Fri, September 20, 2024

ই-পেপার দেখুন

মিসলেনিয়াস প্রিলিম, শেষ মুহূর্তের টিপস

ইমামা খাতুন

Published: 14 September, 2024, 03:54 PM
মিসলেনিয়াস প্রিলিম, শেষ মুহূর্তের টিপস

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর মিসলেনিয়াস ২০২৩ প্রিলিম পরীক্ষা। দুপুর বারোটা থেকে দেড়টা। দেড় ঘন্টার এই পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে, প্রতিটি প্রশ্নের মান ২। মিসলেনিয়াস ২০১৮ প্রিলি পরীক্ষায় পাস করেছিল ১২৪৮০ জন, কাট অফ ছিল জেনারেল এবং ওবিসি (বি) এর ক্ষেত্রে ১০৩.৩৩, ওবিসি (এ) এর ক্ষেত্রে ৯৯.৩৩। মিসলেনিয়াস ২০১৯ প্রিলি পরীক্ষায় পাশ করে ৪৪০৭ জন, কাট অফ ছিল জেনারেলদের ক্ষেত্রে ১১৬.৬৬, ওবিসি (এ)-১০৬.০০ এবং ওবিসি (বি)- ১১১.৩১। এই পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের টিপস নিয়ে আলোচনা করেছেন রাজ্যপণ্য ও পরিষেবা কর দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার শামীম সরকার

 

পিএসসির মাধ্যমে যথেষ্ঠ সংখ্যক সরকারি অফিসার নিয়োগ হয়  মিসলেনিয়াস সার্ভিসেস এক্সাম-এর মাধ্যমে। মিসলেনিয়াস এক্সামের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের গ্রুপ বি সার্ভিসের পদগুলিতে নিয়োগ হয়। পদোন্নতি, চাকরীর স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা, বেতনক্রম ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার নিরিখে এই সার্ভিসের চাকরী যথেষ্ট আকর্ষনীয়। ২০১৮ মিসলেনিয়াসে ভেকেন্সি ছিল ১৫৫১, ২০১৯ মিসলেনিয়াস ভেকেন্সি ৪৮২। যদিও এবছর ভ্যাকেন্সি সংখ্যা নোটিফিকেশনে জানানো হয়নি, আশা করা যাচ্ছে সাতশোর মতো শূন্যপদ থাকবে। কারণ এই সার্ভিসে মোট ১৯টি পদ বা সার্ভিস রয়েছে, যেগুলি রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক কার্যকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার বছর পর আবার মিসলেনিয়াস পরীক্ষা নিতে চলেছে রবিবার। অন্যান্য পরীক্ষার মতো মিসলেনিয়াস প্রিলিও এক ছাঁটাই পরীক্ষা। প্রিলিতে প্রাপ্ত নম্বর ক্যারি মেইন পরীক্ষায় ক্যারি ফরোয়ার্ড হয় না, শুধুমাত্র পাশ করলেই চলে। প্রিলিতে সাফল্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নীচে আলোচনা করা হল-

ও.এম.আর. শীট প্রথমে ফিলাপ করার সময় মাথা ঠান্ডা রেখে ফিলাপ করতে হবে। মনে রাখতে হবে এখানে কোন ভুল হলে পুরো পরীক্ষাটা দেওয়া মাটি হয়ে যাবে। বিশেষ করে রোল নাম্বার এবং কোশ্চেন বুকলেট সিরিজ এই দুটো ফিলাপ করার সময় যেন ফোকাস অন্য কোনোদিকে না থাকে, কারণ এই দুটো ভুল মানে পরীক্ষা ওখানেই শেষ।

শেষ দুবারের ট্রেন্ড থেকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যে স্ট্যাটিক জিকে থেকে প্রায় ১৮-২২ টির মত, কারেন্ট টপিক থেকে ৮-১২টির মত, বিজ্ঞান থেকে ২০-২২ টি, ইতিহাস থেকে ৫-৬ টি, ভূগোল থেকে ৭-৮ টি ও ভারতীয় সংবিধান থেকে ৭-৮টি প্রশ্ন এসেছে। মোটের উপরে প্রশ্ন এসেছে এই ৬টি বিষয় থেকে। সাথে অ্যারিথমেটিক এর ২৫টি প্রশ্ন তো আছেই যেগুলো মূলত এসেছে পাটিগণিত এর ১২-১৩ টি চ্যাপ্টার এর মধ্য থেকেই।

পরীক্ষার শেষ লগ্নে ও.এম.আর শীট একেবারে ১০০টি উত্তর ডারকেনিং করা উচিত নয়। এখানে ভুল হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। সবথেকে ভাল পদ্ধতি হল এক একটি পাতায় প্রথমে সঠিক উত্তরগুলি দাগ দিয়ে নেওয়া এবং তারপরে সেই পাতার ঠিক উত্তরগুলি ডারকেনিং করা।

একটি কথা মনে রাখতে হবে যে,

এখানে থাকবে ১০০টি প্রশ্ন কিন্তু প্রত্যেকটির জন্য ২ নম্বর করে বরাদ্দ থাকবে। অর্থাৎ মোট ২০০ নম্বরের জন্য ১০০টি প্রশ্ন থাকবে। ১০০টি প্রশ্নের উত্তর করার জন্য দেড় ঘন্টা যথেষ্ট সময়, তাই ধীরে সুস্থে উত্তর করা প্রয়োজন।

এবারে নেগেটিভ মার্কিং এ একটু পরিবর্তন হয়েছে। একটি ভুল উত্তর করার জন্য ০.৫০ নাম্বার কাটা যাবে। তাই সেক্ষেত্রে গত বারের তুলনায় অ্যাটেম্পট করার সুযোগ বেশি থাকবে যেহেতু নেগেটিভ মার্কিং কমেছে। নিজেকে উজার করে সেরাটা দিয়ে আসতে হবে পিএসসির ওএমআর সিটে, চিন্তা ভাবনায়, কাজে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে, পজেটিভ থাকতে হবে। তাহলে নেগেটিভের ভূত কাছে ঘেঁষতে পারবেনা।

পাশের পরীক্ষার্থী যতই বিশ্বস্ত হোক না কেনো, তার কোন কথা শুনে উত্তর না করাই শ্রেয়। এতে লাভের থেকে ক্ষতিই বেশি হয়। নেগেটিভের চক্করে পড়ার সম্ভবনা থাকে।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে প্রশ্নগুলির উত্তর সম্পর্কে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত সেগুলি আগে উত্তর করা উচিত। ১০০ শতাংশ নিশ্চিত উত্তরগুলি শেষ হলে যদি দেখা যায় ১২০+ স্কোর হচ্ছে তাহলে প্রিলিমিনারি কোয়ালিফাই করার সম্ভাবনা প্রায় ৮০ শতাংশ।

এরপরে যেখানে দুটি অপশন নিয়ে কনফিউসন আছে, অর্থাৎ যেখানে বাকি দুটি অপশন এলিমিনেট করা যায় সেটাকে টার্গেট করতে হবে। তবুও ক্ষান্ত দিলে হবে না, জানা থাকলে উত্তর করতে হবে বেশি করে।

সর্বশেষে পুরোপুরি নিজের রিস্কে

৩:১ প্রশ্নগুলি উত্তর করা উচিত। এখানে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি এবং দেখা গেছে এই অংশের জন্যই অনেকে ঠিক উত্তর করেও মারাত্মক রকম নেগেটিভের কারণে কোয়ালিফাই করেনি, তাই এই জোন কে বলা হয়জোন অফ ডেথ

পরীক্ষার শেষ ৩০ মিনিট খুব ত্রুসিয়াল। এই সময়টাতে নেগেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি। কারণ এই সময়ে একদিকে যেমন স্পিডে উত্তর করতে হয়, অন্যদিকে ডাউটফুল প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। অপরদিকে তেমন পরীক্ষার গৃহে ডিস্টার্বেন্সের মাত্রা থাকে অনেক বেশি। এই সময়টাকে অতি অবশ্যই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এই সময়ে অধিক মাত্রায় মনোযোগী থাকতে হবে, শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হবে, মানসিকভাবে সতর্ক থাকতে হবে।

যেহেতু প্রিলিম পাসের জন্য সব প্রশ্নের উত্তর করার প্রয়োজন পড়ে না। তাই কুড়ি পঁচিশটি প্রশ্ন যদি টাফ হয় তবে কিছু যায় আসে না। শুধুমাত্র মিডিয়াম এবং সহজ প্রশ্নগুলোকে অ্যাটেন্ড করেই প্রিলি পাস করা সম্ভব।

আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে যতই আড়াই লাখ বা তিন লাখ ছেলে-মেয়ে পরীক্ষা দিক কম্পিটিশন কিন্তু সেই ৪০০০০ থেকে ৫০০০০ ছেলে-মেয়ের মধ্যেই থাকবে, তাই এই পরীক্ষা নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

এমন কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী যেটির সবকটি অপশনই ভুল। উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটি বোঝানো যেতে পারে। জানতে চাওয়া হতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বর্তমান গভর্নর কে। হয়তো পরীক্ষার সপ্তাহ খানেক আগে নতুন কেউ গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে প্রার্থীর অ্যাপ্রোচ কি হবে? সে কি প্রশ্নটি ছেড়ে দিয়ে আসবে? এক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে, যদি কোনটিই নয়অপশনটি থাকে তবে সেটিই সঠিক উত্তর হবে। যদি তা না থাকে তবে সর্বশেষ পদাধিকারীর নামটিকে উত্তর করে আসা যুক্তিসঙ্গত হবে।

এমন কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে সেটির একাধিক উত্তর সঠিক। এক্ষেত্রে সর্বাধিক সঠিক এবং স্পেসিফিক উত্তরটি দাগাতে হবে। যদি এমন প্রশ্ন আসে ক্রসিং ওভার কখন ঘটেএবং যদি অপশন এমন থাকে মিয়োসিসে’, ‘প্রফেজেও প্যাকাইটিন উপদশায়সব কটি অপশনই এখানে সঠিক। প্রার্থীরা সঠিক উত্তরটি নিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারে। নেগেটিভের ভয়ে উত্তর জানা সত্ত্বেও প্রশ্নটি ছেড়ে আসতে পারে। এক্ষেত্রে স্পেসিফিক উত্তরটি অর্থাৎ প্যাকাইটিনউত্তর করা উচিত।

প্রশ্নপত্র যতই কঠিন হোক না কেন পরীক্ষার সময় শুধু শুধু চাপ নেওয়া চলবে না। মনে রাখতে হবে তোমার কাছে যেটি কঠিন অপরের কাছেও সেটি ততটাই কঠিন। কোচবিহার টু কাকদ্বীপরাজ্যব্যাপী সবাই একই প্রশ্নে পরীক্ষা দেবে। তাই প্রশ্ন কঠিন হওয়ার অর্থ কাট অফ মার্কস কমে যাওয়া। তাই কঠিন প্রশ্নপত্রে ঘাবড়ে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় উত্তর করতে হবে। বেশী অ্যাটেম্পট্ না করতে পারার চাপে আন্দাজে উত্তর করা উচিত হবে না।

অপরপক্ষে প্রশ্নপত্র আবার খুব সহজও হতে পারে। এক্ষেত্রে কোন এক মুহুর্তের জন্যও আত্মতুষ্ট হলে চলবে না, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হলে তো সমুহ বিপদ। সহজ প্রশ্নে কাট অফ স্বভাবতই বাড়বে, তাই বেশী বেশী উত্তর করে নিজের স্কোরকে ধরাছোঁয়ার উর্দ্ধে রাখতে হবে। কচ্ছপ ও খরগোশের গল্পটা নিশ্চয়ই মনে আছে। এক মুহুর্তের ঢিলেমি ব্যর্থতার কারণ হতে পারে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী মেনসের টিকিটের জন্য লড়াই করছে, তাই প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হবে, লড়াকু মানসিকতা বজায় রাখতে হবে।

১৫ই সেপ্টেম্বর এক সুবর্ণ সুযোগ তোমাদের সামনে। শেষ বলে যদি ছক্কা হাঁকাতে পারো তবে তুমি হিরো, সাফল্যের নতুন অধ্যায় লেখা হবে তোমার নামে। তোমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, তোমার অফিসার হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসর হবে তুমি। একবার প্রিলি পাস করলে যে কনফিডেন্স লাভ করা যায় তাতে অফিসার হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। তোমাদের মধ্যে সাফল্য পাওয়ার সকল রকমের রসদও যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ আছে। তোমরা শুধু তোমাদের নামের প্রতি সুবিচার করো। তোমাদের সেরাটা দিয়ে এসো পরীক্ষার খাতায়। প্রস্তুতি ধৈর্য্য, অধ্যাবসায় এবং দারুন একটা পারফর্মেন্স যে সাফল্য ছিনিয়ে আনবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেহ। 

Leave a comment