নয়াদিল্লি: বিজেপি আমলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং মুসলিম ঐতিহ্য বিজড়িত রাস্তা ও স্থানের নাম পরিবর্তনের ধারা চালু হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথ মুঘলসরাইকে করেছেন দীন দয়াল উপাধ্যায়, ইলাহাবাদকে করেছেন প্রয়াগরাজ। মুসলিম স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলাই যেন তাদের মূল উদ্দেশ্য। তাই বেছে বেছে মুসলিম নামগুলোতেই কোপ পড়ে। এবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন হল দিল্লির সরাই কালে খান চকের নাম। এর নতুন নাম হয়েছে বীরসা মুণ্ডা চক। যুগের পর যুগ ধরে ‘নাম’ কোনও অঞ্চলের পরিচিতি বহন করে। এমনকি সেই অঞ্চলের সংস্কৃতিকে ধারণ করে। কিন্তু ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের নাম বদল করা হয়েছে।
কে ছিলেন সুফি সাধক কালে খান?
কালে খান একজন সুফি সাধক ছিলেন। তাঁর নামানুসারে দিল্লিতে অবস্থিত এলাকাটির নাম হয় সরাই কালে খান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন সরাই কালে খান চকের নাম পরিবর্তন করে বিরসা মুন্ডা চক করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার শুক্রবার দিল্লির সরাই কালে খান আইএসবিটি চকের নাম পরিবর্তন করে বিরসা মুন্ডা চক করেছে। বিরসা মুণ্ডার ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার এই ঘোষণা দিয়েছেন। বীরসা জনজাতি সম্প্রদায়ের এক সংগ্রামী নায়ক। ‘উলুগোলান’ বা বিদ্রোহ করেছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। তাকে সম্মান জানানোর জন্য বিজেপি সরকার অন্য কোনও জায়গা বেছে নিতে পারত। কিন্তু সরাই কালে খান চককে টার্গেট করার উদ্দেশ্যের পিছনে রয়েছে মুসলিম বিদ্বেষ।
এটি দক্ষিণ পূর্ব দিল্লি জেলার অধীনে সরাই কালে খানের আশেপাশের এলাকাগুলি হল নিজামউদ্দিন, জংপুরা, খিজরাবাদ, জংপুরা এক্সটেনশন এবং লাজপত নগর। সরাই সেই জায়গাকে বলা হতো যেখানে মানুষ বিশ্রাম করতেন। দূর দূরান্ত থেকে আসা লোকজন দিল্লিতে এলে তারা এখানে কিছু সময় বিশ্রাম করত এবং তারপর তাদের যাত্রা শুরু করত। এমতাবস্থায় কালে খান নামটি সরাইয়ের সঙ্গে যোগ হয়ে জায়গাটির নাম হয় সরাই কালে খান। কালে খান ছিলেন ১৪ শতকের একজন সুফি সাধক। ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দর এলাকায় তাঁর সমাধিও রয়েছে। কথিত আছে যে সুফি সাধক কালে খান অন্যান্য সুফিদের সঙ্গে প্রায়ই এই সরাইখানায় থাকতেন। এই কারণে এই এলাকার নাম সরাই কালে খান হয়। লোদি শাসনামলে একটি কালে খান গম্বুজও নির্মিত হয়েছিল। এই গম্বুজটি দক্ষিণ দিল্লির কোটলা মুবারকপুর কমপ্লেক্সে রয়েছে এবং এর উপরে ১৪৮১ সালের তারিখ লেখা আছে।
অন্যদিকে আদিবাসী নেতা বিরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সরাই কালে খান চকের নতুন নামকরণ করেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। বিরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশ জুড়ে ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ পালিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘আজ থেকে সরাই কালে খান চকের নতুন নাম বিরসা মুন্ডা চক। তাঁর মূর্তি, তাঁর নামাঙ্কিত এই চক শুধু দিল্লিবাসীই নয়, বিরসা মুন্ডার জীবনের মূল্যবোধ এবং সংগ্রাম এখানে আসা প্রতিটি মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’’ যদিও বিজেপির এই খেয়ালখুশি মতো নাম বদল আদতে ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির অবমাননা বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদরা।