পুবের কলম প্রতিবেদকঃ কাশ্মীর ইস্যুতে অত্যন্ত কড়া ভাষায় কেন্দ্রের মোদি সরকারের সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন, ৩৭০ রদ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা যেভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, যেভাবে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বদনাম হয়েছে।
বৃহস্পতিবারই দিল্লিতে কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে উপত্যকার রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্সএনসি সুপ্রিমো ফারুক আবদুল্লাহ পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা গুলাম নবি আজাদ প্রমুখ। অন্যদিকে, কেন্দ্রের প্রতিনিধি দলের তরফে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টÉমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সহ অন্যান্যরা। কাশ্মীর ইস্যুতে হাইভোল্টেজ এই বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না প্রথমে রাজ্য মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল। এই পদক্ষেপের কারণে বিশ্বজুড়ে দেশের নাম খারাপ হয়েছে।’
এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও প্রশ্ন তুললেই ‘রাজদ্রোহী’র তকমা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফারুক আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতির মতো কাশ্মীরের নেতানেত্রীরা কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে ওঠে যে, কাশ্মীরের প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দি করা হয়। তারও নিন্দা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যেভাবে মেহবুবাকে গৃহবন্দি করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মমতা। তা নিয়ে মেহবুবা কন্যা ইলতিজা মুফতি প্রকাশ্যেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। ইলতিজা বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দেশের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যিনি কাশ্মীরের নেতাদের এভাবে গৃহবন্দি রাখার প্রকাশ্য সমালোচনা করেছেন। এ দিন ফের কাশ্মীর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তার জবাবে মোদি সরকারকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে খুব একটা অবগত নই। তাই আমি এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না। যদিও এরপরই মমতা বলেন, কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রের একনায়কতান্ত্রিক মনোভাবের জন্য বিশ্বমঞ্চে ভারতের বদনাম হয়েছে।’ মমতার পালটা প্রশ্ন, কাশ্মীর থেকে রাজ্যের মর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘করোনা মোকাবিলার মতো কাশ্মীর ইস্যুতেও মোদি সরকারের সমালোচনা হয়েছে। যদি মানুষের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে সবকিছু শেষ হয় যায়। এই একনায়কতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে বিশ্বমঞ্চে ভারতের নাম খারাপ হয়েছে।’
এ দিন, জম্মু-কাশ্মীরের ১৪ জন নেতার সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ রদ করার পর এটাই রাজনৈতিক স্তরে সবথেকে বড় বৈঠক। বৈঠকে মোদি,শাহ,দোভাল ছাড়াও উপত্যকার রাজ্যপাল মনোজ সিনহা পিএমও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অফিসের রাষ্টÉমন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।’
এ দিন কেন্দ্রের তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের যে দাবি কৃষকরা জানাচ্ছেন, তা যুক্তিযুক্ত।