আবদুল ওদুদ
সপ্তাহ দুয়েক বাদেই রয়েছে পয়লা বৈশাখ। এর পর আরও ২ সপ্তাহ পরেই রয়েছে পবিত্র রমযান মাস শেষে ঈদ-উল-ফিতর । অর্থাৎ এক মাসের মধ্যে দু’দুটি উৎসব পেতে চলেছে বাংলার মানুষ। পর পর দুটি উৎসবকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, কলকাতার তথা উপমহাদেশের পোশাক শিল্পের অন্যতম কেন্দ্র মেটিয়াবুরুজ। আর তাতেই হাসি ফুটছে মেটিয়াবুরুজ সহ পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের। করোনা পরিস্থিতি থেকে অনেকটাই রেহাই পেয়েছে বাংলার মানুষ।
গত ২ বছর পয়লা বৈশাখ, ঈদ কিংবা দূর্গাপুজো কোন উৎসবই সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি বাংলার উৎসব মুখর মানুষ। এবছর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে মেটিয়াবুরুজের ওস্তাগার থেকে শুরু করে কারিগর এবং হাট মালিকরা।
মেটিয়াবুরুজ-এর প্রখ্যাত ব্যবসায়ী তথা হ্যাপি ড্রেসেসের কর্ণধার সাজাহান আলি মোল্লা পুবের কলমকে জানান, ‘আলহামদুল্লিলাহ’, ব্যবসা আগের থেকে অনেকটা ভালো। বিভিন্ন জেলা এবং জেলার বাইরে থেকে প্রচুর অর্ডার আসছে। পয়লা বৈশাখের যেমন অর্ডার আসছে, তেমনি ঈদ-উল ফিতর’-উৎসবেরও প্রচুর অর্ডার আসছে। তিনি বলেন, গত দু’বছর স্বাভাবিকভাবে মানুষ ঈদ-উদযাপন করতে পারেননি। এবার আল্লাহর রহমতে মনে হচ্ছে সব ঠিকঠাক আছে। কাজেই মানুষ আগের মতোই উৎসবে সামিল হতে পারবেন। মানুষ আবার নতুন পোশাক পরিধান করে ঈদগাহে ইদের নামায আদায় করতে যেতে পারবেন। তাই গ্রাম গঞ্জ থেকে বহু ক্রেতা গদিতে এসে অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার ফোনেই অর্ডার করছেন। পয়লা বৈশাখের থেকে ঈদের বাজারের অর্ডার বেশি আসছে বলে তিনি জানান।
হাওড়ার অঙ্গুরহাটিতে রয়েছে লালী গারমেন্টস। এই কোম্পানীর পোশাক বেশির ভাগই বাংলাদেশে রফতানী হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও, ওড়িষা, অসম, অন্ধ্র প্রদেশে বিপুল পরিমাণে পোশাক যায়। লালী গারমেন্টের কর্ণধার সে’ গিয়াসউদ্দিন জানান, তাদের কোম্পানীতে মূলত মেয়েদের পোশাক তৈরি হয়।
তিনি জানান, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ব্যবসা ২০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর অর্ডার আসছে। ওড়িষা, অসম এবং অন্ধ্র প্রদেশ থেকেও অর্ডার আসছে। আশা করছি ঈদ উপলক্ষে ফের রাজ্যের পোশাক শিল্প অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াবে। আর নতুন করে বাঁচবে কারিগর থেকে শুরু করে ঠেলাওয়ালা, আয়রনম্যান, কাটিং মাস্টারসহ পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্তসকলেই ।
মেটিয়াবুরুজে কাজ করতে আসেন জয় নগরের একরামুল সে’। পেশায় তিনি কাটিং মাস্টার। লক ডাউনে কাজ না থাকায় নানা সমস্যায় পড়েছিলেন। এ’ন কাজ শুরু হওয়ায় বেজায় খুশি তিনি । তাদের কারখানায় কাজের অর্ডার পাওয়ায় বাড়ি যাওয়ার সময় পাচ্ছেন না। তিনি জানান, বছরের অধিকাংশ সময়ই বসে থাকতে হয়, এবার কাজের বাজার একটু ভালো, তাই বাড়ি না গিয়ে কাজ করে চলেছেন।
হাওড়ার নিবড়ার প্রখ্যাত পাঞ্জাবী প্রস্তুতকারী সংস্থা রাজ ড্রেসেস। বিভিন্ন ধরনের পাঞ্জাবী তৈরি করে থাকে এই সংস্থাটি। রাজ ড্রেসেসের কর্ণধার জুল্লু রহমান জানান ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের বেশ সাড়া মিলছে। জেলা থেকে অর্ডার আসছে। তাদের কোম্পানীর শোরুম এবং গদিতে অর্ডারও আসছে। জুল্লু রহমান জানান, বর্তমানে করোনা প্রভাব থেকে অনেকটাই মুক্ত। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলে আশায় বুক বাঁধছেন। তিনি বলেন, ঈদে পাঞ্জাবীর বাজার বরাবরই ভালো। দু বছর করোনার কারনে মনের মতো পোশাক পরিধান করে ঈদগাহে উপস্থিত হতে পারেননি । এবার রমযান শেষে নতুন পোশাক পড়ে ঈদগাহে ঈদের জামাতে শামিল হতে পারবেন।