বিশেষ প্রতিবেদন: বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন নাহিদ ইসলাম। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর শপথ নেওয়া অন্তর্র্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা তিনি। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন নাহিদ। মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে তাকে নিয়ে #WeAreNahid হ্যাশট্যাগে ছেয়ে গেছে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ, মো. আবু বাকের মজুমদার, আবদুল কাদের, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবদুল হান্নান মাসউদ, নাট্য নির্মাতা, জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিকেয়টসহ অনেকে এটি ব্যবহার করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। জানা গেছে, নাহিদ ইসলামকে নিয়ে কে বা কারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সেই অপপ্রচার রুখে দিতে তার পাশে দাঁড়াতেই সবাই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছেন। কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাফি লিখেছেন, ডিবি অফিসে পেছন সাইড লাল নাহিদ ভাইয়েরই হয়েছিল। ডিবি হারুনের বানানো স্ক্রিপ্ট প্যান্ট পরেও পড়তে পারেনি সে। লুঙ্গি পরে পেপার হাঁটুর ওপরে রেখে বানানো স্ক্রিপ্ট পড়েছিল নাহিদ ইসলাম।
এক ফেসবুক পোস্টে আকরাম হোসাইন রাজ ‘উই আর নাহিদ’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লিখেছেন, ‘সরাসরি সম্মুখে উচ্চস্বরে ‘সব শালারা বাটপার’ বলার স্বাধীনতা আনার জন্যই নাহিদরা বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের নাহিদ ইসলাম ভাই।’ জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহও ‘উই আর নাহিদ’ হ্যাশট্যাগে পোস্ট দিয়েছেন।
ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক আধুল হান্নান মাসউদ লিখেছেন, ‘আজকে দেখছি নীতিহীন একটা মানুষ টকশোতে গিয়ে গলাবাজি করে গেলেন। উনি বা ওনাদের বিষয়ে আমি মাসুদ কথা বলা শুরু করলে ল্যাংটা হয়ে যাবেন। বিপ্লব কেমনে হয়েছে আমি আবদুল হান্নান মাসউদ, আবদুল কাদের, রিফাত রশিদ আর মাহিন সরকারের চেয়ে ভালো কেউ ব্যাখ্যা করতে পারবে না।’ তিনি আরও লিখেন, ‘নাহিদ ভাই, আসিফ ভাইকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করবেন? এই নাহিদ ভাই, আসিফ ভাইয়ের ১৬, ১৭ জুলাই থেকে শুরু করে ২৫ তারিখ আটক হওয়ার আগে পর্যন্ত ঐতিহাসিক ভূমিকাই পরবর্তীতে বিপ্লবে আমাদের পথনির্দেশনা দিয়েছে। আটকাবস্থা থেকে বেরিয়ে যে নেতৃত্ব ওনারা দিয়েছেন, তার ফলাফলস্বরূপ আজকে আপনাদের এ সব গলাবাজি। আমরা কথা বলা শুরু করলে তখন মুখ চেপে ধরতে আইসেন না। পরিষদের ইতিহাসও জানানো হবে।’
আন্দোলনের সময় নির্যাতনের স্বীকার হওয়া নাহিদের ছবি পোস্ট করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের অবস্থা এমনই ছিল। যারা হাসিনার পুনর্বাসন প্রকল্পকে সমর্থন করে তারা দেশকে সেই একই পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে আনবে, যেমন- রক্তপাত, জোরপূর্বক গুম, হত্যা এবং আরও অনেক কিছু। হাসিনা শাসনের পুনর্বাসনকে সমর্থন করলে শেষ পর্যন্ত একই বিধ্বংসী পরিণতি ঘটবে। ফ্যাসিস্ট বিরোধী বাংলাদেশ নাহিদ। আমরা নাহিদ। জুলাই ১৩৬, ২০২৪।’
সম্প্রতি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) মহাপরিচালক পদের নিয়োগপত্রে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সুপারিশসহ সই করা ছবি ভাইরাল হয়েছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বিষয়টি অসত্য এবং আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চলমান হল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিয়ো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে নাহিদ ইসলামকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ভিডিয়োতে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সচিবালয়ের সামনে ছিলেন উপদেষ্টা নাহিদ। শিক্ষার্থীরা জানান, এই স্লোগান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই দিয়ে আসছিলেন। মূলত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে এই স্লোগান দেওয়া হয়েছে। নাহিদ ইসলামকে উদ্দেশ্য করে নয়। তারা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চান তাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হোক। এ জন্যই ‘আর্মি হবে ঠিকাদার’ বলা হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের উপস্থিতিতে সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) তাকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করার অভিযোগ ওঠে। তবে জুলাই বিপ্লবে নাহিদের অবদানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তার ওপর অমানবিক নির্যাতনের দু’টি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করে একটি পোস্ট দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত।