Sat, June 29, 2024

ই-পেপার দেখুন

কোরবানির পশুর চামড়ার দাম

Puber Kalom

Puber Kalom

Published: 12 June, 2024, 07:37 PM
কোরবানির পশুর চামড়ার দাম

 

ক’দিন পর কোরবানির ঈদ। সবার নজর এখন কোরবানির পশুর দাম, তার জোগান কেমন হবে সে দিকে। পশুর চামড়ার দাম অবশ্য ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে, যা নিয়ে চলছে পর্যালোচনা। একসময় কোরবানির পশুর জন্য পাশের দেশনির্ভর থাকলেও এখন দেশে কোরবানির পশুর চাহিদার চেয়েও জোগান ২০-২২ লাখ বেশি থাকে। গত ক’বছর ধরে মোটের ওপর পশু কোরবানি হয় কোটির উপরে। তার অর্থ দাঁড়ায় এক কোটি পশুর চামড়া বিক্রির জন্য প্রস্তুত হবে কোরবানিতে।

আজকের লেখা মূলত কোরবানির পশুর চামড়া এবং এর দাম নিয়ে। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মনে পড়ছে শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের লেখা একটি গানের কলি- ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে রে, আমি বলি কমে’। অর্থাৎ শিল্পী বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষের বয়স বাহ্যিক দৃষ্টিতে বাড়লেও পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সময় কমছে; এটি একটি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি। কোরবানির চামড়ার দাম নিয়ে এ গানের কলি একটু প্যারোডি করে বলা যায় ‘সবাই বলে কোরবানির চামড়ার দাম বাড়ে রে, তথ্য বলে কমে রে, আমি বলি কমে।’ অথচ চামড়াজাত পণ্যের দাম বাড়ছে বহু গুণে। কাঁচা চামড়ার এ দাম কমার পেছনেও বোধ করি রয়েছে কোনো ধরনের আধ্যাত্মিকতা! আসুন দেখি বাস্তবতার পাশাপাশি কী অদৃশ্য কারণ দাম কমার পেছনে দায়ী।

 

প্রতি বছর কোরবানির ঈদে ট্যানারি মালিকরা পশুর কাঁচা চামড়া কেনেন পানির দরে। অথচ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সূত্র মতে, বছরে ১৩-১৪ হাজার কোটি টাকার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাণিজ্য করেন ন্যাটারি মালিকরা। তবে বঞ্চিত হয় অসহায়-গরিব মানুষ। অর্থাৎ কোরবানিদাতা, চামড়ার মূল্যের সুবিধাভোগী এবং চামড়াপণ্য ব্যবহারকারী ভোক্তাকে ঠকতে হলেও চামড়া খাত থেকে বাড়তি মুনাফা তুলে নিচ্ছেন ট্যানারি মালিক ও বিভিন্ন পর্যায়ের পশুর চামড়া ব্যবসায়ীরা।

দেশে সবকিছুর দাম বাড়লেও কেবল কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমছে। পরিসংখ্যান মতে, ২০১৩ সালেও ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৮৫-৯০ টাকা; খাসির চামড়ার দর প্রতি বর্গফুট ৫০-৫৫ টাকা নির্ধারিত হয়েছিল। অথচ ২০২৪ সালে গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারিত হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৫৫-৬০ টাকা; খাসির চামড়ার মূল্য ২২-২৫ টাকা। দেখা যাচ্ছে, গত ১১ বছরে প্রতি বর্গফুটে গরুর চামড়ার মূল্য কমেছে প্রতি বর্গফুটে ৩০ টাকা, খাসির চামড়ার মূল্য কমেছে ২৮-৩০ টাকা। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মূল্যের এ কমতি দেখা গেলেও বাস্তবে টাকার ক্রয়ক্ষমতা অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় নিলে চামড়ার মূল্য আরো অনেক কম। এক পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরের গড়ে জিনিসপত্রের দাম ১৩৩ শতাংশ বেড়েছে, অর্থাৎ যে জিনিসের দাম ২০১৩ সালে ১০০ টাকা ছিল তার বর্তমান মূল্য ২৩৩ টাকা। সে হিসাবে ২০১৩ সালে ৯০ টাকার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার মূল্য ঢাকায় ২১০ টাকা হওয়ার কথা; কিন্তু ২০২৪ সালের ঘোষিত মূল্য ঢাকায় মাত্র ৬০ টাকা বর্গফুট, এর অর্থ হলো- ১১ বছরে চামড়ার দাম ২৮ শতাংশে নেমেছে, মানে দাম প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগ হয়েছে।

 

চামড়াপণ্যের দাম বাড়ছে, চামড়ার দাম কমছে
চামড়ার এতটা দাম কমলেও জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগের মতো চামড়াজাত পণ্যের মূল্য চড়া। কেন কাঁচামালের দরপতনের পরও চামড়াজাত এসব পণ্যের এত চড়া দাম; সে প্রশ্নের জবাব মেলে না কোথাও। এ খাতের উদ্যোক্তারা অবশ্য বলেন, কাঁচামালের সাথে তৈরি হওয়া পণ্যের দাম মেলানো যাবে না। বিশেষ করে চামড়ার মতো কাঁচামাল অনেক হাত ঘুরে আসে। তাদের মতে, কাঁচা চামড়ার দামের সাথে প্রক্রিয়া করার খরচ যোগ হয়। এরপর সেই প্রসেসড চামড়া আরেকজন কিনে নিয়ে দেশী-বিদেশী ক্রেতাদের অর্ডার মতো জুতা, স্যান্ডেল বা ব্যাগ তৈরি করেন। তার কাছ থেকে সেসব ব্র্যান্ডের পণ্য কিনে বিক্রেতা কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করেন। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে মনে করা হয়, চামড়ার তৈরি পণ্য কয়েকগুণ বেশি দাম ধরা না হলে তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবেন না। তাই চামড়ার চেয়ে চামড়াজাত পণ্যের দাম বেশি হয়।

 

ব্যবসায়ীদের মতের সাথে আমরাও একমত, কাঁচা চামড়ার চেয়ে চামড়াজাত পণ্যের দাম বেশি হবে। সব পণ্যের ক্ষেত্রে কাঁচামালের চেয়ে এর থেকে তৈরি পণ্যের দাম বেশি হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো- সব পণ্যের ক্ষেত্রে ফিনিশড পণ্যের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে এর কাঁচামালের দাম বাড়ে অথচ কেবল চামড়ায় ফিনিশড পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার সাথে কাঁচামালের দামের বিপরীত সম্পর্ক। অর্থাৎ চামড়ার জুতা-স্যান্ডেল বা ব্যাগের দাম বাড়ছে অথচ কাঁচা চামড়ার দাম ১০ বছরে ৪ ভাগের ১ ভাগ হয়ে যায়!

কোরবানির চামড়ার দাম কমছে কেন
চামড়ার দাম কমার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদার তুলনায় বিপুল চামড়ার সরবরাহ এর অন্যতম কারণ। চাহিদা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা রফতানি পড়তির কথা বলছেন। যারা কোরবানি দিচ্ছেন এবং মৌসুমি চামড়ার ব্যবসার সাথে যুক্ত, তারা বলছেন, ২০১২-১৩ সালে চার-পাঁচ মণ ওজনের কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রি করতে পারতেন গড়ে দেড় হাজার টাকা; কিন্তু গত দু-তিন বছর ধরে এটি গড়ে ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে। এটি কমা শুরু হয় ২০১৬-১৭ সাল থেকে। একসময় প্রত্যেক ঈদে বিক্রেতাদের দামাদামি করে চামড়া বিক্রি করা ছিল ঈদের আনন্দের অংশ; কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার ঘোষিত দাম কিছুটা বাড়লেও বাস্তবে বাড়ছে না। এমনকি কেউ কিনতে আগ্রহ দেখান না। মাদরাসার লোকদের ডেকে চামড়া দিয়ে দিতে হয়। তারাও এখন আগ্রহ দেখান না। কাঁচা চামড়ার অনেক ব্যবসায়ী এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।
চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার পেছনে রফতানি কমে যাওয়া একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে চামড়া রফতানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় দেশীয় ট্যানারির মালিকদের কাছে চামড়ার চাহিদা কমে গেছে। ওই সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ যেসব কমপ্লায়ান্ট বায়ার ছিল তারা এ দেশ থেকে চামড়া কেনা বন্ধ করে দিলেন।

 

এখন নন-কমপ্লায়ান্ট বায়ারের কাছে অর্ধেকর কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের চামড়া রফতানির একটি বড় বাজার চীন। সাথে কিছু চামড়া হংকং ও জাপানে রফতানি করা হয়। সেসব দেশেও চামড়ার চাহিদা অভ্যন্তরীণভাবে কমে গেছে বলে শোনা যায়। চামড়াজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ হলেও সেখানে রফতানির জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশনের সনদ এবং লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিবেশ স্বীকৃতি সনদের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পের সামগ্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়াটি পরিবেশগত সমস্যা থেকে মুক্ত হতে না পারায় এর কোনোটি নেই বাংলাদেশের। এ কারণে ওই সব দেশে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ঢুকতে পারছে না। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন এর জন্য সরকারকে দায়ী করে। সংগঠনটি বলছে, ২০১৬ সালে সরকার অপরিকল্পিতভাবে ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে পরিবেশবান্ধব পরিবেশে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা থাকবে বলে আশ্বাস দিলেও শেষমেশ হয়নি। এ ছাড়া খুব বেশি ট্যানারি সেখানে গিয়ে স্থায়ী হতে পারেনি। তাদের মতে, ২০-৩০টি ট্যানারিও যদি এলডব্লিউডি সার্টিফায়েড করা যেত তাহলেও এ রকম পরিস্থিতি হতো না।

এ ছাড়াও ক্রেতা-বিক্রেতা এবং সংশ্লিষ্টদের মতে চামড়া একটি পচনশীল কাঁচামাল। হঠাৎ করে একই দিনে সারা দেশে এক কোটির উপর পশু জবাই হয়। এতগুলো চামড়া স্বল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশ থেকে সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা খুব কষ্টকর। ফলে ওই সময় রাস্তার দু’পাশে শত শত অবিক্রীত কোরবানির পশুর চামড়া পড়ে থাকতে দেখা যায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেকসময় কেনা চামড়া শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন না। মৌসুমি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, যথাযথ তদারকির অভাবে ও সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে চামড়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটছে প্রতিনিয়ত। তারা বলছেন, সরকার চামড়ার দাম বাড়ালেও আড়তদাররা অপকৌশলে দাম দিচ্ছেন না। ফলে কম দামে চামড়া কিনতে পারায় এবং কাঁচা চামড়া বিদেশে রফতানির অনুমতি মেলায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত লাভ হাতিয়ে নেন আড়তদার, ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা। এর জন্য অনেকে সিন্ডিকেটকে দায়ী করলেও এ অভিযোগ মানতে নারাজ চামড়ার আড়তদাররা। তাদের মতে, এভাবে হিসাবের সরলীকরণ করাটা ভুল হবে। কারণ কেমিক্যাল, লবণ, মজুরি, ভাড়া সবকিছুর দাম বাড়তি। তারপর অন্তর্জাতিক বাজারসংশ্লিষ্টরাও কিন্তু পর্যবেক্ষণ করেন, আমরা কেমন দামে কিনছি। সে দামের ওপর ভিত্তি করে তারা আমাদের চামড়ার দাম নির্ধারণ করে।

 

অর্থনীতিবিদ ও বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, লবণহীন চামড়ার দাম নির্ধারণ না করায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক মিলে ব্যবসায়ীদের ৫০০ কোটি টাকার মতো ঋণ দেয়। ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে চামড়া বাবদ ঋণ নিয়ে অন্য খাতে বিনিয়োগ করার প্রবণতা রয়েছে। এসব কারণে কোরবানিতে চামড়া কেনার সংখ্যা বাড়লেও ঋণের পরিমাণ কমে আসছে। এ ছাড়া বর্তমানে কৃত্রিম চামড়া এবং প্লাস্টিকের বহুল ব্যবহার শুরু হওয়ায় চামড়ার চাহিদা বিশ্বজুড়ে কমে গেছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। অন্য দিকে বাংলাদেশে চামড়া উৎপাদন আগের তুলনায় বহু গুণে বেড়েছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান বেড়ে যাওয়ায় দাম পড়ে গেছে বলে দাবি তাদের।

ক্ষতিগ্রস্ত কারা
চামড়ার দাম কমার অর্থনৈতিক কারণ উপরে বর্ণনা করলেও অনেকের ধারণা- দাম কমার পেছনে অলিখিত বা অন্য কিছু কারণ রয়েছে। অন্যতম একটি কারণ, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে দাম কমিয়ে চামড়া কিনে এই কাঁচা চামড়া বিদেশে পাচার করা হয়, যেমনটি হয়েছে বাংলাদেশের পাটের বেলায়। ফলে চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে খতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। অন্য একটি অলিখিত কারণ হলো, ইসলামের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা কোরবানিদাতা ভোগ করতে পারেন না। চামড়া বিক্রির পুরো অর্থ দান করে দিতে হয় গরিবদের মধ্যে। এ ছাড়াও এ টাকার উল্লেখযোগ্য অংশ দেশের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেয়া হয়; বিশেষ করে কওমি ও হাফেজি মাদরাসায়। এসব মাদরাসা মূলত ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের দান, জাকাতের অর্থ এবং পাশাপাশি কোরবানির পশুর চামড়ার টাকায় চলে। মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের দাবি, কোরবানির চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় মূলত দেশের মাদরাসাগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অনেকের মতে, ইসলামবিদ্বেষী দেশী-বিদেশী মহল চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণ করে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার অপচেষ্টা করছে হয়তো। সুতরাং চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে এর থেকে উৎপাদিত পণ্য রফতানি করে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি সাহায্যে চলা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এবং দেশের গরিবদের রক্ষা করার প্রচেষ্টা নিতে হবে সরকারকে।

Leave a comment