পুবের কলম প্রতিবেদকঃ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। কেন্দ্র আলাপনকে ডেপুটেশনে তলব করলেও ছাড়তে রাজি হয়নি রাজ্য সরকার। এভাবে আইপিএস– আইএএস– আইএফএস অফিসারদের তলব নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন, ‘আইএএস (ক্যাডার) রুলস ১৯৫৪-তে সংশোধনী এনে যুক্তরাষ্ট্র পরিকাঠামোকে যেন ধ্বংস করা না হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই সংশোধনীর প্রস্তাব প্রত্যাহার করার আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এই প্রস্তাব ‘পারস্পরিক সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী’যা রাজ্যের প্রশাসন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। প্রস্তাবিত সংশোধনিতে বিভিন্ন রাজ্যের আইএএস অফিসারদের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশন আইনে পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সমস্ত রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল এই বিষয়ে তাদের মতামত জানানোর জন্য।
২৫ জানুয়ারির মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এই চিঠির মাধ্যমে রাজ্য সরকারের মতামতই স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আইএএস ও আইপিএস অফিসারদের পোস্টিং নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রয়েছে– আইন সংশোধন প্রক্রিয়া কার্যকর হলে তা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার ক্যাডার রুলে পরিবর্তন করার যে প্রস্তাব করছে তা নিয়ে আমি আমার তীব্র অনিচ্ছা প্রকাশ করছি যেখানে সেন্ট্রাল ডেপুটেশন রিজার্ভের অধীনে একতরফাভাবে রাজ্য সরকার কার্যত বাধ্য থাকবে যোগ্য আমলাদের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনের জন্য প্রস্তুত রাখতে।
প্রস্তাবিত সংশোধনী শুধুমাত্র সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী নয়– এটি আইএএস– আইপিএসদের পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যে সরল ব্যবস্থা রয়েছে যা দীর্ঘকাল ধরে প্রমাণিতও– তাকে বিপর্যস্ত করবে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর বলে আইএএস, আইপিএস অফিসারদের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনের জন্য ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় প্রস্তুত রাখা শুধুমাত্র রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করবে তাই নয়, কেন্দ্রের ডেপুটেশনে যেকোনও সময় তলব হতে পারে এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা সেন্ট্রাল ডেপুটেশন রিজার্ভের অফিসারদের নিয়োগ করে একটি রাজ্যের প্রশাসনের মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা করা অসম্ভব হয়ে উঠবে।
উল্লেখ্য– বর্তমান গাইডলাইন অনুযায়ী– কেন্দ্র প্রতিবছর রাজ্যগুলিকে অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস (আইএএস– আইপিএস– আইএফএস) ক্যাডারের অফিসারদের একটি ‘অফার তালিকা’ চায় যারা কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে যেতে ইচ্ছুক– তারপর সেই তালিকা থেকে অফিসার নির্বাচন করা হয়।
আসলে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলতে চেয়েছেন– অফার তালিকায় থাকা অফিসারদের নিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। কারণ– এই অফিসারদের যে কোনও সময় দিল্লি তলব করতে পারে। ঠিক যেমনটা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে হয়েছিল।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আইএএস অফিসারদের ডেপুটেশনে পাঠানোর একতরফা ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতেই থাকছে। এখানেই আপত্তি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর দাবি– আইএএস– আইপিএস ও আইএফএস অফিসারদের পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য দু’সরকারেরই ভূমিকা রয়েছে। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন– আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা– উন্নয়ন– জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির ক্ষেত্রে এই অফিসাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেকথা ভেবেই বরং রাজ্যের অধিকার আরও বাড়ানো উচিত।
আমলাদের কেউ কেউ বলছেন– রাজ্যের সম্মতি ছাড়া কোনও আমলা কেন্দ্রের ডেপুটেশনে যোগ দিতে পারেন না। যদিও অনেকই আবার বলছেন– কেন্দ্র ডেপুটেশনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বজায় রাখলে সার্ভিস রুলের ৬(১) ধারা অনুযায়ী রাজ্যের কিছুই করার নেই। রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত সর্বভারতীয় ক্যাডার অফিসারদের নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ হলে শেষপর্যন্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই মানতে হয় রাজ্যকে।
বিশেষজ্ঞ মহলের মত– রাজ্যের অমতে অফিসারদের টেনে নেওয়া হলে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবে। কারণ– এই অফিসাররা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকেন। আর প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মমতা লিখেছেন– ‘আপনি নিজেও অনেক বছর একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাই আমার বক্তব্যের সত্যতা বুঝতে পারবেন।’