‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল উইমেনস নিউজ’ ১৯৩৯ সালে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল বেগম হিজাব ইমতিয়াজ আলী (Begum Hijab Imtiaz Ali)ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম মুসলিম মহিলা হয়েছিলেন যিনি একজন এয়ার পাইলট হিসাবে ‘এ’ লাইসেন্স পেয়েছিলেন(The First Indian Muslim Pilot)। প্রতিবেদনে তাঁর একটি কন্যা সন্তান থাকার উল্লেখ ছিল। উর্দু সাহিত্যের প্রতি যাদের আগ্রহ ছিল, তারা অনেকেই তাঁর এই নাম শুনেছেন।
ব্রিটিশ শাসনকালে বেগম হিজাব ইমতিয়াজ আলী ছিলেন প্রথম ভারতীয় মুসলিম মহিলা পাইলট । স্যালি টাটা, রোদাবেহ টাটা (জেআরডি টাটার বোন) এবং উর্মিলা পেরেকের পর ভারতের প্রথম দিকের মহিলা পাইলটদের একজন ছিলেন হিজাব ইমতিয়াজ। সরলা ঠাকরলকে হয়ত অনেকে বেশি চেনেন। প্রথম ভারতীয় মহিলা পাইলট হিসাবে তাঁর নাম বেশি শোনা যায়। তিনি আরও আগের পাইলট বলে দাবি করা হলেও তাঁর উড়ান লাইসেন্সের , সময়কাল এবং বেগম হিজাবের লাইসেন্সের সময়কাল একই । তারা দুজনেই ১৯৩৬ সালে লাইসেন্স পেয়েছিলেন তবে রোদাবেহ টাটা এবং পারিখ তাঁর অন্তত চার বছর আগে বিমান চালিয়েছিলেন। সরলা এবং বেগম হিজাব দুজনেই লাহোর ফ্লাইং স্কুলে উড়ান শিখেছিলেন, আর আগের তিনজন মহিলা ছিলেন বোম্বে (মুম্বাই) থেকে।
বেগম হিজাব কল্পলেখিকা ও সম্পাদক হিসেবেই বেশি খ্যাতি পেয়েছিলেন । হায়দ্রাবাদের সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিখ্যাত উর্দু লেখক ও সাংবাদিক ইমতিয়াজ আলী তাজের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়।আনারকলি’ তাঁরই লেখা।এই জনপ্রিয় নাটক পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়েছিল। হিজাবের শাশুড়ি মুহাম্মদী বেগম ছিলেন খানিকটা নারীবাদী । তিনি ‘তেহজিব-ই-নিজওয়ান’ নামে উর্দু পত্রিকার প্রথম নারী সম্পাদক ছিলেন ।মমতাজের লেখা ‘হুকুক-ই-নিসওয়ান’ (নারীর অধিকার) পত্রিকা মেয়েদের অধিকার নিয়ে সরব হয়েছিল। বইটি উর্দু পাঠকদের মধ্যে লিঙ্গ সমতার ধারণা ছড়িয়ে দিয়েছিল । ‘তেহজিব-ই-নিসওয়ান’ পত্রিকাতে হিজাবের প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়েছিল। যখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র নয় বছর। শৈশবের তাঁর এই লেখা পাঠকরা অত্যন্ত ভালোভাবে গ্রহণ করেছিল।
‘মেরি না-কাম মহব্বত’ (আমার ব্যর্থ প্রেম), হিজাবের ১২ বছর বয়সে লেখা একটি গল্প।যা প্রায়শই উর্দুতে লেখা সেরা রোমান্টিক গল্পগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। যে পরিবারে হিজাবের বিয়ে হয়েছিল তারাও ছিলেন প্রগতিশীল মুসলিম। বিয়ের পরে এবং মা হওয়ার পরে তাঁরা তাকে পাইলট প্রশিক্ষণ নিতে উৎসাহিত করেছিল । হিজাব ‘তেহজিব-ই-নিজওয়ান’ সম্পাদনা করেছেন। ‘ফুল’-এর মতো অন্যান্য পত্রিকার জন্যও লিখেছেন। ‘পাগল খানা’ (মানসিক আশ্রয়) নামে তিনি একটি ভবিষ্যতমূলক উপন্যাস রচনা করেন । যেখানে তিনি পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে পরিচালিত প্রযুক্তির বিপদ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
যে বিষয়টি অনেককে অবাক করে তা হল, আমাদের ‘পণ্ডিত’রা তাকে ভারতের প্রথম মুসলিম পাইলট হিসাবে প্রায় ভুলে যান।তারা অন্য কারো মাথায় প্রথম হওয়ার মুকুটও পরিয়ে দিয়েছেন। সরলা এবং হিজাব প্রথম লাহোরি মহিলা পাইলটের জন্য একই সময়ে লাইসেন্স নিলেও, হিজাবের নাম সেইভাবে শোনেননি কেউই।