ইলাহাবাদ, ২ ফেব্রুয়ারিঃ কুম্ভ মেলা চত্বরে মুসলিমদের প্রবেশ ও সেখানে মুসলিমদের দোকান বসানো তথা ব্যবসায়িক কার্যকলাপের উপর কড়া প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই ‘রাষ্ট্র-বিদ্বেষ’ সত্ত্বেও মুসলিমরা যেভাবে মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে কুম্ভে পদপিষ্টের ঘটনায় জখমদের প্রতি যথাসাধ্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাতে আপ্লুত কুম্ভে আসা তীর্থ যাত্রীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসলিমদের এই সেবার ছবি ভাইরাল।
এমনই এক স্বেচ্ছাসেবক ফারহান আলম। রাম শংকর নামে এক তীর্থযাত্রীর ভীড়ের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। ছুটে এসেছিলেন ফারহান। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। রামশংকর জানান, ফারহান না থাকলে তাঁর পক্ষে হয়তো বেঁচে ফেরা সম্ভব ছিল না। তথ্য বলছে, প্রায় ২৫ হাজারের বেশি কুম্ভযাত্রীকে বিপদের সময় পরিষেবা দিয়েছে মুসলিমরা।
খাবার এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি তাঁদের আশ্রয়ের জন্য মসজিদের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল। মুসলিমদের এই আতিথেয়তায় আপ্লুত তীর্থযাত্রীরা। মসজিদের পাশাপাশি একাধিক দরগাহতেও তীর্থযাত্রীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিল মুসলিমরা। অসহায় কুম্ভ তীর্থযাত্রীদের সেখানে চিকিৎসা, খাদ্য সহ বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া হয়েছিল।
তথ্য বলছে, ২৯ জানুয়ারি পদপিষ্টের ঘটনার পর আহতদের আশ্রয় ও সুশ্রুষার জন্য জনসেনগঞ্জ রোড সহ ১০টিরও বেশি এলাকার মুসলিমরা তাঁদের বাড়ি, মসজিদ, দরগাহ এবং ইমামবাড়ার দরজা খুলে দিয়েছিলেন। ২৫ হাজারের বেশি তীর্থযাত্রী আশ্রয় পেয়েছিলেন। খাবার সরবরাহ করা হয়েছিল। আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। নাখাস কোহনা, হিম্মতগঞ্জ এবং খুলদাবাদের মতো এলাকাগুলিতে ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। আটকে পড়া ভক্তদের জন্য হালুয়া-পুরির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে বাহাদুরগঞ্জের বাসিন্দা ইরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওঁরা আমাদের অতিথি। আমরা ওঁদের যত্ন নিয়েছি। পদদলিত হওয়ার ঘটনার পর ভয়াবহ পরিস্থিতি উপলব্ধি করে তিনি ও তাঁর প্রতিবেশীরা তাঁদের আশ্রয়ের জন্য মসজিদ এবং তাঁদের বাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিলেন। আপনাচকের বাসিন্দা মাসুদ আহমেদের কথায়, ‘মুসলিমরা তাদের ধর্ম করছে, হিন্দুরা তাদের ধর্ম করছে।
কোনও বিভেদ নেই। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, বিপদগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। আমরা আলাদা আলাদা ধর্ম পালন করলেও ঐক্য, সহানুভূতি এবং সর্বোপরি মানবতাকে বিসর্জন দেওয়া যায় না। এটাই তো সবধর্মের মূল কথা। খুলদাবাদের একটি মসজিদে আশ্রয় নেওয়া তীর্থযাত্রী আনন্দ যাদবের কথায়, ‘স্থানীয় মুসলিমরা দেবদূতের মতো এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের কৃতজ্ঞতাপ্রকাশের ভাষা নেই। সবার উপর মানবধর্ম—এই সত্যই আরও একবার প্রতিষ্ঠা হল।
গত ২৯ জানুয়ারি কুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩০ জন তীর্থযাত্রীর। আহত হয়েছেন বহু। এর পরেই কুম্ভে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। অনেকেই কুম্ভ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানেই ঘটে আর এক বিপত্তি। পথিমধ্যে এত ভিড় আর প্রবল ঠাণ্ডায় রাস্তার মধ্য অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেকে। তারপরেই স্থানীয় মসজিদে আশ্রয় নেন তাঁরা। যার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, হিন্দু ভক্তদের খাবার বিলি করছেন জনৈক এক মাওলানা। তাঁর সঙ্গে আরও অনেকে রয়েছেন। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন ভক্তরা। পোশাক দেখে বোঝা যায়, এঁরা কুম্ভ থেকে ফিরছেন। তবে সকলের চোখেই আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। যেন প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারলে বাঁচেন! কেউ কেউ কেঁদে ফেলছেন, সেই ছবিও ধরা পড়েছে তাতে। আসলে, এঁদের অনেকেই কুম্ভমেলার ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার সাক্ষী। সামনে থেকে এত মানুষকে পদপিষ্ট হতে দেখে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন তাঁরা।
এই প্রসঙ্গে মধ্যপ্রদেশ থাকা আসা এক তীর্থযাত্রী বলেন, আমরা যখন ক্লান্ত, বিধ্বস্ত অসহায় পড়েছিলাম। সে সময়ই এগিয়ে আসেন নাখাস কোহনা, রোশন বাগ, হিম্মতগঞ্জ, খুলদাবাদ, রানিমণ্ডির মুসলিম ভাইরা। রাতে খুলে দেন খুলদাবাদ সব্জি মণ্ডি মসজিদ, বড় তাজিয়া ইমামবাড়া, চৌক মসজিদের দরজা। সেখানে আশ্রয় নেন আমি সহ অনেক মানুষ। তাঁদের চা, গরম খাবার পরিবেশন করেন মসজিদের ইমাম সহ স্থানীয়রা।
হাইলাইটস
১)কুম্ভে পদপিষ্টের ঘটনা, আহতদের জন্য খুলে দেওয়া হল মসজিদ, মিলল খাবার-চিকিৎসা
২) মুসলিম-আতিথেয়তায় মুগ্ধ তীর্থযাত্রীরা৩) সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসলিমদের এই সেবার ছবি ভাইরাল।
৪) মুসলিমরা তাঁদের বাড়ি, মসজিদ, দরগাহ এবং ইমামবাড়ার দরজা খুলে দিয়েছিলেন