দেবশ্রী মজুমদার, বোলপুর: বোলপুরের রজতপুরে এক পরিবারের তিনজন খুনের ঘটনার নেপথ্যে পরকীয়া। তার জেরে ঘটনাস্থলে মা ও সন্তান এবং বেসরকারি নার্সিংহোমে মারা যান গৃহকর্তা। ভাতৃবধূর পরকীয়া দেখে ফেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় বেঘোরে প্রাণ দিতে হলো একই পরিবারের তিনজনকে।
সোমবার শীর্ষ আদালতে আর জি কর মামলার শুনানি
পড়া বোঝানোর নামে নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ, শ্রীঘরে রেলকর্মী
'নৈতিকতাই স্বাধীনতার ভিত্তি' কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে জামাআতে ইসলামী হিন্দের প্রোগ্রাম
দাহ্য পদার্থ ছুঁড়ে আগুন লাগিয়ে এক পরিবারের ৩ সদস্যকে হত্যা করার ঘটনায় দুই সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পরকীয়ার জেরেই এই পরিকল্পিত খুন। এই ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত ছিল। এই ঘটনার পর থেকেই মৃতর পরিবারের সাথে প্রথম থেকেই যোগাযোগ রেখে চলেন বীরভূম জেলা সভাধিপতি ফায়েজুল ওরফে কাজল সেখ। না হলে হয়তো বগটুইয়ের মতো আরেকটি ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। কাজল সেখের শ্বশুর বাড়ি রজতপুরেই।
শুধু তাই নয় তার শ্বশুর বাড়ি মৃতদের বাড়ির পাশেই। কাজল সেখ জানান, পরকীয়ার জেরেই এই তিন খুন। প্রসঙ্গত ঘটনাস্থলে মা ও শিশু অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। গৃহকর্তা আব্দুল আলিম বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে চাঁদাইপুরে একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত শনিবার ভোররাতে মারা যান। তাকে নিয়ে একই পরিবারের মোট তিনজন খুন হয়।
জানা গেছে, আব্দুল আলিম ওরফে তোতা ভাই এবং তার স্ত্রী রূপা বিবি জানতেন, তাদের পরিবারের ভাইয়ের স্ত্রী স্মৃতি বিবির সাথে সম্পর্ক ছিল গ্রামের হাতুরে ডাক্তার চন্দন ওরফে সফিকুল ইসলামের।
এই দুজনের ঘনিষ্ঠ মহূর্তের দৃশ্য দেখে ফেলেছিল ভাশুর। তার প্রতিহিংসায় অভিযুক্ত দুজনে এই নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রতিবেশীদের দাবি। শনিবার সকালে শেখ আব্দুল আলীম মৃত্যুর খবর গ্রামে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের দাবি, মৃত আব্দুল আলিমের ভাই রতন শেখের স্ত্রী স্মৃতি বিবির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিল পাশের গ্রামের এক হাতুড়ে ডাক্তার চন্দন ওরফে শেখ সফিকুল ইসলামের। আর এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারে চলত বিবাদ। হাতুরে ডাক্তারের বাড়ি সুপুর বানপাড়া এলাকায়। বিষয়টি জানাজানি হতেই আক্রোশ বাড়ে মৃত আব্দুল আলিমের পরিবারের উপর। এরপরই ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা।
ইতিমধ্যেই বোলপুর থানার পুলিশ হাতুড়ি ডাক্তার সফিকুল ইসলাম ও মৃত আব্দুল আলিমের ভাই রতন সেখের স্ত্রী স্মৃতি বিবিকে আটক করে। গ্রামবাসীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই ডাক্তার সফিকুল ও স্মৃতি বিবি সম্পর্কে লিপ্ত ছিল। তাদের পরিবার জেনে ফেলায় পুরো পরিবারকে আগুন লাগিয়ে খুন করা হয়েছে। দুজনের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীরা। ইতিমধ্যেই গ্রামের শোকের ছায়া। মৃত আব্দুল আলিমের দেহ ময়না তদন্তের পর গ্রামে নিয়ে আসা হবে বলেই জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ফিস্টের পর খাওয়া দাওয়া করে একতলা ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন শেখ আব্দুল আলীম (৪৫), স্ত্রী রূপা বিবি (৩৭) সহ শিশুপুত্র ছোট ছেলে আয়ান শেখ (৪)। খোলা ছিল ঘরের জানালা। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অভিযুক্তরা এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। জেলাপুলিশ সুপার রাজনারায়ন মুখোপাধ্যায় জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে।
ঘটনাস্থলে মোতায়েন আছে পুলিশ। বোলপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এবং জেলা পুলিশ সুপার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। শনিবার জেলা পুলিশ সুপার এবং বোলপুর মহকুমা শাসক রজতপুর যান এবং পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দেন। পাশাপাশি, এদিন বিকেল পাঁচটায় মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা এবং সাংসদ অসিত মাল পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিতে যান।