Mon, July 1, 2024

ই-পেপার দেখুন

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পানির ভাগ নিয়ে যা বললেন শেখ হাসিনা

ইমামা খাতুন

Published: 27 June, 2024, 01:55 PM
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পানির ভাগ নিয়ে যা বললেন শেখ হাসিনা


শেখ হাসিনা চিন যাওয়ার আগে ভারত সফরে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর ১০টি চুক্তি ও কিছু সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু পানির ভাগ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে মোদিজির সঙ্গে সমঝোতা অতল পানিতে পড়েছে। ঢাকায় ফিরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যে খোলাখুলি বক্তব্য রেখেছেন, তা এখানে উদ্ধৃত করা হচ্ছে।  

সাংবাদিক: আমার প্রশ্ন হল দুু’টি। আপনি ভারত সফর করেছেন। একটি প্রশ্ন হচ্ছে, তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে, আর একটা হচ্ছে তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা। দুু’টি অংশ। নদীর ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিনের একটা বড় প্রস্তাব আপনার কাছে আছে, ভারতের সঙ্গে আপনি কথা বলে আসলেন এবং আপনি আসার পর দিল্লিতে ডেরেক ও’ব্রায়েন (তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা) তিনি প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, কেন্দ্র সরকার এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কোনও কথা বলেনি। কালকে আমরা দেখেছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি দীর্ঘ চিঠি দিয়েছে কেন্দ্র সরকারকে, যে তাঁকে বাইপাস করে তিস্তা-গঙ্গা নিয়ে যে কাজ করা হচ্ছে এটিতে তাঁর সায় নেই। দুই নম্বর, শুধুমাত্র তিস্তা না। তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা গঙ্গার যে চুক্তিটা নবায়ন করব সেটিতেও তাঁর মতামত নিতে হবে। এই জটিল সমস্যাটা কীভাবে সামলাবেন বা আমরা আমাদের জন্য কীভাবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলব সেটা আমরা জানতে চাই। 
শেখ হাসিনা: আমরা তিস্তা প্রজেক্ট নিয়েছি। তিস্তা প্রজেক্ট, তিস্তা পুরো নদীটাকে ড্রেজিং করা, বাঁধ বাধানো, পানি সংরক্ষণ, সমস্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তা ও গঙ্গার  জন্য, বিশেষ করে গঙ্গা চুক্তি ২০২৬-এ ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। তবে সেটা যদি নবায়ণ নাও হয়, চুক্তি কিন্তু অব্যাহত থাকবে। যেহেতু চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে, ৩০ বছরের মেয়াদই চুক্তি আমরা করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, একটি টেকনিক্যাল গ্রুপ করা হবে। যেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ওটা ওনার ক্ষোভ যে ওনার সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। উনি তো ছিলেন না দিল্লিতে। আমি তো নিজেই ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, উনি ছিলেন না। থাকলে নিশ্চই ওনার সঙ্গে আমরা আলোচনা করতাম। অন্তত আমি করতাম। আগে যে মোবাইল ফোন নম্বর ছিল ইলেকশনে উনি যখন  জিতেছেন আমি তখনই চেষ্টা করেছি, পরে শুনলাম উনি এখন ওই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। যাইহোক। আমার কথা হচ্ছে, কাউকে বাদ দেওয়া হবে না। এখানে টেকনিক্যাল গ্রুপ আসবে, আলোচনা করবে, তবে সমঝতা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে চিঠি সেটাতো উনি লিখেছেন ওনার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। সেটা তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে আমার কিছু বলার নেই। এটা সম্পূর্ণ ভারতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমার নাক গলানোর কোনও দরকার নেই। কিছু বলার দরকার নেই। আমার সঙ্গে সকলের সম্পর্ক ভালো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো, আবার নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো। অন্যান্য সব দলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো।  আমি এতটুকু বলতে পারি, ভারতের সমস্ত দল-বল নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। 
তিস্তা প্রজেক্ট কিন্তু আজকের না। আমার মনে হয় সেই যুক্তফ্রন্টের যে ২১ দফা সেখানেও কিন্তু দেওয়া ছিল। আমাদের আওয়ামি লিগের কিন্তু এটা ছিল যে তিস্তা প্রজেক্ট করতে হবে। সেই তিস্তা প্রজেক্ট করার জন্য ভারত সহযোগিতা করবে এবং আমাদের যৌথ কমিটি হবে এবং সেটা কীভাবে তিস্তা, খালি পানির ভাগাভাগির বিষয়টা নয়। গোটা তিস্তা নদীটাকেই পুনরুজ্জীবিত করে আমরা ওই উত্তরঅঞ্চলে সেচের ব্যবস্থা করা, অধিক ফসল যাতে হয়, নেভিগেশনের ব্যবস্থা করা সেটাই আমরা করব। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। আর গঙ্গা পানির যে চুক্তিটা এটা আবার নবায়ণ করার জন্য আলোচনা করা হবে, টেকনিক্যাল গ্রুপ বসবে, দেখবে তারপর হবে। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য় একটা কথা বলছেন যেটা আমি সমর্থন করি। সেটি হল আসলে তাদের নদীগুলি ড্রেজিং করা উচিত, ফারাক্কায় পলি জমে যাচ্ছে, অন্যান্য নদীগুলিতে পলি জমে যাচ্ছে, এই ড্রেজিং-এর কাজটা যদি তারা করতে পারি তাদের যে পানির অভাবটা বিশেষ করে পানীয় পানির যে অভাবটা সেটা থাকে না। সেটা তিনি কেন্দ্রকে লিখেছেন। আমার মনে হয় কেন্দ্রের এটা ভাবা উচিত, আসলে ওদের ড্রেজিং করলেই কিন্তু অনেক পানির সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। যেমন আমরা শুরু করেছি আমাদের দেশে। আমরা কিন্তু নদী ড্রেজিং করাতে শুরু করেছি। আজকে বন্যা হলেও বন্যার যে ক্ষতিটা আগের মতো হচ্ছে না। কারণ নদীতে পানির ধারণ ক্ষমতাটা তো বাড়াতে হবে। শুধু তাই নয়, আমার নির্দেশ, যে নদী কতটুকু নদী ড্রেজিং করাতে হবে সেটা হিসেব করে করতে হবে।  মরফোলোজি টেস্ট করে, সমীক্ষা করেই এই সব কাজে লাগতে হবে, পাশাপাশি একটা বাফার জোন রাখতে হয়। কারণ, আমাদের বর্ষাকালে যে পানিটা বাড়ে এই পানিটাও যেন ধারণ করতে পারে। নদী তারপর তার একটা জায়গা যেটাকে বাফার জোন বলে, এরপরে বাঁধ। বাঁধের আগে একটা জায়গা থাকতে হবে, যে নদীর পানি বাড়লে যেন ওই জায়গায় পানি ধারণ করা হয়। ওই পানিটা যখন শীতের দিকে কমে যায় তখন ওই জায়গাটাতে চাষ করা যায়। ওখানে আমরা চাষ করি, ফসল হয় আবার বর্ষার সময় পানিতে ভরে যাবে। বাংলাদেশের নদীগুলিতে আমাদের ঠিক এইভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাহলেই কিন্তু আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এটা আমি বললাম, এটা আমার কথা না, আমার বাবার মুখে আমি বারবার এই গল্প গুলি শুনতাম। তাঁর কাছ থেকেই শুনেছি। তিনি শিখিয়েছেন। এটাও শুনেছি যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে নিয়মিত নদীগুলো ড্রেজিং হত।  যুদ্ধের সময় সেই ড্রেজারগুলিকে গানবোর্টে কনভার্ট করা হয়। সেগুলি গানবোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা হত। তারপর থেকেই ড্রেজিং প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বেশিরভাগ ড্রেজার থাকত অসমে। একেবারে নিয়মিত ড্রেজিং হত। ওরা নীচে থেকে ড্রেজ করে করে ওপরের দিকে যেত। তাই ওখানেই ড্রেজারগুলো বেশি থাকত। এগুলো আব্বার থেকে শোনা। ওখান থেকেই নদীর ড্রেজিং করা, বারবার বাঁধ দিলে হবে না। আমরা সমতলভূমিতে থাকি। ওপর থেকে যত পলি আসে সব আমাদের এখান থেকে হয়ে বঙ্গোপসাগরে চলে যায়। সিলেটের বন্যা নিয়ে আগেই সতর্ক করেছি, অসমে বন্যা হতেই বলেছি, তারপর সিলেটে বন্যা হল। অসমের বন্যার পানি নেমে আমাদের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল, এবার সেটা দক্ষিণে নামবে। ওই নামতে নামতে পানি মাটি যত চুয়ে নিতে পারবে সেটুকু কমবে। কিন্তু বৃষ্টি হলে থাকবে। 
তবে আমাদের জন্য যে প্রচণ্ড খরা গেল, খরার পর এই যে বন্যাটা এবং যে পানি যাচ্ছে, মাটির জন্য কিন্তু খুব ভালো হল। মাটিগুলো উর্বর হল। নদী, খাল, বিল, পুকুর সেখানে পানি আসল। যদি বন্যা আসে, খালি ক্ষতি ক্ষতি করে চিন্তা করলে হবে না। ভালো দিকটাও দেখতে হবে। এতদিন যে জলে, মাটিতে লবণাক্ততা দেখা দিচ্ছিল, এই বন্যার জলে সব ধুয়ে চলে যাবে। প্রত্যেক বন্যার পর কিন্তু ফসল ভালো হয়।   
  
 

Leave a comment