Sat, September 21, 2024

ই-পেপার দেখুন

প্রতিশোধ নিতে আক্রমণের প্রস্তুতি ইরানের, উচ্চ সতর্কতায় ইসরাইল

ইমামা খাতুন

Published: 02 August, 2024, 08:22 PM
প্রতিশোধ নিতে আক্রমণের প্রস্তুতি  ইরানের, উচ্চ সতর্কতায় ইসরাইল

বিশেষ প্রতিবেদন: হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার জেরে যেকোনও মুহূর্তে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ইসরাইলে সরাসরি হামলার আদেশ দিয়েছেন সেনাবাহিনীকে। ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। হানিয়ার শাহাদাতের পরপরই ইসরাইলকে প্রতিশোধের বার্তা দিয়েছিলেন খামেনি। তিনি বলেছিলেন, ‘ইরানের ভূখন্ডে এমন দুঃখজনক ঘটনার পর বদলা নেওয়াটা আমাদের কর্তব্য।

ইসরাইল কঠোর শাস্তি পাওয়ার মঞ্চ তৈরি করেছে।’ যুদ্ধ প্রসারিত হলে বা ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালালে আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা উভয়ের জন্যই পরিকল্পনা তৈরি করতে সামরিক কমান্ডারদের নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ নেতা। ইতিমধ্যে লেবানন সীমান্ত থেকে ইসরাইলে হামলা শুরু করেছে ইরানপন্থী হিজবুল্লাহ। ফলে উচ্চ সতর্কতা জারি হয়েছে ইসরাইলে। জানা গিয়েছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও সেনাকে যুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন।

নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইলে হামলা হলে পাল্টা হামলা চালানো হবে। তার কথায়, ‘ইসরায়েল প্রতিরক্ষামূলক এবং আক্রমণাত্মক উভয় পরিস্থিতির জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত। আমরা আমাদের বিরুদ্ধে যেকোনও আগ্রাসনের জবাব দিতে পারি। যারা আমাদের ওপর হামলা চালাবে আমরাও তাদের ওপর হামলা চালাব।’

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলে হামলা না চালাতে ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, হামলা হলে মিত্র তেল আবিবকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে পেন্টাগন। সূত্রের খবর, ইসরাইলে হামলার জন্য এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে ইরান। শুরুতেই ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলে হামলা চালাতে তৈরি হচ্ছে দেশটির সেনা।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান একযোগে ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাকসহ অন্যান্য মিত্র বাহিনীর অবস্থান থেকে ইসরাইলে হামলা চালাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেছেন, ’আমরা খুব গভীরভাবে এবং সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ইসরাইলকে রক্ষার জন্য কী কী করণীয়- সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি।’

আন্তর্জাতিক গবেষকরা বলছেন, হানিয়ার হত্যাকাণ্ডে ভয়াবহ সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক অধ্যাপক নাদের হাশেমি বলেন, এই হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যকে অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। হাশেমি বলেন, ‘এটি অনেক বড় ঘটনা।

আমার ধারণা, লেবাননের ঘটনাপ্রবাহে এর প্রভাব পড়বে। মনে করা হচ্ছিল, ইরান ও হিজবুল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা আর বাড়াতে চায় না। তবে এই হত্যাকাণ্ড সেই ধারণা বদলে দিয়েছে।’ হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি বলেছেন, ‘হামাস একটি আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি একটি প্রতিষ্ঠান, যা কোনও ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়।

যেকোনও আত্মত্যাগের বিনিময়ে হামাসের পথচলা অব্যাহত থাকবে এবং বিজয়ের ব্যাপারে আমাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে।’ দলের জ্যেষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুক বলেছেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের পর আমরা চুপ করে বসে থাকব না। অবশ্যই এ ধরনের কাপুরুষোচিত কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে।’ তেহরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে এই হত্যাকাণ্ডের দায় নিতে হবে। তবে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের দাবি, এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।

বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনের কাছে আগে থেকে কোনও তথ্যই নাকি ছিল না। এদিকে, ইরানের মিত্র রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে সব পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানানো হয়েছে। রুশ মুখপাত্র আন্দ্রেই নাস্তাসিন বলেন, ‘এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতির নাটকীয় অবনতি ঘটাতে পারে এবং বড় আকারের সংঘাতের সূচনা করতে পারে।’

Leave a comment