পুবের কলম প্রতিবেদকঃ গঙ্গার ভাঙন দেখতে নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছিলেন বহু মানুষ। খবর পেয়ে পৌঁছেছিলেন সিভিক ভলেন্টিয়ার ওয়াসিকুল ইসলামও। ডুবন্ত প্রতিবেশিকে বাঁচাতে বাজি রেখেছিলেন নিজের প্রাণ। অন্যের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ওয়াসিকুল ইসলাম তলিয়ে গেলেন গঙ্গায়। সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের তারানগরে। লালগোলা থানার ডিআইবিতে কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ার ওয়াসিকুল ইসলামের (৩৫) বাড়ি রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে। ঘটনার পর গোটা গ্রামে নেমেছে শোকের ছায়া।
কথায় বলে, ‘নদীর ধারে বাস, ভাবনা বারো মাস।’ কয়েকদিন ধরেই মুর্শিদাবাদের তারানগর গ্রামে ভয়াবহ আকার ধারণ করে গঙ্গার ভাঙন। ভাঙনের মাঝেই দুর্গাপুজোর বির্সজনের বাদ্যি বেজে উঠে। আর সেই ভাঙনের মাঝে বিসর্জন দেখতে যাওয়া সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে সোমবার তলিয়ে গেলেন ওয়াসিকুল ইসলাম।
কয়েকদিন ধরেই তারানগর গ্রামে ভয়াবহ আকার নেয় গঙ্গার ভাঙন। সোমবার সন্ধ্যেয় নতুন করে ভাঙন দেখা দেয় এলাকায়। সেইসময় স্থানীয় কিছু যুবক নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলে একদিকে ভাঙন ও অন্যদিকে বিসর্জনের ছবি তুলছিলেন। খবর পেয়ে বিপদের আশঙ্কা বুঝে ডিআইবির কর্মী ওয়াসিকুল এলাকায় গিয়ে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনকে সেখান থেকে সরানোর কাজ শুরু করেন। এই কাজ তিনি করতে গিয়েছিলেন আপন দায়িত্ববোধ থেকে। সেদিন তাঁর ডিউটি ছিল না। কিন্তু নদীর পাড়ে ভীড় করা উৎসুক মানুষদের দেখে তাঁর মনে আশঙ্কা জন্মায়। মনে হয় বড়সর কোনও বিপদ হতে পারে। গঙ্গা গর্ভ তলিয়ে যেতে পারে মানুষগুলো। ফলে সকলকে নদীর পাড় থেকে সরানোর মরিয়া চেষ্টা চালান তিনি। অনেককে সরাতে সফলও হন। তারই মাঝে নদী গিলে খায় পাড়। প্রবল স্রোতে পড়েন অনেকে। তৈরি ছিলেন ওয়াসিকুল ইসলামও। যেন আল্লাহ তাঁকে মদদগার হিসাবে পাঠিয়েছেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, এদিন ওয়াসিকুল গ্রামবাসীদের সরাচ্ছিলেন। আচমকা নদীপাড়ের একটি বড় অংশ ধসে যায়। তখনই আচমকা নদী ভাঙনে গঙ্গায় তলিয়ে যান চার জন। সঙ্গে সঙ্গে জলে ঝাঁপ দেন ওয়াসিকুল। সাঁতার কেটে কয়েকজনকে পাড়ে উঠতে সাহায্য করেন। কিন্তু এর পর নিজেই সেই কাল স্রোতের টানে তলিয়ে যান। বহু চেষ্টা করেও তাঁর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে লালগোলার তৃণমূল বিধায়ক মুহাম্মদ আলি বলেন, ‘আচমকা তলিয়ে যান চারজন। জলে পড়ে যায় তারা। তাদের উদ্ধারের কাজ চলছে।’ অন্যদিকে, লালগোলা ব্লক তৃণমূল সভাপতি মুহাম্মদ মোতাহার হোসেন রিপন বলেন, ‘খবর পেয়েই লালগোলা থানার পুলিশ এবং বিএসএফের আধিকারিকরা দ্রুত এলাকায় এসে তল্লাশি চালান। কিন্তু ওয়াসিকুলের খোঁজ মেলেনি। ইতিমধ্যেই নিখোঁজ সিভিক ভলান্টিয়ারের সন্ধানে বাংলাদেশের বিজিবির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন বিএসএফ আধিকারিকরা।’ এই ঘটনায় শোকের ছায়া গোটা লালগোলা থানা এলাকায়। বাড়ির ছেলের লাশও এখনও চোখে দেখেননি পরিবারের কেউ। কারও কারও মনে ক্ষীন আশা যদি আল্লাহর রহমত হয়। কিন্তু অনেকগুলো দিন যে পার হয়ে গেল, ফলে আশার আলো ক্রমশ নিভতে বসেছে। দরিয়াতেই ওয়াসিকুলের দাফন হয়েছে ধরে নিচ্ছেন রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের অনেকেই।