয়োতে মন্ত্রী গোলাম রব্বানির নাম আসা ফিরহাদ বলেন, যেকোনও লোকের নাম অডিয়োতে বলা হতে পারে। মিডিয়ার একটা ঘটনা হচ্ছে যখনই কোনও একটা ঘটনা ঘটে, তখনই আমরা মাইনরিটি মানুষরা খারাপ। সবাই চোর-গুন্ডা এটা সমাজে পাবলিসিটি করে দেওয়া হয়। আর এটা চলতে থাকে।
জিম নওয়াজ কে? তার সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই নেই: গোলাম রব্বানি
মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন, আমি একজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে কেন ষড়যন্ত্র করব? আমার নাম কোনও অডিয়োতে কেউ বললে আমার কি কিছু করার আছে? এর পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন, অডিয়োতে আমার কণ্ঠস্বর কি শোনা যাচ্ছে? যদি সেটা হত, তবে বুঝতাম কোথাও কিছু একটা ভুল হচ্ছে।’
গোলাম রব্বানি পুবের কলম পত্রিকাকে আরও বলেন, আমি জিম নওয়াজকে দেখেছি কি না মনে পড়ছে না। প্রতিদিন আমার সঙ্গে বহু মানুষ দেখা করেন। তাদের সবাইকে মনে রাখা সম্ভব নয়। আমার জিজ্ঞাসা, ওই জিম নওয়াজ আলিয়ার কে? আমি কেন তার সঙ্গে আলিয়া নিয়ে আলোচনা করব? আমার লক্ষ্য আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে চালানো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানকে আরও উন্নত করা।