সেখ কুতুবউদ্দিনঃ রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত এবং আদালতে মামলার কারণে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে থমকে যায় স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশানুসারে তৈরি হয় সার্চ কমিটি। নিয়োগের জন্য রাজ্যের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন জমা পড়ে ২ হাজার ৫০০ জনের। তবে এই সংখ্যার মধ্যে এক এক জন অধ্যাপক একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন করেছেন।
১৮ অক্টোবর ইন্টারভিউ শুরু। এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৫ জনের সার্চ কমিটি রয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান ইউ ইউ ললিত। রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে গঠিত সার্চ কমিটি ইন্টারভিউ নেবে।
বহু অধ্যাপক স্থায়ী উপাচার্যের জন্য আবেদন করলেও এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইন্টারভিউয়ের তালিকায় রয়েছেন ১০ থেকে ২০ জন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে ১০ জনকে শর্টলিস্ট করা হয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েব জন্য ৩ জনকে তালিকাভুক্ত করবে সার্চ কমিটি। এই কমিটি সুপ্রিম কোর্টের কাছে তিনজনের নাম পাঠাবে। দেশের শীর্ষ আদালতের অনুমতিক্রমে সেই তালিকা রাজ্য সরকারের কাছে আসবে। অথবা শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিলে সার্চ কমিটি তিনজনের নামের প্যানেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সুপারিশ করবে। এর মধ্যে একটি নাম বাচাই করে রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে পাঠাবেন। রাজ্যপাল তার ভিত্তিতে নিয়োগপত্র দেবেন। কোনও নামের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী ও আচার্যের মধ্যে মতপার্থক্য হলে, তাঁরা তা সুপ্রিম কোর্টকে জানাবেন। রাজ্য সরকার তিন জনের মধ্যে একজনকে নির্ধারণ করে রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে পাঠাবে। তার পরই নিয়োগ করা হবে তাঁকে।
কলকাতার এক হটেলে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া চলবে। ১ দিনে তিনটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভিউ হবে। সকাল ৯টা, বেলা ২টো, সন্ধ্যে ৬টায় তিন পর্যায়ে ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। ইন্টারভিয়ের প্রথম প্রক্রিয়া শেষ হবে ২৮ অক্টোবর। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হবে ৬, ৭, ৮ অক্টোবর। কোনও কারণে এই তিন দিনের মধ্যে একদিন স্থগিত হলে ১০ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করা হবে। জানা গিয়েছে, স্থায়ী উপাচার্যের জন্য ২৫০০ আবেদন করলেও সেই সংখ্যাটা ৪৫০ জনের মত। কারণ এক একজন ১ থেকে ২২টি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছেন।
বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, উপাচার্য পদে আবেদনকারীর মধ্যে অনেক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকও রয়েছেন। কলকাতা, যাদবপুর, বর্ধমান, বিদ্যাসাগর, উত্তরবঙ্গ, রবীন্দ্রভারতী, আলিয়া এবং প্রেসিডেন্সির মতো প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বাধিক আবেদন জমা পড়েছে। তুলনায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কম আবেদন জমা পড়েছে।
উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে যে পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি, অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানি।
এই আবহে রাজ্যপাল তথা আচার্যের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। সেই মামলার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্তের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের তরফে বহুবার রাজ্যপাল তথা আচার্যের নজরে এনেছিল রাজ্য। এদিকে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার স্বার্থে তাঁরা কোনও অনিয়ম বরদাস্ত করবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা। এই হুঁশিয়ারির পরেও যখন পরিস্থিতির বদল হয়নি, তখন উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কমিটি গড়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের নেতৃত্বাধীন এই কমিটিই এখন রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি দেখছে। এই কমিটিই উচ্চশিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রাণী ও মৎস্য সম্পদ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের অধীনে ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য বাছাই করবে সার্চ কমিটি।