মনিরুল মন্ডল, নদিয়াঃ হাজী মুহাম্মদ মুহসীন এ দেশে শিক্ষা, সামাজিক ও দাতব্য কর্মকাণ্ডে শীর্ষে থাকা অন্যতম এক নাম। ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারে ব্যয় করার জন্য ‘দানবীর’ হিসাবে খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। কেবলমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশেই নয়, সামগ্রিকভাবে বিশ্বে তাঁর মতো দানশীল ব্যক্তিত্বের দেখা খুব কমই মেলে। এ দেশের হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সামগ্রিকভাবে হাজী মুহাম্মদ মহসীনের দানে সমৃদ্ধ হয়েছে।
শিক্ষাজীবন শেষ করে শিক্ষার্জিত জ্ঞানকে আরও উন্নত করার তাগিদে বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন তিনি। শিক্ষানুরাগী, মহান দাতা ও সমাজ সংস্কারক এই মনীষী প্রচুর সম্পত্তির অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক এবং নিরহংকারী। খুব সহজ-সরল জীবনযাত্রার মধ্য দিয়ে তিনি মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন।
হাজী মুহাম্মদ মহসীন যেভাবে দানপত্র লিখেছিলেন, তাতে কিছু পরিবর্তন এনে ব্রিটিশরা দু’টি আলাদা তহবিল গঠন করে। তার একটিতে হাজী মহসীনের ইচ্ছা অনুযায়ী ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যয়, আরেকটি ফান্ড থেকে শিক্ষাখাতে ব্যয় করা হয়।পরবর্তীতে এই তহবিল থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় হুগলি মহসীন কলেজ। এই কলেজের ছাত্র ছিলেন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এ ছাড়াও হুগলি কলেজিয়েট স্কুল, হুগলি মাদ্রাসা, সীতাপুর মাদ্রাসা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। এই তহবিল থেকে একটি শিক্ষাবৃত্তিও চালু করা হয়, যা দরিদ্র-মেধাবী পড়ুয়াদের জন্য আজও অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে।
হাজী মুহাম্মদ মহসীনের যে বিপুল কর্মকাণ্ড এবং অবদান তা নিয়ে আরও গবেষণা ও চর্চা হওয়া দরকার। কেননা, বর্তমান প্রজন্ম তাঁকে সেভাবে মনে রাখেনি। গত ২৯ নভেম্বর ছিল এই মনীষীর ২১১তম মৃত্যু দিবস। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, দৈনিক পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন মনীষীদের জন্ম-মৃত্যুর দিনগুলিতে তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ করা হলেও হাজী মুহাম্মদ মহসীন সম্পর্কে তেমন কোনও নিবন্ধ চোখে পড়েনি।