দেরাদুন: উত্তরপ্রদেশে সম্ভল জামা মসজিদ নিয়ে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও চরম উত্তেজনার খবর যখন সংসদে পৌঁছে গেল সেই সময় উত্তরাখণ্ডের আরও একটি মসজিদ নিয়ে উদ্বিগ্ন হাইকোর্টকে নির্দেশ দিতে হল যে কোনও মূল্যে মসজিদকে রক্ষা করুন। সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে এই নির্দেশ দিল অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি মনোজ কুমার এবং বিচারপতি রাকেশ থাপলিওয়ালের বেঞ্চ। জেলা শাসক, পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই মসজিদকে কেন্দ্র করে যেন কোনও গোলযোগ সৃষ্টি না হয় সেদিকে কঠোর ভাবে নজর রাখতে হবে। হাইকোর্ট জানায়, ভারত গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে পুরোহিততন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র চলতে পারে না। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৭ নভেম্বর।
উত্তরাখণ্ডের অল্প সংখ্যক সেবা সমিতি নামে একটি সংস্থা হাইকোর্টে আসে এই মসজিদটিকে বাঁচাবার আর্জি নিয়ে। কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীরা এই মসজিদ ভেঙে দেওয়ার দাবি নিয়ে আন্দোলন করে চলেছে লাগাতার। তাদের দাবি সরকারি জমি দখল করে বেআইনি ভাবে নির্মিত হয়েছে এই মসজিদ। তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে এই নিয়ে ব্যাপক বিদ্বেষ প্রচার করে জনমত গঠন করেছে, মিথ্যা খবরও ছড়ানো হচ্ছে তাদের পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যে একবার হিংসার ঘটনাও ঘটেছে মসজিদ ভাঙার দাবি নিয়ে মিছিলে। আগামী ১ ডিসেম্বর আবার মহাপঞ্চায়েতের ডাক দিয়েছে তারা। বিশাল জনসমাবেশ ঘটিয়ে মসজিদ ভাঙার দাবিতে আরও উত্তেজনা ছড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাই এলাকার উদ্বিগ্ন মুসলিমরা শেষ ভরসা হিসেবে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।
হাইকোর্টে আবেদনকারী সংস্থার সভাপতি মুশারফ আলি ও ইসতিয়াক আহমদ জানিয়েছেন, এই মসজিদটি ১৯৬৯ সালে নির্মিত হয়েছে ইসতিয়াক আহমেদের পিতার দান করা জমিতে। এটি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে রেজিস্টার্ড। সুন্নি মুসলিমরা সেই থেকে এখানে নামায আদায় করে আসছেন বিনা উপদ্রবে। এটা সরকারি জমিতে তৈরি নয়, আর না এটা বেআইনিভাবে নির্মিত হয়েছে।
সংযুক্ত সনাতন ধর্ম রক্ষা সংঘ নাম দিয়ে এক সংস্থা তৈরি হয়েছে যারা এই মসজিদে বুলডোজার চালানো নিয়ে পথে নেমেছে। স্থানীয় প্রশাসন এই মসজিদটি রক্ষা করতে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না। তাই যে কেনও সময় শহিদ হতে পারে এই মসজিদটি যদি হাইকোর্ট তাড়াতাড়ি হস্তক্ষেপ না করে এই মামলায়। সেই মামলায় শুধু মসজিদ রক্ষা নয়, আশেপাশের এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বিদ্বেষ ভাষণ বন্ধ করার জন্যও পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের এই নির্দেশ দেওয়ার পরও আবেদনকারীরা শংকিত যে রাজ্য সরকারের পুলিশি প্রশাসন মসজিদ বাঁচাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে কিনা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদও ১ ডিসেম্বর মহাপঞ্চায়েতে যোগ দেওয়ার আসার ঘোষণা করে চাপে রেখেছে প্রশাসনকে। তাই উত্তরাখণ্ডের মানুষ তাকিয়ে রয়েছে ২৭ নভেম্বর বুধবার হাইকোর্টের রায়ের দিকে।