Sun, September 8, 2024

ই-পেপার দেখুন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ যাত্রার  সাক্ষ্মী স্মৃতিচারণে কুশাঙ্কুরের গৌরবময় অনুষ্ঠান "ফিরে দেখা"

Bipasha Chakraborty

Published: 25 July, 2024, 06:51 PM
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ যাত্রার  সাক্ষ্মী স্মৃতিচারণে কুশাঙ্কুরের গৌরবময় অনুষ্ঠান "ফিরে দেখা"

 

দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন:  গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্তিম যাত্রার সেই অশ্রুভেজা দিনটিকে 'যেন এই তো সেদিন' এমনই ঘটনাক্রমে স্মৃতিচারণ করলেন সেদিনের বারো বছর বয়সের বালক আজকের প্রবীণ আশ্রমিক দীপেশ রায় চৌধুরী। 

বিশ্বভারতী কো-অপারেটিভ সভাঘরে বৃহস্পতিবার একচল্লিশের পঁচিশে জুলাই গুরুদেবের সেই অন্তিম যাত্রার স্মৃতিচারণায় "ফিরে দেখা" অনুষ্ঠান হলো। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক অমৃতসূদন ভট্টাচার্য, আশ্রমিক দীপেশ রায় চৌধুরী,  সুব্রত সেন মজুমদার, শ্যমল চন্দ্রের মতো প্রবীণ আশ্রমিকেরা।  কবির অমর সৃষ্টির শান্তিনিকেতন ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন ছিল ২৫ শে জুলাই, শুক্রবার। দিনটি আর পাঁচটা দিনের থেকে কেমনরূপ ছিল  স্মৃতিচারণায় তার একটা ছবিতে ফিরে দেখা অনুষ্ঠানে কথা, কবিতা গানে নাচে নাটকে অনন‍্য ছিল।

স্মৃতির সরণী বেয়ে দীপেশ রায় চৌধুরী বলে চললেন, "চব্বিশে জুলাই আমার  বাবা সুধাকান্ত রায় চৌধুরী মাকে বলছিলেন, মনটা খারাপ। কাল গুরুদেবকে কোলকাতায় নিয়ে যেতে হবে। কোলকাতায় গুরুদেবের প্রসটেট অপারেশন হবে। "

শুনে সেদিনের বারো বছরের বালক দীপেশ রায় চ‍ৌধুরী বাবার কাছে আব্দার করেন, "আমিও যাব"। শান্তিনিকেতনের সেই অন্তিম দৃশ‍্য নিজ ধারাভাষ‍্যে হুবহু যেন চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সেই দিনটি সকলের সামনে তুলে ধরলেন। 

দীপেশ রায় চৌধুরী বলে চললেন, "বাবা আমাকে আশ্রমের একটি বড়ো জায়গাই দাঁড় করিয়ে দোতলায় যেতে বললেন। ততক্ষণে উদয়ণ বাড়ির সামনে জমায়েত করেছেন শান্তিনিকেতন বাসী, ছাত্র ছাত্রী, কর্মী ও অধ‍্যাপকেরা। কিছুক্ষণ পর উদয়ন বাড়ির দোতলা থেকে স্ট্রেচারের মতো চেয়ারে করে উদয়ন বাড়ির সামনের বারান্দায় আনা হলো।

যতদূর মনে পড়ছে, সেখানে আচার্য নন্দলাল বসু, তাঁর ছেলে বিশ্বরূপ বসু, কর্মসচিব আর্কিটেক্ট সুরেন করের মতো বড়ো মাপের মানুষ ঘোরাঘুরি করছেন। আমি সুরেন করের ছেলে সুমিত করকে কাছে ডেকে নিলাম। তখন শান্তিনিকেতনে একমাত্র বাস - নীল রঙের বাস। চালক নীলমণি গায়েন। তিনি বাসটাকে উদয়ন বাড়ির সামনে আনলেন। বাসটার পিছনটা কাটা হয়েছিল। যাতে করে সহজেই গুরুদেবকে স্ট্রেচার সহ সহজেই বাসের ভিতরে নিয়ে যাওয়া যায়।

রবি ঠাকুরের পরনে ছিল কালো জোব্বা, কালো টুপি। হাত দুটো ঢোকানো। গাড়ি ছাড়লো উত্তরায়ণ। বামদিকে ছাতিম তলার পাশ দিয়ে ছাড়িয়ে ডানদিকে বিজ্ঞান সদন হয়ে আরেকটু এগিয়ে গৌরপ্রাঙ্গন - চৈতি হয়ে রাস্তা ঘুরে পূব দিক দিয়ে কিছুটা গিয়ে ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তায় এবড়োখেবড়ো পথে চললো। আশ্রমবাসী সহ আমরা সবাই চলেছি পিছন পিছন। শুধু দেখার বাসনা যে বাসের ভিতরে অসুস্থ গুরুদেবের জন‍্য কেমন ব‍্যবস্থা করা হয়েছে।

দেখলাম সামনে বায়োকেমিক কনটেইনার রাখা আছে। রামপুরহাট থেকে স্টিম ইঞ্জিন এলো। তাকে কবির সেলুনের সঙ্গে জুরে দেওয়া হলো। গাড়ির চালক ছিলেন নীরদ বরণ সরকার  এবং  এন সি বোস। চোখের জলে সবাই কবিকে শেষ বিদায় দিলেন। সবার আশঙ্কা মনে হয়তো গুরুদেব আর আশ্রমে ফিরবেন না।  আস্তে আস্তে ধোঁয়া ছেড়ে গাড়ি ষ্টেশন ছাড়লো-- দূরে মিলিয়ে গেল। অনেক বয়স্ক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে শান্তিনিকেতনে ফিরলেন। আমরাও তাদের মতো ভারাক্রান্ত। বন্ধু সুমিতকে বললাম, গুরুদেবকে দেখলাম। আর তো দেখতে পাব না।

Leave a comment