ইনামুল হক, বসিরহাটঃ ফের সাফল্যের নয়া পালক বিশেষভাবে সক্ষম ক্রীড়াবিদ সাকিনার মুকুটে। এ বছর ১৯ মার্চ জাতীয় প্যারা ন্যাশনাল অনুষ্ঠিত হয় সল্টলেকের সাইতে। সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভারোত্তোলক হিসেবে জাতীয় স্তরে গোল্ড মেডেল পান বসিরহাটের সাকিনা খাতুন। ২০১৪ সালে কমনওয়েলথ গেমসে পাওয়ারলিফটিং-এ ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে প্রথম মহিলা প্রতিবন্ধী ভারোত্তোলক হিসেবে দেশের নাম উজ্জ্বল করেন সাকিনা।
বসিরহাট মহকুমার বসিরহাট ২ ব্লকের কোড়াপাড়া গ্রামে কৃষক পরিবারের মেয়ে সাকিনা। মাত্র দেড় বছর বয়সে তিন দিনের জ্বরে পোলিও আক্রান্ত হন তিনি। দিনমজুর বাবা-মা চেষ্টা করেও তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে পারেননি। কোমর থেকে পা পর্যন্ত বিকলাঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। সাকিনারা ১ ভাই, ৩ বোন। পিতা সিরাজুল গাজি ও মা নুরজাহান বিবি অন্যের জমিতে কাজ করেন। দিনমজুর খেটে মেয়ের এই ক্রীড়া অনুশীলনে উপযুক্ত পুষ্টি জোগান দিতে পারেননি। কিন্তু তাতেও থেমে যাননি ৩২ বছর বয়সি সাকিনা।
ক্রীড়াক্ষেত্রে সাকিনার জীবন শুরু হয়েছিল সাঁতারু হিসেবে। জেলা ও রাজ্যস্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য এলেও প্রশিক্ষণকালে তার আগ্রহ জন্মায় ভারোত্তোলনে। প্রশিক্ষকের পরামর্শ মতো সাকিনা নতুন করে এগোতে শুরু করেন ভিন্ন পথে। ২০১৪ সালে কমনওয়েলথ গেমসে পদক জয়ের ফলে বিশেষভাবে সক্ষম মেয়ে হিসেবে ভারোত্তোলনে দেশের নাম উজ্জ্বল করেন সাকিনা। এরপর ২০১৮ সালে এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন তিনি।
২০২১ সালে করোনাকালেও লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। জাপানের টোকিওতে প্যারালিম্পিকেও পঞ্চম স্থান দখল করেন তিনি। চলতি বছরের জুনে কোরিয়াতে অনুষ্ঠিত হতে চলা এশিয়ান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন তিনি। এ বিষয়ে সাকিনা জানান, ২০২৪ সালে প্যারিসের প্যারালিম্পিকে অংশগ্রহণ করা মূল লক্ষ্য। গত দু’বছর করোনা মহামারির জন্য ঠিকমতো অনুশীলন করতে পারেননি। এবার কঠিন অনুশীলনে নিজেকে ডুবিয়ে বাংলা ও দেশের নাম আরও উজ্জ্বল করবেন এমনটাই জানালেন সাকিনা। এ বিষয়ে তিনি জানান, অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে এগিয়ে যাবেন। পোলিও আক্রান্ত পা নিয়েও যে লড়াই করা যায় সেই দৃষ্টান্ত পরবর্তী প্রজন্মের সামনে স্থাপন করাই লক্ষ্য বসিরহাটের সাকিনার।