Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন

সাহাবিরা যেভাবে রমযান কাটাতেন

News Desk

Published: 01 June, 2024, 04:02 PM
সাহাবিরা যেভাবে রমযান কাটাতেন

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক:  পবিত্র রমযান অন্য মাসের তুলনায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের আমলের তৎপরতা বহুগুণ বেড়ে যেত। তাদের ঘরের প্রতিটি পুরুষ-নারী এমনকি শিশুরাও খুব আগ্রহ নিয়ে রমযানে আমল করতেন। সাহাবিরা রমযানের পুরো  সময়ের জন্য রুটিন করে নিতেন। যেন এক মুহূর্তও গাফেল থেকে সময় নষ্ট না হয়। তারা রমযানের পুরো সময়ের জন্য রুটিন করে নিতেন। যেন এক মুহূর্তও গাফেল থেকে সময় নষ্ট না হয়। রমযানে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভে তাদের চেষ্টায় কোনো কমতি থাকতো না। আজকে আমরা রমযানে সাহাবিদের বিশেষ কিছু আমলের কথা তুলে ধরব।

 

রাতের আমল

 

সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম পুরো রমযানের প্রত্যেক রাতে তারাবি, তাহাজ্জুদ এবং পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াতকে খুব গুরুত্ব দিতেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তো প্রায় পুরো রাত তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজে কাটিয়ে দিতেন এবং পবিত্র কুরআন খতম করে ফেলতেন।

হাদিসে আছে হযরত ইবনে উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু তারাবির নামায জামাতে পড়ার জন্য উবাই  ইবনে কাব এবং তামিম দারিকে নিয়োগ করতেন। তারা নামাযে ১০০ আয়াত বিশিষ্ট সুরাগুলো  পড়তেন।

 

নামাযে দীর্ঘ সুরা পড়ার কারণে তারা লাঠির ওপর ভর করতেন। এ নামাজ তারা শেষ করতেন  সাহরির আগ দিয়ে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনে উমর রা. সবার সঙ্গে মসজিদে তারাবি পড়তেন। নামায শেষ করে সবাই যখন বাড়িতে চলে যেত, তখন নতুনভাবে অজু করে তিনি মসজিদে ফিরে এসে সাহরি পর্যন্ত নামাজ পড়তেন। (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, বর্ণনা : ৪২৮০)

 

দিনের বেলায়ও মসজিদে সময় কাটাতেন

 

পবিত্র রমযান এলে নবীজির সাহাবিরা রাতে মসজিদে ইবাদতে মশগুল থাকার পাশাপাশি দিনেও মসজিদে সময় যাপন করতেন। যেমন ইবনে আবি শায়বা আবুল মুতাওয়াক্কিল থেকে বর্ণনা করেন, আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু এবং তার সাথীরা রোজা রাখলে মসজিদে বসে থাকতেন।

 

(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা,৯৮৭৫) এ ধরনের কথা আলী ইবনে আবি তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকেও বর্ণিত আছে। হজরত আবু নুআইম রহ. সাহাবি আবু হুরায়রা রা সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয় আবু হুরায়রা রা. ও তার সঙ্গীরা রমযানে মসজিদে অবস্থান করতেন এবং তারা বলতেন, আমরা আমাদের রোযাকে পবিত্র করছি। -হিলয়াতুল আউলিয়া

 

অর্থাৎ তারা অর্থহীন কথা ও কাজ, ঝগড়া ও বিবাদ, মিথ্যা ও প্রতারণাসহ এমন সবকিছু থেকে তাদের নিজেদের বিরত রাখতেন- যা রোযা বিনষ্ট করে বা তার প্রতিদান কমিয়ে দেয়।

 

সেহরি ও ইফতারে দাওয়াত

 

রমযানে সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম সামর্থ্য অনুসারে অন্যকে সেহরি ও ইফতারে  মেহমানদারি করতেন। যেমন তাউস রহ. বলেন ‘আমি ইবনে আব্বাস রা. কে বলতে শুনলাম, ওমর রা. সেহরিতে আমাকে খাওয়ার জন্য ডেকেছেন। এরই মধ্যে লোকদের হট্টগোল শুনতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী হচ্ছে ওখানে? আমি বললাম, মানুষ মসজিদ থেকে বের হচ্ছে।’ (মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল : ৯৭)।

মূলত লোকেরা যৌথভাবে সেহরি খাওয়ার পর বের হচ্ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর কাছে খাবার যা থাকতো তিনি তার শাগরেদদের সাথে নিয়ে সেগুলো দিয়ে সেহরি খেতেন।

ইবনে আবি শায়বা আমের ইবনে মাতার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমি আবদুল্লাহর কাছে তার ঘরে এলাম, তিনি সেহরির অতিরিক্ত খাবার বের করলেন। আমরা তাঁর সঙ্গে সেহরি খেলাম।  নামাযের জন্য ইকামত বলা হলে আমরা বের হলাম এবং তাঁর সঙ্গে নামায পড়লাম।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৯০২৪)।

 

অসহায় ও মেহমানদের দাওয়াত

 

সাহাবায়ে কেরাম রা. আসহাবে সুফফাদের খাবার দিতেন। কারণ, তারা মুসলমানদের মধ্যে জীবনযাপনের দিক থেকে দুর্বল ছিলেন। মসজিদে নববিতে পড়ে থাকতেন। ওয়াসেলা ইবনে আসকা রা. থেকে বর্ণিত, ‘রমযান এলে আমরা সুফফায় থাকতাম, আমরা রোযা রাখতাম, যখন ইফতার করতাম, তখন আমাদের একেকজনের কাছে একজন এসে নিয়ে গিয়ে আমাদেরকে রাতের খাবার খাওয়াতেন।’ (হিলয়াতুল আওলিয়া : ৩/২২)।

 

অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকা

 

আবু জর রা. সাথীদের নসিহত করে বলতেন, ‘যখন তোমরা রোযা রাখ, তখন যতটুকু সম্ভব অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাক।’ এ বর্ণনার বর্ণনাকারী তালিক যখন রোযাবস্থায় থাকতেন তখন ঘর থেকে শুধু নামাযের জন্য বের হতেন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)।

 

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, ‘যখন তোমরা রোযা রাখবে, তখন তোমাদের কান, তোমাদের চোখ, তোমাদের জবান মিথ্যা ও গোনাহ থেকে রোজা রাখবে। শ্রমিককে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবে। রোযার দিন তোমাদের গাম্ভীর্যভাব নিয়ে থাকবে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৯৮৭৩)।

 

ওমর ইবনে খাত্তাব রা. বলেন, ‘রোযা শুধু পানাহার বর্জনের নাম নয়; বরং রোযা মিথ্যা, বাতিল ও বেহুদা কসম খাওয়া থেকে বর্জনের নামও।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৯৮৭৫)। এ ধরনের কথা আলী ইবনে আবি তালেব রা. থেকেও বর্ণিত আছে। (প্রাগুক্ত : ৯৮৭৭)।

Leave a comment