পুবের কলম প্রতিবেদকঃ প্রয়াত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আজ বেঁচে থাকলে হয়তো তাঁর লেখা বিখ্যাত কবিতার ততোধিক বিখ্যাত পংক্তি ‘কেউ কথা রাখেনি’ বদলাতে সম্ভবত বাধ্য হতেন। কেন-না বাংলায় এমন একজন রয়েছেন– যিনি কথা দিলে কথা রাখেন। যাঁর মানবিকতার নজির মেলা ভার। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েই ‘অন্নদাতাদের’ জন্য নতুন করে চালু করেছিলেন ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্প। সেইসঙ্গে অসহায় অন্নদাতাদের বিশেষ ভাতা দ্বিগুণ করেছিলেন। গত ১১ জুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন– জুলাইয়ের প্রথম দিকেই কৃষকদের ব্যাঙ্ক খাতায় জমা পড়ে যাবে প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি মেনে শনিবারের মধ্যেই রাজ্যের ৬১ লক্ষ ২১ হাজার ৮৮০ জন কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে। আবেদন অনুযায়ী কোনও ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পেয়েছেন বাংলার কৃষকরা। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই কৃষকদের অ্যাকাউন্টে দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও পৌঁছে যাবে বলে রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন।
সিঙ্গুর হোক কিংবা নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন বরাবরই অসহায় অন্নদাতাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন মানবিক ও ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে পরিচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় একাধিকবার নিজের জীবনকেও বাজি রেখেছেন। মোদি সরকারের ‘সর্বনাশা’ কৃষি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে বাংলার ক্ষমতা দখলের জন্য কৃষকদের ‘প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি’ প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডারা। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি বাংলার অন্নদাতারা। বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিই আস্থা রেখেছিলেন।
তাঁদের বিশ্বাসের মর্যাদা রেখে রাজ্যে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে নতুন করে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্প শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক লহমায় কৃষকদের বিশেষ ভাতা দ্বিগুন করে দিয়েছেন। এক একর কিংবা তার বেশি জমির মালিকদের জন্য বার্ষিক ১০ হাজার টাকা ও এক একরের নিচে জমি থাকা কৃষকদের জন্য বছরে ৪ হাজার টাকা করে বিশেষ ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। শুধু তাই নয় বাংলার মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর কৃপাদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হননি ক্ষেতমজুর ও ভাগচাষিরাও। তাদের জন্যও বিশেষ ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। তাছাড়া প্রকল্পের আওতাধীন কোনও কৃষক মারা গেলে তাঁর পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যেই ৪৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রেখেছে রাজ্য সরকার।
নতুন করে চালু হওয়া ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের সুবিধা যাতে বাংলার কৃষক– ভাগচাষি ও ক্ষেতমজুররা নেন– সেই আর্জিও রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সেই আর্জিতে বিপুল সাড়া পাওয়া গিয়েছে বলে রাজ্যের কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন। তাঁর কথায়– ‘এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬২ লক্ষ কৃষককে প্রথম কিস্তির সাহায্য পাঠানো হয়েছে। আগামী কয়েক মাসে নতুন করে প্রকল্পের আওতায় আসার জন্য আরও ৫ লক্ষ কৃষক আবেদন করতে পারেন বলে অনুমান করছি।’