Sun, September 29, 2024

ই-পেপার দেখুন

কারও প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ নিজের অনিষ্টতার কারণ

Puber Kalom

Puber Kalom

Published: 02 June, 2024, 06:15 PM
কারও প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ নিজের অনিষ্টতার কারণ

 

 

 

মাওলানা সাবির আহমদ: জীবনে চলতে গিয়ে আমরা অনেক সময়ই অনুমান ও ধারণার ওপর নির্ভর করে থাকি। ব্যক্তিজীবন হোক কিংবা সমাজজীবন হোক, অনুমানের আশ্রয় আমাদেরকে নিতেই হয়। কিন্তু সেই অনুমান যদি নিজের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্যের ওপর গিয়ে পড়ে এবং তা কোনও মন্দ বিষয়ে হয়ে থাকে তখন সেটাকে আমরা মন্দ বা কুধারণা বলে থাকি।

 

সমাজে পারস্পরিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতি রক্ষার জন্যে এ মন্দ ধারণা হুমকিস্বরূপ। কারও সঙ্গে মুক্ত মনে কিংবা ভালো ধারণা রেখে চলাফেরা করা আর তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে ওঠাবসার মাঝে স্বাভাবিকভাবেই বিস্তর ফারাক রয়েছে। কোনও দলিল-প্রমাণ ছাড়া অনর্থক কারও সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে তাই ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে।

 

এই বিষয়ে পবিত্র কুরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা  ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক রকম  অনুমান থেকেই বেঁচে থাকো। কেননা, কিছু কিছু অনুমান গুনাহের কারণ হয়।’  (সূরা হুজরাত, আয়াত : ১২)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি রহ. উল্লেখ করেছেন, ‘পবিত্র কুরআনে যে অনুমান করতে নিষেধ করা হয়েছে, তা হচ্ছে অন্যের সম্পর্কে মন্দ ধারণা ও অপবাদ দেওয়া। যে মন্দ বিষয়ের কোনও প্রমাণ নেই, সেই বিষয়ে কেবলই অনুমানের ওপর ভর করে কিছু বলে দেওয়াকেই এই আয়াতে বারণ করা হয়েছে। যেমন- কাউকে কোনও অশ্লীল বিষয়ে কিংবা মদ্যপানে অভিযুক্ত করা।’

 

আয়াতের দ্বিতীয় অংশ থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়।  অনুমান থেকে বেঁচে থাকার আদেশ দেওয়ার পর আল্লাহ্তায়ালা এর কারণ বলে দিয়েছেন এভাবে-কিছু কিছু অনুমান গুনাহের কারণ হয়। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, মন্দ ধারণা ও অনুমানই গীবত-পরনিন্দা-মিথ্যা অপবাদের মতো জঘন্য গুনাহের পথ করে দেয়।

 

 

কারও সম্পর্কে যদি স্পষ্টভাবে জানা যায়, সে কোনও পাপকাজে জড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু সেই ব্যক্তি তা প্রকাশ করেনি এবং প্রকাশ করাকে সে পছন্দও করছে না, তাহলে সে পাপের কথা বলে বেড়ানোই তো মৃত ভায়ের মাংস খাওয়ার মতো অপরাধ! এই থেকেই বোঝা যায়, যদি কারও দোষ বলাটা শুধুই ধারণা-নির্ভর হয়, তাহলে তা কত ঘৃণিত কাজ হবে!

 

হাদিস শরিফেও এই ধরনের অনর্থক মন্দ ধারণা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন- বুখারী ও মুসলিম শরিফের এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা মন্দ ধারণা  থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, মন্দ ধারণাই হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য মিথাচার।’ (সহিহ মুসলিম শরিফ, হাদিস নং : ৬৭০১)

অনেক সময় মন্দ ধারণা ব্যক্তি, পরিবার এমনকি সমাজে মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনে। উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. একবার শিকার হয়েছিলেন এই মন্দ ধারণার। হৃদয়বিদারক সেই ঘটনা বর্ণিত হয়েছে বুখারী শরিফসহ হাদিসের আরও অনেক কিতাবে।

 

ষষ্ঠ হিজরিতে রাসূলে কারিম সা. এক যুদ্ধ শেষে মদিনায় ফিরছিলেন। সঙ্গে হযরত আয়েশা রা. ছিলেন। রাতের বেলা পথ চলার এক পর্যায়ে এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলেন। কিন্তু সকালবেলা যখন কাফেলা আবার চলতে শুরু করল, তখন ঘটনাক্রমে সবার অজান্তে কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন নবী-পত্নী হযরত আয়েশা রা.। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাঁর সম্পর্কে সম্পূর্ণ অমূলকভাবে একটি মন্দ কথা রটিয়ে দেয় এবং তার প্ররোচনায় কয়েকজন মুসলমানও এতে অংশ নেয়।

এই ঘটনায় মদিনা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। অবশেষে মহিয়সী এই নারীর পবিত্রতা আল্লাহতায়ালা  জানিয়ে দেন ওহির মাধ্যমে। পাশাপাশি তিনি মুমিনদেরকে পারস্পরিক ভালো ধারণা পোষণ করতে আদেশ করেন। এই প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা  যখন একথা শুনেছিলে, তখন কেন এমন হল না যে, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণ নিজেদের সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করত এবং বলে দিত, এটা সুস্পষ্ট মিথ্যা?’ (সূরা নূর, আয়াত : ১২)

 

সূরা হুজরাতের যে আয়াতে মন্দ ধারণা করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেটা যেমন মুমিনদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তেমনি তা আল্লাহ্তায়ালার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ কোনও মুমিন যেন আল্লাহ্তায়ালা সম্পর্কেও খারাপ ধারণা পোষণ না করে। যেমন- কেউ মনে করল বা বলল, আল্লাহ্ আমার ওপর কিছুতেই অনুগ্রহ করবেন  না কিংবা আল্লাহ্ আমাকে তো কেবল শাস্তিই দেবেন। এভাবে পরম দয়ালু আল্লাহ্কে কেবল নির্দয় মনে করা এবং তার অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ।

 

 

অপরাধ যত বড়ই হোক না কেন, কেউ যদি মন থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ্ সেই অপরাধ  ক্ষমা করেন। তাকে সিক্ত করেন করুণা ও অনুগ্রহের বারিধারায়। প্রতিটি মুমিনকে দৃঢ়ভাবে আল্লাহর প্রতিটি  গুণে পূর্ণ আস্থার সঙ্গে বিশ্বাস রাখতে হবে। এর ব্যতিক্রম করা আল্লাহ্ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করারই নামান্তর। তাই হযরত রাসূলে কারিম সা. বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন আল্লাহ্ সম্পর্কে ভালো  ধারণা না নিয়ে মৃত্যুবরণ না করে।’ (সহিহ মুসলিম)

Leave a comment