নয়াদিল্লি, ১৯ জানুয়ারিঃ ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু বাজেট অধিবেশনেই ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে সংযুক্ত সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি। শনিবার জেপিসির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল পাটনায় বলেন, সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছি চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করার জন্য। বাজেট অধিবেশন ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলেছে। ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করা হবে। এই অধিবেশন চলবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। সেজন্য আমাদের উপর চাপ রয়েছে এই অধিবেশনেই রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
চেয়ারম্যান বলেন, জেপিসির ৩৪টি বৈঠক শুধু দিল্লিতেই হয়েছে। ২০৪ জন প্রতিনিধির সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। সারা দেশে বিভিন্ন রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ড, সংখ্যালঘু কমিশন ও ওয়াকফের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সংলাপ করা হয়েছে। এক্সপার্টদের বিভিন্ন অভিমতও নেওয়া হয়েছে। এবার সেসব চূড়ান্ত রিপোর্ট আকারে পেশ করতে হবে। এই প্রসঙ্গে জগদম্বিকা পাল দু’টি উদাহরণ তুলে ধরলেন মিডিয়ার সামনে।
প্রথমটি কেরলের একটি চার্চ নাকি ওয়াকফ সম্পত্তির উপর তৈরি হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। আর দ্বিতীয়টি বিশাল কুম্ভমেলার যে স্থানে অনুষ্ঠান হচ্ছে সেই ময়দানের একটি অংশে ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এইসব সমস্যার সমাধানের জন্যই এই বিল শীঘ্র পাস হওয়া দরকার। চেয়ারম্যান বিলের সমর্থনে যুক্তি দেখাচ্ছেন ওয়াকফ দুর্নীতি দূর করতে এবং সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার করার জন্যই নাকি এই বিল।
অথচ সংসদে বিরোধীরা আপত্তি জানিয়েছিল, সারা দেশে মহামূল্যবান ওয়াকফ সম্পত্তির উপর সরকারি কবজা কায়েম করার লক্ষ্যেই এই বিল। এই বিলে বোর্ডের ক্ষমতা খর্ব করে সরকারি অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তারাই ঠিক করবে কোনটা ওয়াকফ আর কোনটা ওয়াকফ নয়। এছাড়া বর্তমান ওয়াকফ আইন সংশোধনের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের পরিবর্তে সরকারি আমলারা রায় দেবেন সম্পত্তি নিয়ে সমস্যার ক্ষেত্রে।
সারা দেশের মুসলিম সংগঠন একযোগে এই বিলের বিরোধিতা করতে পথে নেমেছে। পার্সোনাল ল’ বোর্ড, জমিয়তে উলামা, জামায়াতে ইসলামি, জমিয়তে আহলে হাদিস-সহ বিভিন্ন রাজ্যের প্রধান প্রধান মুসলিম সংগঠন এই বিলের জন্য জীবন বাজি রাখার ঘোষণা দিয়েছে। তাই এই বিলের উপর নজর রয়েছে দেশব্যাপী মুসলিম সমাজের। ইতিমধ্যে জেপিসির বিরোধী দলের সদস্য অভিযোগ করেছেন যে, চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল তাদের এড়িয়েই বৈঠক থেকে রিপোর্ট তৈরি সব কাজই করে চলেছেন।
জেপিসির নিয়মকে গুরত্ব দিচ্ছেন না। এই বিলের একটি অক্ষরও বদল না করে তিনি হুবহু পাস করাতে উদগ্রিব বলে মনে করছেন বিরোধীরা। ইতিমধ্যে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিল পেশ করার কথা ছিল, কিন্তু বিরোধী সদস্যদের চাপে পিছিয়ে যায়। এবার বাজেট অধিবেশনে ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে শুধু সংসদে নয়, সংসদের বাইরেও তুমুল বিতর্ক শুরু হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
তবে সবকিছু নির্ভর করছে জেপিসির রিপোর্টের উপর। কেন্দ্র সরকার জেপিসির পরামর্শ মানতে পারে নাও মানতে পারে। তবে সকলের লক্ষ্য সারা দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকের কোনও প্রভাব রিপোর্টে দেখা যায় কি না। আর বিশেষ নজর থাকবে চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমারের দলের দিকে। তারা বেঁকে বসলে এই বিল পাস করা সম্ভব হবে না মোদি সরকারের পক্ষে।