পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: দেশে বেআইনিভাবে মুসলিমদের শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বেশ কয়েক বছর আগে এমনটাই মন্তব্য করেছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সেই রিপোর্ট দেখে বেজায় চটেছিল দেশের বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশ। তবে ক্রমান্বয়ে একের পর এক ঘটনা যেন সেই রিপোর্টের সত্যতা প্রমাণ করে দিচ্ছে।
এবার মিরা রোড সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মামলায় জামিনে মুক্তি পেলেন ১৬ মুসলিম ব্যক্তি। বোম্বে হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, অভিযুক্তদের আর আটকে রাখা উচিত হবে না। তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দুর্বল। আর তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনও সত্যতা আজ পর্যন্ত প্রমাণ করা যায়নি। যা তথ্য জমা পড়েছে তা ভিত্তিহীন, দুর্বল।
এদিন একক বেঞ্চের বিচারপতি নিজামুদিন জে. জমাদার বলেন, তপ্ত এলাকায় অভিযুক্তদের কনভয় নিয়ে যাওয়া কোনও মতেই প্রমাণ করে না যে ওনারাই সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে। কোনও কারণ বশত সেখানে যেতে পারেন তারা। সমাবেশের সদস্যদের আক্রমণ করার জন্য পূর্বপরিকল্পনা ছিল এটা কোনও ভাবেই প্রমাণ হচ্ছে না। বলা বাহুল্য, মুম্বইয়ের উপকণ্ঠে থানে জেলার মীরা রোডে সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছিল রামমন্দিরের অনুষ্ঠানের আগের রাতে।
সেই সময় ঘটনার সত্যতা ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পোক্ততা যাচাই না করেই স্থানীয় প্রশাসন বেআইনি তকমা দিয়ে মুসলিমদের বহু দোকান-পাঠ, ঘর-বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। আজ সেই মামলায় অভিযুক্ত ১৬ জন যুবককে জামিন দেয় বোম্বে হাইকোর্ট। প্রায় ১ বছর ধরে জেলবন্দি থাকার পর এতদিন মুক্ত পরিবেশে শ্বাস নিচ্ছে তারা।
উক্ত পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে আইনজীবী, পরিবার এবং সমাজকর্মীরা মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে একতরফা কর্মকাণ্ডের জন্য পুলিশের সমালোচনা করেছেন। ঘটনাপ্রসঙ্গে আইনজীবী শাহিদ আনোয়ার জানান, অভিযুক্তদের সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত থাকার কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ খুঁজে পায়নি আদালত। একপাক্ষিক ভাবেই মামলা চলে গেছে। নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি।
নয়া নগরের বাসিন্দা সাজিদ শেখ বলেন, আমার দুই ছেলেকেই মিরা রোড সহিংসতা মামলায় মিথ্যা অভিযোগে জেলবন্দি করে রেখেছিল। ওদের বিরুদ্ধে পোক্ত কোনও প্রমাণও ছিল না। তারপরেও দিনের পর দিন জেল খাটে। তারা নির্দোষ ছিল, তবুও তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। এখন তাঁদের জামিন দেওয়া হয়েছে। আদালতের এদিনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়।
তবে আমার ছেলেদের জীবনে যে কালো দাগ পড়ল তা কী কখনও মুছে দেওয়া যাবে। ওঁরা পড়াশোনা করতো। এখন কোনও প্রতিষ্ঠান কী ওদের গ্রহণ করবে? কী হবে ওদের ভবিষ্যৎ? মেধাবী ছাত্র থেকে জেল খাটা আসামীতে পরিবর্তন করল, একটি মিথ্যা মামলা। এই ক্ষতি কে পূরণ করবে ?