পুবের কলম প্রতিবেদক: ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। অভিযোগ, উপত্যকায় খুন হওয়া হাজার হাজার যুবকের জীবন-যন্ত্রণার কথা উঠে আসেনি এই ছবিতে। কাশ্মীরিরাও ছবিটি নিয়ে আগ্রহী নন। তাদের বক্তব্য, ছবিতে উপত্যকার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়নি। উপত্যকার দীর্ঘদিনের সমস্যা ও প্রকৃত ইস্যুগুলিকে তুলে ধরা হয়নি। এই বিতর্কের মাঝেই এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবিটি দেখার পর প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ৯০ দশকের শুরুতে যে ধরনের হিংসার ঘটনা উপত্যকায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সঙ্গে ঘটেছিল, যেভাবে তাঁদের ভিটেমাটি ছাড়া হতে হয়েছিল সেইসব কথা প্রকাশ্যে আসুক অনেকেই চাননি। বহুদিন ধরে সত্যকে বারবার চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।’ ছবিটির বিশেষ প্রদর্শনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছবিটি ভাল সকলের দেখা উচিত।’
মঙ্গলবার ছিল বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক। সেখানেও তিনি সবাইকে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখার জন্য বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘এটি খুব ভাল একটি ছবি’। এই ধরনের কাজ আরও হওয়া প্রয়োজন।’ এদিকে, ‘কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমাটি নিয়ে রাজনীতির ঢেউ বয়ে গিয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি কর মুক্ত করে দিয়েছে। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘কাশ্মীরের সত্য, যা ছবিতে দেখানো হয়েছে, তা অনেকে অনেকদিন ধরে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে গিয়েছেন। এখনও যাঁরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন, তাঁরাই আবার এই ছবি প্রদর্শনের বিরোধিতা করছে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দেশভাগ থেকে শুরু করে জরুরি অবস্থার কথাও টেনে আনেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বক্তব্য কোনও ছবি নিয়ে নয়। দিনের পর দিন যেভাবে সত্যকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে আমি তার বিরোধিতা করছি।’ যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গেরুয়া দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে। ছবিতে উল্লেখ নেই সেখানে কীভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ‘গৃহবন্দি’ করা হয়েছিল। কীভাবে হাজার হাজার কাশ্মীরিকে দেশের বিভিন্ন কারগারে পুরে দেওয়া হয়েছে।
বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি গত ১১ মার্চ মুক্তি পেয়েছে। ছবিতে দেখানো হয়েছে, নব্বই দশকের শুরুর দিকে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ অনেক বেড়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি রীতিমতো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।হিংসার ভয়ে ভিটেমাটি ছাড়তে শুরু করেছেন শ’য়ে শ’য়ে কাশ্মীরি পণ্ডিত। রাতারাতি ঘরবাড়ি ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শরণার্থী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন।ছবিটিতে অভিনয় করেছেন, মিঠুন চক্রবর্তী, অনুপম খের, পল্লবী যোশী, দর্শন কুমার, ভাষা সুম্বালি, চিন্ময় মন্ডলেকর প্রমুখ। ইতিমধ্যেই ছবিটির প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বলিউডের গেরুয়া ঘনিষ্ঠ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। কঙ্গনা রানাওয়াত থেকে শুরু করে ইয়ামি গৌতম, অক্ষয় কুমার, পরেশ রওয়াল প্রমুখ এই ছবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
কাশ্মীর ফাইলস নিয়ে যতই গেরুয়া শিবির উন্মাদনা দেখাক না কেন, এমন অনেক কাশ্মীরি পণ্ডিত রয়েছেন যাঁরা ছবিটি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। সম্প্রতি বলিউড অভিনেতা পরেশ রাওয়াল একটি টু্ইট করেছিলেন। সেখানে পরেশ রাওয়াল লিখেছেন, ‘যদি ভারতীয় হন, তা হলে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি অবশ্যই দেখা উচিত।’ তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে কাশ্মীরি পণ্ডিতরাও। শিবানী ধর সেন নামে এক কাশ্মীরি পণ্ডিত তাঁদের অন্যতম। শিবানির টু্ইটার প্রোফাইল থেকে জানা যায়, তিনি এখন হায়দরাবাদের বাসিন্দা।দক্ষিণ ভারতের সুন্দরীদের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। বিনোদন দুনিয়ার যোগাযোগ রয়েছে। তিনি পরেশের টু্ইটের উত্তরে লিখেছেন, ‘আমি একজন ভারতীয়। একজন কাশ্মীরি পণ্ডিতও। তা সত্ত্বেও আমি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি দেখব না। অনেক হয়েছে। ঘৃণা ছড়ানোর জন্য আমাদের কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ইতিহাসকে ব্যবহার করা বন্ধ করুন।’ শিবানীর এই টু্ইট নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ভাইরাল হয়েছে।