ইনামুল হক, বসিরহাট: ডানার ঝাপটা থেকে রেহাই পেল সুন্দরবন এলাকা।
খানিকটা খুশির হাওয়া সুন্দরবনসহ বসিরহাট মহকুমার জনমানসে। তবে শুক্রবার সকাল থেকে দিনভর লাগাতার বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় হিঙ্গলগঞ্জ সন্দেশখালি সহ ছটি ব্লকের বিভিন্ন নদীর জলস্তর বেড়েছে। আতঙ্ক সঙ্গে নিয়ে নদীপথে যাতায়াত করছে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ। একদিকে হাসপাতাল অন্যদিকে বসিরহাট মহাকুমার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিসে দৈনন্দিন কাজের জন্য তারা আসছেন। মাঝি মাল্লারা জানাচ্ছেন, যাত্রী সংখ্যা কম হলেও নৌকা চলছে।
বৃষ্টির মধ্যেও ফেরি পরিষেবার উপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে সুন্দরবনবাসীকে।
সেই ছবি দেখা গেল হিঙ্গলগঞ্জের লেবুখালির রায়মঙ্গল নদীর ফেরিঘাট অন্যদিকের সন্দেশখালি ধামাখালি, ছোট কলাগাছি নদীর ফেরিঘাট বেতনি নদীর ফেরিঘাট বসিরহাটের ইছামতি নদীর বিভিন্ন ফেরিঘাট গুলোতে। এখানে যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবেই নৌ যাতায়াত করছে। বলা যায় এলাকার নদীগুলি জলে টই টুম্বুর হলেও বিভিন্ন ফেরিঘাট গুলিতে যাত্রী পরিষেবা ছিল স্বাভাবিক।
বৃহস্পতিবারের সতর্ক নির্দেশ পাওয়ার পর কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল নদী সংলগ্ন জনজীবন বাজারঘাট।
বসিরহাট মহকুমা শাসকের দপ্তরে খোলা হয় কন্ট্রোল রুম। সেখান থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেন সরকারি আধিকারিকরা। ব্যবস্থা নেওয়া হয় বিভিন্ন আপৎকালীন পরিষেবা দেওয়ার। ডানার গতি মুখ পরিবর্তন হয়ে রাতেই ওড়িশায় ল্যান্ডফল হওয়ায় ঝড়ের তান্ডবের প্রভাব সেভাবে পড়িনি সুন্দরবনসহ বসিরহাট এলাকায়।
READ:ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে লাগাতার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হাওড়া
তবে শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও নৃত্য প্রয়োজনে মানুষ বেরিয়ে পড়ে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র, বাজার অফিস কাছারিতে।
বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকলেও ফেরিঘাট গুলি স্বাভাবিক হতে থাকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। এক কথায় ডানার কাঙ্ক্ষিত প্রভাব পড়ল না উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। তবে ভোর হতেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি সঙ্গে হালকা ঝোড়ো হাওয়া।
READ:অজিত গোষ্ঠীর এনসিপি যোগ দিলেন জিশান সিদ্দিকি
সুন্দরবনবাসীর বাসস্থানগুলি অক্ষত রয়েছে।
দু একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া গাছপালা বা ঘরবাড়ি ভাঙার ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির উল্লেখযোগ্য তথ্য সামনে আসেনি। নদীর বাঁধ রয়েছে আগের অবস্থায়। তবে বেশকিছু নদীর জলের স্তর বেড়ে গিয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির প্রভাবও বেড়েছে। প্রশাসনের তরফে সুন্দরবনের সমস্ত ফেরিঘাটে ফেরি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সেটা এদিন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে। তবে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কম রয়েছে।
কিছু কিছু নিচু জায়গায় জল জমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
তবে এখনো পর্যন্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে সেচ দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীরা নদী বাঁধগুলির দিকে নজর রেখে চলেছে। বিভিন্ন ফ্ল্যাট শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ও ত্রাণ এবং পানীয় জল ও ওষুধপত্র সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
করছে সব মিলিয়ে ডানার তাণ্ডব থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি পেল সুন্দরবনবাসী।
তবে বৃষ্টির অনবরত চললে চাষের জমি ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হবে। এক ফসলী ধানের জমি জলের তলায় চলে যাওয়ার পাশাপাশি সবজি ফসলের ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে পড়ায় পচন শুরু হবে। নষ্ট হবে বেগুন ,পটল, আসন্ন শীতকালীন সবজি মুলো, কপি কাঁচা লঙ্কা সহ একাধিক সবজি ফসল। সে কারণে দুশ্চিন্তায় কপালে চিন্তার ভাজ চাষীদের। অগ্নি মূল্য হবে কৃষিজ ফসলের দাম। যা সাধারণ মানুষের পক্ষে চরম সমস্যার হয়ে দাঁড়াবে। তবে ডানার ঝোড়ো তাণ্ডব আপাতত রেহাই দেওয়ায় খুশির হাওয়া মহকুমার সাধারণ মানুষের মধ্যে।