পুবের কলম প্রতিবেদক: কসবাকাণ্ডে এবার রাজ্য সরকারকে কড়া চিঠি দিল কেন্দ্র। বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের চিঠি এসে পৌঁছায় নবান্নে। রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, আগামী দু’দিনের মধ্যে রাজ্য প্রতারণাকাণ্ড নিয়ে কি পদক্ষেপ নিচ্ছে সে বিষয়ে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে কসবাকাণ্ডকে ঘিরে চলছে রাজনৈতিক তরজা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগেই এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনকে চিঠি দিয়েছিলেন। তারপরই বুধবার কসবার ভুয়ো ভ্যাক্সিনকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়ে পাঠালেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী দুদিনের মধ্যে রাজ্যকে এই নিয়ে রিপোর্ট পাঠাতে হবে কেন্দ্রকে। চিঠিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, ‘কসবাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেব কীভাবে এতবড় ফাঁদ পাতলেন। কেন, কোন কারণে এই ঘটনা ঘটল পুরো ব্যাপারটার বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া হোক।
স্বাস্থ্য দফতর মনে করছে এই ঘটনায় ভ্যাক্ষিনের বিশ্বাসযোগ্যতা সাংঘাতিকভাবে ধাক্কা খেতে পারে। সাধারণ মানুষ এই ঘটনার জেরে ভ্যাকসিন নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। আর তাই ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের তদন্তে নেমে ধৃত দেবাঞ্জন দেবের বিষয়ে ঠিক কি কি তথ্য জানা গিয়েছে, তা বিষদে জানার প্রয়োজন রয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ মঙ্গলবার রাজ্যকে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে বেশ কড়া ভাষায় বলা হয়েছে, করোনা টিকাকরণ পদ্ধতি কো-উইন পোর্টালের মাধ্যমে করা উচিত এবং প্রত্যেকটি ডোজ়ের রেকর্ড কো-উইনে থাকা দরকার। যাঁদের টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে তাঁদের একটি করে শংসাপত্র পাওয়ার কথা যদি কেউ করোনা টিকা নেওয়ার পর শংসাপত্র না পান, তাহলে সেই টিকা ভুয়ো বলে উদ্বেগ তৈরি হতেই পারে। একইসঙ্গে এই ধরনের ক্যাম্পগুলি থেকে টিকার নামে যা দেওয়া হচ্ছে, তা আসলে কী, সেই নিয়েও সংশয় জাগছে মানুষের মনে। এই ধরনের ঘটনাগুলির তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রক। রাজ্যকে এই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়ে কেন্দ্র সরকারকে চিঠি দেন। গত শুক্রবার তিনি এই বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রককে চিঠি দেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্রের এমন পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসেই প্রথম দিকে সামনে আসে এই ভুয়ো ভ্যাকসিনের ঘটনা। গেফতার হয় মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেব। প্রতিদিনই তদন্তকারীদের জেরায় তাঁর সম্পর্কে উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য। একে একে বের হচ্ছে দেবাঞ্জনের নতুন নতুন কীর্তি। শুধুমাত্র কসবা নয়, প্রায় মাসখানেক ধরে এমন বহু ভুয়ো ক্যাম্পের আয়োজন করেন দেবাঞ্জন। ইতিমধ্যে তদন্তকারীরা এই ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় কড়া বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, গোটা ঘটনায় কলকাতা পুরসভা ও পুলিশ কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না। এছাড়াও ঘটনায় যুক্ত কেউই রেহাই পাবে না, বলেও জানিয়েছেন তিনি।