মস্কো, ৮ ডিসেম্বর: বিদ্রোহীদের তোপের মুখে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে পালিয়ে গেছেন সিরিয়ার সদ্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। তবে তিনি কোথায়, তেহরান না মস্কোয়, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। সূত্রের খবর, আসাদ রবিবার ভোর রাতেই দামেস্ক থেকে বিমানে করে রাশিয়ার খেমাইমিম বিমান ঘাটিতে চলে যান। সেখান থেকে তার মস্কো যাওয়ার কথা রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, আসাদ পালিয়েছেন ইরানে৷ তেহরানে গিয়ে খামেনির সঙ্গে দেখা করে পরামর্শ চাইছেন তিনি৷ এই পরিস্থিতি একাধিক কারণের ফল। আসাদের মিত্র ইরান ও রাশিয়া আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর চাপে দুর্বল ও মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে, এবং অনেকেই উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের শাসনের শুরু হয় ১৯৭০ সালে হাফিজ আল-আসাদের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে। ৫৪ বছর ধরে এই পরিবার দেশটির রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে। তাদের শাসনামল চিহ্নিত হয়েছে গৃহযুদ্ধ, গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য। হাফিজ আল-আসাদ ১৯৭০ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সিরিয়ার বাথ পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন৷ ১৯৮২ সালে হামা শহরে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিদ্রোহ দমনে তার আদেশে যে গণহত্যা চালানো হয়, তাতে ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়। এই ঘটনা তার শাসনের এক ‘কালো অধ্যায়’ হিসেবে ইতিহাসে লেখা রয়েছে।
২০০০ সালে হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর তার পুত্র বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় আসেন। পেশায় একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বাশারকে প্রথমে একজন সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে দেখা হলেও ক্ষমতায় আসার পর তিনি তার পিতার মতোই কঠোর নীতি অনুসরণ করেন।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছানোর পর বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে, যা আসাদের শাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। তবে, আসাদ সংলাপের পরিবর্তে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক অভিযান, বোমাবর্ষণ এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে দেশটি ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের মধ্যে ডুবে যায়।