Mon, July 1, 2024

ই-পেপার দেখুন

পাঠ্যপুস্তকে মুছে গেল বাবরি মসজিদের নাম, ইতিহাস বিকৃতি ঘিরে বিতর্ক

News Desk

Published: 17 June, 2024, 03:18 PM

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে ফেলা হল বাবরি মসজিদের নাম। ন্যাশানাল কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং(এনসিইআরটি)-র দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নতুন পাঠ্যপুস্তকে বাবরি মসজিদের পরিবর্তে লেখা হয়েছে তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট কাঠামো। ইতিহাসের এই বিকৃতি ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

এনসিইআরটি প্রকাশিত নতুন এই পাঠ্যপুস্তকটি গত সপ্তাহেই সামনে এসেছে। এই নয়া সংস্করণে দু’পাতায় অযোধ্যার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বাবারি মসজিদের পরিবর্তে লেখা হয়েছে, ষোড়শ শতকে মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি দ্বারা নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট কাঠামো। এটি শ্রী রামের জন্মস্থানে নির্মিত হয়েছিল। পাঠ্যপুস্তকে বলা হয়েছে যে কাঠামোটির আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের অংশে হিন্দু প্রতীকের ধ্বংসাবশেষ দেখা গিয়েছিল।

এই পাঠ্যপুস্তকের আগের সংস্করণে বাবরি মসজিদকে মীর বাকি দ্বারা নির্মিত ষোড়শ শতকের মসজিদ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। শুধু নাম বদলই নয় নতুন প্রকাশিত এই বইয়ে অযোধ্যার ইতিহাসের পৃষ্ঠা সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে।

বইটির আগের সংস্করণে লেখা ছিল, ফৈজাবাদ আদালতের নির্দেশে ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাবরি মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার পর দুই তরফেই গোলমাল দেখা দেয়। সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রা, সাম্প্রদায়িক অশান্তি, করসেবকদের উন্মাদনা, বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং দাঙ্গার উল্লেখ ছিল। নয়া সংস্করণে লেখা হয়েছে, ‘অযোধ্যা নিয়ে আফশোসের অন্ত ছিল না বিজেপি-র।’ ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন রয়েছে বলে অযোধ্যা থেকেই ধারণা জন্মায় বলেও উল্লেখ রয়েছে বইয়ে।

নতুন প্রকাশিত এই পাঠ্যপুস্তকে দাবি করা হয়েছে, শ্রী রামের জন্মভূমিতে মন্দির ভেঙে তিন গম্বুজ সম্বলিত নির্মাণটি দাঁড় করানো হয় বলে বিশ্বাস জন্মায়। মন্দিরের শিলান্যাস হওয়ার পরও নির্মাণের কাজ এগোয়নি। ফলে হিন্দুদের মনে ধারণা জন্মায় যে রামজন্মভূমি নিয়ে তাঁদের আবেগকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। অন্য দিকে, মুসলিমরা গোটা কাঠামোর উপর দখলদারি চেয়ে দাবি জানায়। সেই নিয়ে দুই তরফে উত্তেজনা বাড়ে। আইনি টানাপোড়েন শুরু হয়। দীর্ঘদিনের এই বিবাদের নিষ্পত্তি চেয়েছিল দুই পক্ষই। ১৯৯২ সালে কাঠামোটি ধ্বংসের পর সমালোচকদের একাংশের মনে হয়েছিল, ভারতীয় গণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষতায় ঝুঁকির সম্মুখীন।

২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যা বিবাদ নিয়ে যে রায় দিয়েছিল তার উল্লেখ রয়েছে নয়া সংস্করণে। ওই অংশে লেখা রয়েছে, বহুধর্ম এবং বহু সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক সমাজে এই ধরনের বিবাদের ক্ষেত্রে সাধারণত আইনি পথেই সমাধান বেরোয়। আদালত যেভাবে বিতর্কিত জায়গাটি রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের হাতে তুলে দেয় এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে মসজিদ নির্মাণের জন্য অন্যত্র জায়গা বরাদ্দ করার নির্দেশ দেয়, তাতে ভারতীয় সংবিধানের সম্মানরক্ষা হয়েছে বলেও লেখা রয়েছে বইয়ে। ঐতিহাসিক রেকর্ড এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ভিত্তিতেই আদালত রায় দেয় বলে দাবি করা হয়েছে বইয়ের নয়া সংস্করণে। যদিও আদালত জানিয়েছিল, মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়েছে বলে কোনও যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এনসিআরটি প্রকাশিত বইয়ের আগের সংস্করণে খবরের কাগজের প্রতিবেদনের ছবি ছিল, যাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের উল্লেখ ছিল। ‘অযোধ্যা বিজেপি-র সবচেয়ে বড় ভুল’ বলে অটলবিহারি বাজপেয়ীর মন্তব্যেরও উল্লেখ ছিল। সেগুলির কিছুই আর নেই নয়া সংস্করণে।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কল্যাণ সিংহ। ১৯৯৪ সালে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে সুপ্রিম কোর্ট। পুরানো সংস্করণে তার উল্লেখ থাকলেও, নয়া সংস্করণে নেই।

 

উল্লেখ্য, ধবংস হয়ে যাওয়া মসজিদের স্থানে বর্তমানে রাম মন্দির নির্মিত হয়েছে। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে মন্দিরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

 

 

  

Leave a comment