নিজস্ব প্রতিনিধি: উসকানিতে পা না দিয়ে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রেখে দেউচা-পাচামিতে এশিয়ার বৃহত্তম কয়লা প্রকল্পের জন্য জমি দিতে এগিয়ে এল দেড় হাজার পরিবার। আর নিজের দেওয়া কথা রেখে বুধবার জমিদাতাদের হাতে জমির পাট্টা, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও নিয়োগপত্র তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে আশ্বাস দিয়েছেন, দেউচা-পাচামিতে সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে রাজ্য সরকার। স্কুল, রাস্তা সব তৈরি করে দেওয়া হবে। দেউচা পাচামি প্রকল্পে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এদিন জমিদাতাদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকদের মতো তাঁদের অভাব-অভিযোগও মন দিয়ে শুনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পাঁচ রাজ্যের সঙ্গে লড়াই করে বীরভূমের মহম্মদবাজারে দেউচা-পাচামি কয়লা খনির অধিকার ছিনিয়ে এনেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু গত মাসখানেক ধরেই এশিয়ার বৃহত্তম কয়লা প্রকল্প চালুর বিরোধিতায় সরব হয়েছেন স্বঘোষিত পরিবেশবিদরা। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আদিবাসী পরিবারদের প্রশাসনের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছে গেরুয়া শিবিরও। ফলে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে এলাকায়।
সেই ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আরও বেশি মানবিক হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবারই মন্ত্রিসভার বৈঠকে জমিদাতাদের ক্ষতিপূর্ণ এক লহমায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়। সেই সঙ্গে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করার জন্য ৫ হাজার ১০০ নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের এমন মানবিকতায় মুগ্ধ দেউচা-পাচামির আদিবাসী পরিবারদের সিংহভাগই।
বুধবার নবান্নে হাজির হয়েছিলেন জমিদাতাদের একাংশ। তাঁদের মধ্যে মহম্মদ ইলিয়াস, ফিলিপ কিসকু, সোনালি হাঁসদা, মায়া সালুই, সুন্দরী টুডু সহ ছয়জনের হাতে জমির পাট্টা, চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে তিনি জানান, ‘দেউচা-পাচামি প্রকল্প চালুর জন্য রাজ্য সরকার ১০ হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসন প্যাকেজ নেওয়া হয়েছে। আমরা জমির বদলে জমি দিচ্ছি। তাও জমির দাম দ্বিগুণ দেওয়া হচ্ছে। জমিদাতাদের পরিবারের একজন সদস্যকে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিও দেওয়া হচ্ছে। তার জন্য ৫,১২৫টি শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও পদ সৃষ্টি করা হবে। যার যেমন যোগ্যতা, তিনি সেই অনুযায়ী চাকরি পাবেন। আমরা মোট ১০ হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসন প্যাকেজ তৈরি করেছি। তাছাড়া স্কুল, রাস্তা সব রাজ্য সরকার তৈরি করে দেবে।’
দেউচা-পাচামিতে ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে জানিয়ে মমতা বলেন, ‘এক লক্ষের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে। স্থানীয়দেরই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাঁদের আগে নিয়োগ করা হবে। আমি চাই আদিবাসীরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। কারও উপরে যেন মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকেন। এখনও পর্যন্ত এক হাজার ৬০০ জন জমি দিতে সম্মত হয়েছেন। তাঁদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। ২০৩ পরিবারকে জমির বদলে জমি দেওয়া হচ্ছে।’
এদিন ফের একবার দেউচা-পাচামিতে কয়লা প্রকল্প নিয়ে শুরু হওয়া অশান্তির জন্য খাদান মালিকদের একাংশকে নিশানা করেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তাঁর কথায়, ‘কিছু খাদান মালিক নিজেদের স্বার্থে লড়াই বাঁধিয়ে দিচ্ছেন। নিজেরা সরকারের কাছ থেকে যাবতীয় সুবিধা আদায় করছেন। কিন্তু আদিবাসীদের সেই সুবিধা দিচ্ছেন না।’
পাশাপাশি এদিন নবান্নে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন বোর্ডের বৈঠক বসেছিল। ওই বৈঠকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গড়া ওঠা বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘জঙ্গলমহলে ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ৬০০ একর জমি বন্টন হয়েছে। আরও জমি দেওয়ার জন্য আবেদন এসেছে। সেখানেও স্থানীয়দের চাকরি হবে। তাছাড়া বানতলায় জুতো শিল্প গড়ে উঠছে। সেখানেও পাঁচ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে।’