সংখ্যালঘু ও সুবিধাবঞ্চিত পড়ুয়াদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে দেড় দশক পার করেছে। আলিয়ার নয়া উপাচার্য হলেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসিতে অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিকসে তিনি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। মালয়শিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপনায় নিযুক্ত ছিলেন। নয়া স্থায়ী উপাচার্য় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের সাক্ষাৎকার নিলেন পুবের কলম-এর প্রতিবেদক সেখ কুতুবউদ্দিন
প্রশ্নঃ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে চলেছেন আপনি। এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে কী কী ভাবনা রয়েছে আপনার?
ড. রফিকুল ইসলামঃ আলিয়াকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। কোন কোন কাজ আটকে রয়েছে, সেগুলি দেখে তা পূরণ করার চেষ্টা হবে। বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে মউ স্বাক্ষরিত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে আলিয়াকে। কেমব্রিজ, আল-আজহার, মালয়েশিয়া-সহ দেশ-বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে আলিয়া। আইটি সেক্টরে ভালো কাজ করে আলিয়া। ডিজিটালের উপর জোর দেওয়া হবে। একদিন আলিয়া ‘রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন হাব’-এ পরিণত হবে। ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’ হয়ে উঠবে আলিয়া। সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে আলিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
প্রশ্নঃ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্প্রতি বার বার অভিযোগ উঠেছে। এই জন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিষয় নিয়ে কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?
ড. রফিকুল ইসলামঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সিস্টেম কাজ করলে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্ভব। তাই প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় ডিনদের নিয়ে আলোচনা হবে। সমস্যাগুলি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। সব সময় অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তা বের করা হবে।
প্রশ্নঃ আপনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামি প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষণা করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আলিয়ার গবেষকদের কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন?
ড. রফিকুল ইসলামঃ আমি নিজে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণার কাজ করেছি। বাইরের দেশে প্রচুর রিসার্চ ফান্ড পাওয়া যায়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের গবেষক-অধ্যাপকদের জন্য ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করব। ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট-গবেষকদের সহযোগিতা করব।
প্রশ্নঃ ছাত্রছাত্রীদের দাবিদাওয়া রয়েছে অনেক, সেগুলি কীভাবে দেখবেন?
ড. রফিকুল ইসলামঃ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বসব। তাদের কাছে অভাব-অভিযোগ জানব। তবে একসঙ্গে সব সমস্যা সমাধান করা যায় না। একে একে সেই সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করব। ছাত্রছাত্রীদের দাবিদাওয়া এবং ভাবনা থাকতে পারে। তাদের ভাবনাকেও গুরুত্ব দিলে সমস্যা কমানো সম্ভব। লিখিতভাবে জানালে সেই বিষয়গুলি নজর দেওয়া হবে। তবে ছাত্রছাত্রীদের পঠন-পাঠনের সুবিধার জন্য যা করতে হয় করা হবে।
প্রশ্নঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিকবার বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। ক্লাস বন্ধ, শিক্ষকদের ঘেরাও করা হয়েছে। ফের বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, এ নিয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন আপনি?
ড. রফিকুল ইসলামঃ বিক্ষোভ করা মানে কিছু বলার আছে। পড়ুয়াদের দাবি থাকতে পারে। সেই দাবি নিরসনের কিছু পদ্ধতি রয়েছে। উপাচার্য বা বিভাগীয় প্রধানদের কাছে ডেপুটেশনের মাধ্যমে সেই সমস্যা সহানুভূতির সঙ্গে নিরসন করা যেতে পারে।
প্রশ্নঃ পরিকাঠামো উন্নয়নে কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?
ড. রফিকুল ইসলামঃ পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে দু’টি দিক রয়েছে। তৈরি হওয়া বিল্ডিং, ল্যাব, লাইব্রেরির ঘাটতি থাকতে পারে। সেগুলি দেখে সংস্কার করতে হবে। নির্ধারিত বাজেটের উপর ভিত্তি করে হস্টেল, ল্যাব, ক্লাসরুমের ঘাটতিগুলি পূরণ করা হবে।
প্রশ্নঃ তালতলা ক্যাম্পাস নিয়ে নিয়ে কী বলবেন?
ড. রফিকুল ইসলামঃ তালতলা ক্যাম্পাসের ঐতিহ্য রয়েছে। তা রক্ষা করা হবে। পাশাপাশি তালতলা-পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে থিওলজি বিষয়ে পঠন-পাঠন হয়। সেই থিওলজি বিষয়ের সঙ্গে অন্যান্য সাবজেক্টগুলির সমস্যা দেখা হবে। কোনও বিভাগে অবহেলা থাকলে দেখে নিরসনের চেষ্টা করা হবে।
প্রশ্নঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পঠন-পাঠনের মানোন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য হাজিরাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কী উদ্যোগ রয়েছে?
ড. রফিকুল ইসলামঃ পড়ুয়াদের হাজিরার বিষয়টির উপর জোর দেওয়া জরুরি। ফেস টু ফেস ক্লাসের গুরুত্ব সব সময় বেশি। অনলাইন-অফলাইন ক্লাসের মাধ্যমে হাজিরায় জোর দেওয়া হবে। তবে শিক্ষকদেরও পঠন-পাঠনের বিষয়ে আরও উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারেও আলোচনা হবে। অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করলেই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়াদের জন্য আর কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
ড. রফিকুল ইসলামঃ শুধু পড়াশোনাই নয়, খেলাধুলারও গুরুত্ব রয়েছে। ডিবেট কম্পিটিশনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। ইন্টারন্যাশনাল ডিবেটগুলিতে যাতে পড়ুয়ারা অংশগ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা হবে। খেলাধুলার পরিকাঠামোকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রশ্নঃ আলিয়া ন্যাকে ‘বি প্লাস’ গ্রেড পেয়েছে। এ নিয়ে কী বলবেন?
ড. রফিকুল ইসলামঃ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাক গ্রেড পেল প্রথমবার। আরও কী ঘাটতি রয়েছে, ন্যাকের রিপোর্ট পড়ে সেগুলি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া আলিয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্যকে বজায় রাখতে হবে।
প্রশ্নঃ নিয়মমাফিক পরীক্ষা ও ফলাফল বের করা নিয়ে কী ভাবছেন?
ড. রফিকুল ইসলামঃ নিয়মমাফিক পরীক্ষা নেওয়া ও ফলাফল বের করা খুবই জরুরি। গুরুত্ব দিয়ে এই বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া হবে। সময়ে ফলাফল বের না হলে ছাত্রছাত্রীদের আগামীতে এগিয়ে যেতে অসুবিধা হয়। চাকরি ও বিদেশে গবেষণা ও অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। তাই এই বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
(সাক্ষাৎকারটি ‘পুবের কলম’ সংবাদপত্রের মুদ্রিত সংখ্যা থেকে নেওয়া)