নিজস্ব প্রতিনিধি: কথায় বলে, ‘কানু বিনে গীত নাই’। তেমনই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ভারতীয় রাজনীতি সম্পূর্ণ নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ বিজেপির তাবড় নেতাদের কার্যত ঘোল খাইয়ে গত বিধানসভা ভোটে তৃতীয়বারের জন্য বাংলায় তৃণমূলকে ক্ষমতার কুর্সিতে বসিয়েছিলেন তিনি। বুক চিতিয়ে বাঘিনীর মতোই লড়াই করেছেন। তাঁর সেই লড়াইকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন গোটা দেশ। জাতীয় রাজনীতিতে তিনি কতটা প্রাসঙ্গিক ফের তা প্রমাণ হল এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত দেশের ১০০ ক্ষমতাশালীর তালিকায়। ওই তালিকার প্রথম একাদশেই রয়েছে তৃণমূল নেত্রীর নাম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত, শিল্পপতি মুকেশ আম্বানিদের মতো দেশের অতি ক্ষমতাশালীদের সঙ্গে সমানতালে টক্কর দিয়েছেন তিনি।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তালিকা অনুযায়ী, ‘দেশে বর্তমান বছরে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি তালিকার এক নম্বরে। দ্বিতীয়স্থানে রয়েছেন তাঁরই বিশ্বস্ত সহচর তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিন নম্বরে মোহন ভাগবত, চারে বিজেপির সর্বভারতীয সভাপতি জেপি নাড্ডা। পাঁচ ও ছয় নম্বরে যথাক্রমে মুকেশ আম্বানি ও যোগী আদিত্যনাথ। সাত নম্বরে শিল্পপতি গৌতম আদানি। আট নম্বরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। নয় নম্বরে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও দশ নম্বরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এগারো নম্বরে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ দেশের ক্ষমতাশালীদের প্রথম একাদশ তৃণমূল সুপ্রিমো ছাড়া সম্পূর্ণ নয়।’
সবচেয়ে বিস্ময়ের হল, দেশের ক্ষমতাশালীদের প্রথম একাদশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া শুধুমাত্র ঠাঁই হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি, প্রিয়াঙ্কা গান্ধিদের নাম প্রথম ২৫ জনে নেই। ক্ষমতার নিরিখে সোনিয়ার স্থান ২৭ তম। দু’দুবার লোকসভা ভোটে মোদির বিকল্প হয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে মুখ থুবড়ে পড়া রাহুল গান্ধি রয়েছে ৫১ নম্বরে। আর প্রিয়াঙ্কা গান্ধি! কংগ্রেসিদের শেষ ভরসাস্থলের ঠাঁই হয়েছে ৭৫ নম্বরে। যেখানে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর ঠাঁই হয়েছে ৭৩ নম্বরে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা নিশ্চিত, দু বছর বাদে লোকসভা ভোটে কার্যত মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখ হয়ে উঠবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কেননা, দেশজুড়ে মোদি বিরোধী আমজনতার কাছে এই দুজনের গ্রহণযোগ্যতাই রয়েছে। দুজনেই ভীষণ কমনম্যান। কিন্তু মমতার প্লাস পয়েন্ট হল, কেজরিওয়াল যেখানে আবেগের বশবর্তী হয়ে রাজনীতি করেন, সেখানে তৃণমূল নেত্রীর রাজনীতির পিছনে রয়েছে ক্ষুরধার বুদ্ধি। তাছাড়া গোটা দেশের বিরোধী নেতাদের কাছে কেজরিওয়ালের চেয়ে মমতার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। সে তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন হোন কিংবা তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও।
গত বছর বাংলার বিধানসভা ভোটে যেভাবে বিজেপির তাবড় নেতারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, ভোটে টাকার বন্যা আছড়ে পড়েছিল, সংবাদমাধ্যমগুলি নিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিয়ে তৃণমূলকে হারানোর ষড়যন্ত্রে সামিল হয়েছিল, তার মোকাবিলা করা চাট্টিখানি কথা ছিল না বলেই মনে করেন দুঁদে রাজনৈতিক পণ্ডিতরা। কিন্তু মাথাঠাণ্ডা রেখে যেভাবে সব প্রতিকূলতার মোকাবিলা করেছেন মমতা, তা অবশ্যই ইতিহাসে খোদাই হয়ে থাকবে।