শেখ কুতুবুদ্দিন: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে অভদ্র আচরণের জন্য শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হল তৃণমূল ছাত্রপরিষদের প্রাক্তন ইউনিট সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মন্ডলকে।উপাচার্য মুহাম্মদ আলিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, চড়মারার হুমকি সহ একাধিক অভিযোগ ছিল গিয়াসুদ্দিনের বিরুদ্ধে। টেকনো সিটি থানার পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে।রবিবার দুপুরে মুহাম্মদপুরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পর রবিবার বিধাননগর থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। রা। তাকে গ্রেফতার করে টেকনো সিটি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।উল্লেখ্য– শুক্রবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ঘিরে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও কটূক্তি করার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে গিয়াসউদ্দিন মণ্ডলের।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাবি– ২০১৮ সালের পর থেকে দলের সঙ্গে কোনও যোগ নেই ওই অভিযুক্ত ছাত্রনেতার। এমনকি সে কোনওদিন তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র ইউনিটের সভাপতি ছিল না বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে হেনস্থা করা হচ্ছে উপাচার্যকে। প্রকাশ্যে যে ধরনের অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তার নিন্দা করছেন বিশিষ্টরা আলিয়ার এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন– রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। রাজ্যপাল বলেন– শিক্ষাঙ্গনের এই ঘটনা আমার হৃদয়কে রক্তাক্ত করেছে।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাইফুল্লা বলেন– ‘আলিয়ায় যা হয়েছে– বলার ভাষা নেই। এতে এক দল মানুষ আনন্দ উপভোগ করছে। ছাত্র সমাজের এই কাণ্ড দেখে লজ্জায় মুখ ঢাকছি। এই ঘটনায় মর্মাহত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস– ক্ষমতাসীন পক্ষ থেকে এই আন্দোলন হতে পারে। তাঁদের আল্লাহ’র রহমত বর্ষণ হোক।’
আলিয়ার প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন– আলিয়ায় যে নেতাকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট সভাপতি বলা হচ্ছে– তাকে ৩ বছর আগেই দল সরিয়ে দিয়েছে অশ্লীল ও দলবিরোধী কাজ করার জন্য। আমাদের বক্তব্য– দলের বদনাম করতেই এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। ইচ্ছা করে ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে অশ্রাব্য গালিগালাজ দিয়ে৷
অভিযুক্ত গিয়াসউদ্দিন মোল্লা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র। পূর্ব বর্ধমান জেলায় বাড়ি। ২০১৩ সালে কলকাতায় পড়াশোনার জন্য আসে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ভর্তি হয়। এক বছরের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নিজের দাপট দেখাতে শুরু করে গিয়াসউদ্দিন মোল্লা। এরপর আস্তে আস্তে রাজনীতির ছত্রছায়ায় প্রবেশ করতে থাকে গিয়াস। নিজেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা করে– যদিও সেই সময় কোন ইউনিট ছিল না বলেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাবি। এরপর ২০১৮ সালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তোলাবাজি –ক্যান্টিন থেকে তোলা আদায়– জুনিয়ার ছাত্রদেরকে পেটানো সহ একাধিক অভিযোগ ওঠে এই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে। সে তার দলবল নিয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘরে ঢুকে তাকে গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের একটি ছাত্র কলকাতায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘরে ঢুকে কিভাবে গালিগালাজ হুমকি দিল? এর পিছনে কারা? আলিয়া কাণ্ডে অভিযুক্ত যুবক আলিয়ার প্রাক্তন ইউনিট প্রেসিডেন্ট কবিরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আমার সঙ্গে উপাচার্যের কথা হয়েছে। আমাদের ইউনিটের সবাই তাঁকে বার করে নিয়ে আসেন। তিনি একটু স্বাভাবিক হয়ে যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অভিযুক্ত কোনও দিনই আমাদের ইউনিট প্রেসিডেন্ট ছিল না। ২০১৫ সালে সাধারণ কর্মী হিসাবে যোগ দেয়। ২০১৮ সাল থেকে সব সম্পর্ক তার সঙ্গে ছিন্ন হয়েছে বলে বক্তব্য আলিয়ার ছাত্রদের একাংশের।
এক নজরে ঘটনাপ্রবাহ
শুক্রবার এগারোটা নাগাদ আলিয়ায় বিক্ষোভ শুরু
রাত পর্যন্ত আলিয়ার উপাচার্য মুহাম্মদ আলি ঘেরাও
ঘরে ঢুকে অশ্লীল বাক্য ব্যবহার অভিযুক্ত গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল ও ফরিদউদ্দিনের
অসুস্থ হন উপাচার্য।
রাতে তাঁকে বের করে নিয়ে যায় এক দল ছাত্র ও নিরাপত্তারক্ষীরা।
শনিবার উপাচার্যের উপর জুলুমের ভিডিও ভাইরাল।
এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় ওঠে বিশিষ্ট মহলে।