বিশেষ প্রতিবেদক: নিমতিতা রেল স্টেশনে রেল গেটের কাছে রেললাইনের উপরে বোমা রেখে আতঙ্ক ছড়ানোর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এলাকায় জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে অল ইন্ডিয়া ইমাম-মুয়াজ্জিন নামক সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ঘটনাটি যে কোনও কারণে হোক পুলিশ চেপে দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন উঠেছে, রেল ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন হওয়া সত্ত্বেও এতবড় ঘটনায় এনআইএ তদন্তের উদ্যোগ কেন নেওয়া হচ্ছে না?
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের নিমতিতা রেলস্টেশনের কাছে দফাহাট ছাঁটকাটা পাড়ার সামনে রেললাইনের উপরে বোমা রাখে দুই জঙ্গি বলে অভিযোগ। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে সাগর দাস ও মদন কুণ্ডুকে হাতেনাতে ধরে ফেলে গ্রামবাসীদের একাংশ। রেললাইনের উপরে বোমা রাখার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে oুত ছুটে আসে সুতি থানার পুলিশ। চলে আসে রেলপুলিশের বেশকিছু কর্মীও। বিকেলের দিকে এই ঘটনার সময় এই রেলপথ ধরেই যাওয়ার কথা ছিল ০৫৪৩৪ আজিমগঞ্জ-বারহারোয়া প্যাসেঞ্জার ট্রেন। তারপরেই ছিল ০৩০৯২ আজিমগঞ্জ-সাহেবগঞ্জ প্যাসেঞ্জার। এরপরেই ছিল ১৩৪৩২ নবদ্বীপধাম-বালুরঘাট এক্সপ্রেস।
সূত্রের খবর, বোমা আতঙ্কের খবর পাওয়া মাত্র ট্রেনগুলির চালকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ রেললাইনের ধার থেকে সাগর দাস এবং মদন কুণ্ডুকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রেলপুলিশ লাইনে তল্লাশি করে নতুন করে আর কোনও বিস্ফোরকের হদিশ না পাওয়ায় রেল চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
অন্যদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বোম স্কোয়াড সদস্যদের ছাড়াই পুলিশ বোমাটিকে ভিজিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। যদিও পরে ঘোষণা করা হয় উদ্ধার হওয়া বস্তুটি ভারী কোনও বোমা জাতীয় বিস্ফোরক ছিল না। সূত্রের খবর, পরদিনই সাগর দাস এবং মদন কুণ্ডুকে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দিয়ে তোলা হয় আদালতে। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি পুলিশের কাছ থেকে। এদিকে এসডিপিআই, কংগ্রেস প্রভৃতি রাজনৈতিক দলগুলির স্থানীয় নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলেছেন ট্রেন যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে সাগর দাস এবং মদন কুণ্ডু রেললাইনে বোমা রেখেছিল। জঙ্গিপুর মহকুমা কংগ্রেস সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাস-সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝে রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বড় কোনও দাঙ্গা লাগানোর ছক কষেছিল কি না সেটা সাগর দাস এবং মদন কুণ্ডুকে জেরা করে জানা উচিত ছিল পুলিশের। রেললাইনের উপরে এত বড় ঘটনা ঘটলেও এনআইএ বা রেলের পরবর্তী পদক্ষেপ এ পর্যন্ত না হওয়ায় অনেকেই বিষয়টি ধামাচাপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। সাগর দাস এবং মদন কুণ্ডু কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কি না সেটা পুলিশের তদন্ত করে দেখা উচিত বলে জঙ্গিপুর মহকুমা কংগ্রেস সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাস মন্তব্য করেছেন।
অল ইন্ডিয়া ইমাম-মুয়াজ্জিন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মাওলানা আবদুর রাজ্জাকের মতে, অভিযুক্ত দুই যুবকের রেললাইনে বোমা রাখার ঘটনায় বৃহৎ ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা রয়েছে। ঘটনায় কারা যুক্ত রয়েছেন সেটা পুলিশের খতিয়ে দেখা উচিত। নিমতিতা রেলস্টেশন সংলগ্ন রেললাইনে বোমা রাখার ঘটনার নিরপেক্ষ এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে অল ইন্ডিয়া ইমাম-মুয়াজ্জিন সংগঠনের পক্ষ থেকে।