মোল্লা জসিমউদ্দিনঃ ফের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই কে নিয়ে আদালতে উঠলো প্রশ্নচিহ্ন। ‘কালীঘাটের কাকু’র গ্রেপ্তারি ইস্যুতে নিম্ন আদালতের প্রশ্নের মুখে সিবিআই। কেন জেলে গিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? সোমবার এই মামলার শুনানি পর্বে সিবিআইকে প্রশ্ন বিচারকের। এদিন পঞ্চমবার আদালতের হাজিরা এড়ান ‘কালীঘাটের কাকু’।
বিচারক জানান, -‘কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা চাইলে সোমবারই জেলে গিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখে গ্রেপ্তার করতে পারে’।এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’।প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র অর্থাৎ কালীঘাটের কাকুকে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জামিনের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিযুক্ত । গত মাসেই শেষ হয় শুনানি।
গত শুক্রবার তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ। তবে অন্য মামলাও রয়েছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের। সিবিআইয়ের একটি মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিনের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। তা মঞ্জুর হলেই জেলমুক্তি। আর না হলে গ্রেপ্তারির আশঙ্কা রয়েছে। তবে শারীরিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে বারবার আদালতে হাজিরা এড়াচ্ছেন ‘কালীঘাটের কাকু’।
মেডিক্যাল সার্টিফিকেটও জমা দিয়েছেন তিনি। এদিন আদালতে ফের নতুন করে প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের আবেদন জানায় সিবিআই। জেল কর্তৃপক্ষকে ভারচুয়াল হাজিরার ব্যবস্থা করার আর্জি জানায়। তাতেই বিরক্ত হন বিচারক। বিচারক প্রশ্ন করেন, শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে বার বার হাজিরা এড়ালেও কেন জেলে যাচ্ছে না সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকরা। প্রয়োজনে সোমবারই জেলে গিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হোক, বলেও জানান বিচারক।
তবে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ইতিমধ্যেই আগাম জামিনের আবেদন করে রেখেছেন। সেকথাই আদালতে উল্লেখ করেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক। তবে বিচারক জানান, -‘আগাম জামিনের আবেদন করা থাকলেও, গ্রেপ্তারিতে কোনও বাধা নেই। তবে বার বার ভারচুয়ালি ‘কালীঘাটের কাকু’কে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানান সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক। তাতেই কিছুটা বিরক্ত হন বিচারক। কেন জেলে গিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না
‘কালীঘাটের কাকু’কে, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন তিনি। ইডির মামলায় জামিন পেয়েছেন ‘কালীঘাটের কাকু’। সেক্ষেত্রে তাঁকে অন্য মামলায় প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু করা যায় কিনা? সে বিষয়ে আইন খতিয়ে দেখতে হবে বলেই জানান বিচারক।সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে জেরা করতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু এই আবেদনে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর জবাবে সুজয় কৃষ্ণের আইনজীবী আদালতে জানান, -‘ তিনি আদালতে উপস্থিত হতে পারছেন না।
সেই কারণে জেলের জেল সুপারিন্টেন্ডের তরফে সিবিআইকে জানানো হয়েছে যে, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ।এই কথা শুনে বিচারক বলেন, “সুজয় কৃষ্ণ যদি শারীরিক অসুস্থতার জন্য বারংবার আদালতে উপস্থিত হতে না পারে, তাহলে আপনারা পেপার অ্যারেস্টের জন্য জেলে যান এবং তাঁকে গ্রেফতার করুন। তারপর প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের জন্য এখানে আসুন।” একইসঙ্গে বিচারক তদন্তকারী অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি কেন জেলে গেলেন না? কীসের জন্য অপেক্ষা করছেন? সুজয় কৃষ্ণকে ফরমাল অ্যারেস্ট করতে পারতেন। আজ কি কোনও সমস্যা আছে জেলে গিয়ে ওকে অ্যারেস্ট করতে?
এই মামলায় কিন্তু উনি গ্রেফতার হননি।”এরই মাঝে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, সুজয় কৃষ্ণর অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। সেই মামলা শুনানি রয়েছে। একথা শুনে বিচারক বলেন, “আপনাদের যখন ক্ষমতা আছে তখন কেন আপনারা জেলে গেলেন না? বারবার এখানে এসে কেন প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের আর্জি জানাচ্ছেন? কে বলেছে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মামলা পেন্ডিং থাকলে সুজয় কৃষ্ণকে গ্রেফতার করা যাবে না?
চারবার আপনারা প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের আবেদন করেছেন। কিন্তু জেল থেকে সেটাকে তো এন্টারটেইন করা হয়নি। এটা পঞ্চমবার।” শেষমেশ মামলার শুনানির সময় বিচারক বলেন, “আমি সব দিকটা দেখব তারপর অর্ডার দেব। প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট এক্ষেত্রে আদতেই কার্যকরী হবে কিনা সেটাই প্রশ্ন।”