পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাল অসমের প্রধান মুসলিম অধ্যুষিত রাজনৈতিক দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)। বুধবার অসম সরকারে কাছে এই দাবি জানিয়েছেন ধুবুরির লোকসভা সদস্য, এআইইউডিএফ এর সুপ্রিমো বদরুদ্দিন আজমল।
বদরুদ্দিন আজমল বলেন, ‘বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এ সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ দেখানো হয়েছে। আমি এখনও এই ছবিটি দেখেনি। কিন্তু আমি চাই এই ধরনের ছবিকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক। ৪০ বছর আগে কাশ্মীর সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বহু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এমনকী ১৯৮৩ সালে অসম নেলি গণগত্যার সাক্ষী থেকেছে।’
‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ প্রসঙ্গে আজমল বলেন, বিজেপি ও আরএসএস ‘স্পনসর’ হওয়া এই ছবি হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে অশান্তি ও উত্তেজনা তৈরি করতে চাইছে। আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কাছে এই ছবি দ্রুত নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবি রিলিজ হওয়ার পরেই অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এক ট্যুইট বার্তায় লেখেন, এই ছবি দেখার জন্য সরকারি কর্মচারীরা একদিন অর্ধ দিনের ছুটি পাবে। এটা ঘোষণা করেই আমি আনন্দিত। এই কর্মচারীদের শুধুমাত্র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে হবে। পরের দিন তাদের টিকিট জমা দিতে হবে’।
এর পরেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ট্যুইট করে জানান, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপি এবং আইপিএফটি বিধায়ক, অন্যান্য নেতানেত্রীরা এই ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখেছেন। অসাধারণ কাজ করেছেন বিবেক অগ্নিহোত্রীজি ও তার গোটা টিম। ছবিটিতে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশার চিহ্ন তুলে ধরা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে কাশ্মীরে হিন্দু পণ্ডিতদের করুণ অবস্থা কথা তুলে ধরা হয়েছে বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল’ ছবিটিতে। যার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনুপম খের, দর্শন কুমার, মিঠুন চক্রবর্তী, পল্লবী যোশী। গত ১১ মার্চ ছবিটি মুক্তি পায়।মুক্তির পর থেকেই ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল’স ঘিরে শুরু হয় বিতর্ক। অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে বিহারে ছবিটিকে করমুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বিজেপি।
এদিকে এই পরিস্থিতিতে আরজেডি জাতীয় সহ-সভাপতি শিবানন্দ তিওয়ারি রাজ্যে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে ছবিটি দেখার অনুরোধ করেন। কোনও দলের নাম না উচ্চারণ না করেই শিবানন্দ তিওয়ারি বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য একটি রাজনৈতিক দলের নির্দেশেই এই ছবি নির্মিত হয়েছে। এটা সত্যি যে ১৯৯০ সালে কাশ্মীর উপত্যকায় সহিংসতা হয়। জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান চালিয়েছিল। সেই সন্ত্রাসের কারণে হিন্দু পণ্ডিতরা উপত্যকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শেখ আবদুল্লা, রাজ্যপাল ডি জগমোহন। কিন্তু হিন্দু পণ্ডিতদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কি তখনকার জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের ছিল না? আর সেই সময় বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি বিজেপির সমর্থনে সরকার চালাচ্ছিলেন। কাশ্মীরে যা ঘটেছে তা আসলে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা।
তিওয়ারি আরও বলেন, আসলে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল’স এর পরিচালক সেই রাজ্য ও কেন্দ্রের ব্যর্থতা লুকিয়ে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের এই দুর্দশার জন্য মুসলিমদের দায়ী করে দেখিয়েছেন। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের গণহত্যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাতা মিথ্যা তথ্যের ওপরে ভিত্তি করে ছবিটি তৈরি করেছেন।’
তিওয়ারি বলেন, সেইসময় শ্রীনগর বিধানসভায় জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে সরকার বলেছিল যে ১.৫ লক্ষ কাশ্মীরি পণ্ডিতকে উপত্যকা বাধ্য করতে হয়েছিলেন। ২১৯ জন নিহত হয়েছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীরের ৩০ বছরের পুরনো ইতিহাস একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। যা দেশে সাম্প্রদায়িকতাকে তীব্র করে এবং হিন্দুদের মনে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা তৈরি করতে চায়’।
তিওয়ারি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমরা ইতিহাসকে কিভাবে ব্যবহার করছি? আগুন জ্বালানোর জন্য নাকি, শিখা নেভানোর জন্য? এই ছবির মাধ্যমে দেশে আগুন জ্বালিয়ে দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
আরজেডির জাতীয় সহ-সভাপতি শিবানন্দ তিওয়ারি বলেন, “আমি ভয় পাচ্ছি যে আমার বন্ধু নীতীশ কুমার সমাজে আরও আগুন জ্বালানোর জন্য কাঠটি হাতে ধরে রেখেছেন।”
প্রসঙ্গত এর আগে, দারভাঙ্গার বিজেপি বিধায়ক সঞ্জয় সারাওগি মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, কর্নাটক রাজ্যের কথা তুলে ধরে রাজ্যে চলচ্চিত্রকে বিধানসভায় করমুক্ত করার দাবি তোলেন।