পুবের কলম প্রতিবেদক সম্প্রতি বিএসএফ বা সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এক্তিয়ার বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তাতে বলা হয়েছে– পশ্চিমবঙ্গ– অসম ও পঞ্জাবে সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটারের বদলে ৫০ কিলোমিটার অভ্যন্তর পর্যন্ত বিএসএফ প্রবেশ করতে পারবে এবং প্রয়োজনে তারা তল্লাশি ও গ্রেফতার করতে পারবে। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং বিধানসভায় বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বাড়ানোর বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস হয়েছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনগুলিও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। রবিবার কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস্ সভাঘরে একটি আলোচনা সভা হয়। এই সভার আয়োজন করেছিল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া বা এসডিপিআই। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন সমাজের বিদ? ব্যক্তিরা। তাঁরা সকলেই বিএসএফ-এর ক্ষমতা বৃদ্ধির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন এবং জনমানসে বড় আন্দোলন ও সচেতনতা বাড়ানোর উপর আলোকপাত করেন।
এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন এসডিপিআইয়ের রাজ্য সভাপতি তায়েদুল ইসলাম– সাবেক সাংসদ ও পুবের কলম-এর সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান– সিকিম হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মলয় সেনগুপ্ত– অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ইনতাজ আলি শাহ– প্রাক্তন আমলা স্বপন কুমার বিশ্বাস– মানবাধিকার সংগঠন মাসুম-এর কিরীটি রায়– বন্দিমুক্তি কমিটির ছোটন দাস– সমাজকর্মী র*পা চক্রবর্তী খান– আনিসুর রহমান– সাহাবুদ্দিন– অসিত রায় প্রমুখ।
এদিন আহমদ হাসান ইমরান বলেন– বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে– না হলে সীমানা অঞ্চলে মানুষের উপর অত্যাচার বাড়বে। তিনি আরও বলেন– আমার জানা মতে বিএসএফ নিয়ে পঞ্জাব সরকার সুপ্রিমকোর্টে গিয়েছে– পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি মামলা না করে তবে নাগরিক সমাজকেই তা করতে হবে। কেননা– বিএসএফ সীমান্ত এলাকার মানুষের জীবনের সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন– সীমান্ত এলাকার মানুষকে ছেলেমেয়ের বিয়ের জন্যেও পারমিশন নিতে হয়। এলাকার উন্নয়ন ও শিক্ষার পরিবেশকেও নষ্ট করছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। সংশ্লিষ্ট এলাকার মেয়েরা বড় হলো পড়াশোনা ছাড়িয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। বিএসএফ মেয়েদের ওড়না ধরে টানে– বাজে ব্যবহার করে। সেই কথা জানাজানি হলে মেয়েদের বিয়ে হবে না–তাই সবাই ভয়ে থাকেন।
দেশজুড়ে বিদ্বে¡ ও বিভাজনের যে রাজনীতি চলছে তা নিয়েও সরব হন আহমদ হাসান ইমরান। সম্প্রতি হরিদ্বারে যে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে এবং ক্রিসমাসে খ্রিস্টানদের গির্জাতে লাগাতার আক্রমণ চালানো হচ্ছে এর নিন্দা করেন ইমরান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আওরঙ্গজেব ও তেগবাহাদুর নিয়ে বিভাজনমূলক মন্তব্য করেন তা উল্লেখ করে আহমদ হাসান ইমরান বলেন– আওরঙ্গজেব কোনও শিখকে হত্যা করেন নি বা দাঙ্গা করে মানুষ মারেননি। কিন্তু ১৯৮৪ সালে হাজার হাজার শিখকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিন তায়েদুল ইসলাম বলেন– বিএসএফ-এর সীমানা বৃদ্ধির ফলে নাগরিক জীবনে বির*প প্রভাব পড়বে। আগে সীমান্ত এলাকার ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত মেয়েদের উপর অত্যাচার চালানো হতো– এবার তা আরও বাড়বে। তাঁর দাবি– বিগত দিনে বিএসএফ-এর হাতে খুন ও অন্যান্যনির্যাতনের সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার। সেনা আদালত নয়– এইসব মামলা প্রকাশ্য আদালতে শুনানি ও বিচার হওয়া দরকার বলেও মতামত ব্যক্ত করেন তিনি। অভিযোগ– সুতি-১ ব্লকে বিএসএফ নতুন করে জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করছে– তার নিন্দাও জানান তায়েদুল ইসলাম।
অন্যদিকে কিরীটি রায় বলেন– বিএসএফ-এর কাজ সীমানার মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া কিন্তু তারা তা করে না। নেপাল-ভুটানের মতো ভারত-বাংলাদেশ সীমানা কেন মানবিক হবে না? প্রশ্নও তোলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ– সীমান্ত এলাকায় বছরের পর বছর ধরে ১৪৪ ধারা জারি করে মানুষের স্বাভাবিক জীবনে বাধা প্রদান করা হচ্ছে– যা সংবিধান ও মানবতা বিরোধী। ছোটন দাসও বিএসএফ-এর কাজ ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন– ১৯৬৮ সালে ইন্দো-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকার মানু¡দের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই বিএসএফ তৈরি করা হয়েছিল। বিএসএফ সেই কাজ করছে না– অত্যাচার করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এরজন্য জনসচেতনতা ও আন্দোলন করা দরকার বলে মতামত ব্যক্ত করেন র*পা খান– অসিত রায়– বাসুদেব বসু– ইনতাজ আলি শাহ– আনিসুর রহমান প্রমুখ