দামেস্ক: সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে ওই অঞ্চলে জোর সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে ইসরাইল।ইতিমধ্যেই গোলান মালভূমির বাফার জোন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পাশাপাশি সিরিয়াজুড়ে বিমান হামলাও চালিয়েছে তারা। হানাদার বাহিনীর একটি দল দামেস্কের ২৫ কিলোমিটার কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তবে কি আসাদের সর্বনাশে ইহুদিবাদীদের পৌষমাস হল?
আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনের অবসান আঞ্চলিক ও বিশ্ব রাজনীতির জন্য কী বয়ে আনবে তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। নেতানিয়াহু ও জো বাইডেন দুইজনই বাশার আল আসাদের পতনের জন্য কৃতিত্ব দাবি করছেন। তারা ভূমিকা রেখেছেন ঠিকই, তবে তা যতটা না পরিকল্পনা অনুযায়ী, তার চেয়ে বেশি ঘটনাচক্রে হয়েছে। তবে এর বিনিময়ে তাদের প্রাপ্তির খাতায় যোগ হতে পারে, ইরানের সামরিক যোগাযোগ ও অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলার মতো অর্জন। বাশার আল আসাদ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শক্তির জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হতো ইরান এবং হিজবুল্লাহকে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরাইলে হামলা করলে গাজা যুদ্ধের সূচনা হয় যা লেবাননেও ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে আসাদের সহযোগী হিজবুল্লাহর ওপর। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হন। ২৭ নভেম্বর হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সেদিনই বিস্ময়করভাবে হামলা করে দ্রুত আলেপ্পো দখল করে নেয় হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস এর নেতৃত্বে সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী।
Aslo Read: সিরিয়ায় আমেরিকা ও ইসরাইলের ষড়যন্ত্র দেখছেন খামেনি
ইসরাইল এখন দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে সিরিয়ার দিকে। সিরিয়ায় সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রতিরোধে একটি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল গঠনের কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ। এরই মধ্যে দেশটির দক্ষিণে ওই অঞ্চলে সিরিয়ার ভূখণ্ড দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। দেশটিতে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর বিমান হামলাও জোরদার করেছে ইসরায়েল।
সিরিয়ার ভূখণ্ডে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৪৮০টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সিরিয়ার ১৫টি নৌযান, বিমান,বিধ্বংসী ব্যাটারি, অস্ত্র উৎপাদন ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন অবকাঠামোয় এসব হামলা চালানো হয়েছে।সিরিয়ার আল,বায়দা ও লাতাকিয়া বন্দরে গত সোমবার রাতে হামলা চালানো হয়। এখানেই ১৫টি জাহাজ নোঙর করা ছিল। হামলা চালিয়ে সিরিয়ার নৌবহর ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনাকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ‘বড় সাফল্য’ বলে মন্তব্য করেছেন।
সিরিয়ার হোমস, তারতাস, পালমিরা শহরেও ইসরায়েলি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে সিরিয়ার বিমানঘাঁটি, সামরিক যান, বিমান,বিধ্বংসী অস্ত্র, অস্ত্রের উৎপাদনক্ষেত্র, অস্ত্রাগারসহ বিভিন্ন অবকাঠামোকে। তারা বলছে, সিরিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়া রুখতে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
Also Read: সিরিয়াকে টুকরো হতে দেব না, হুঁশিয়ারি এরদোগানের
সিরিয়ার ওপর ইহুদিবাদী ইসরাইল যে আগ্রাসন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জানিয়েছে লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ। সংগঠনটি বলেছে, সিরিয়ার সামরিক শক্তি ধ্বংস করার জন্য ইসরাইলের চলমান এই আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক ঘটনা। এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, সিরিয়ায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসনের অবসান এবং দেশটির জনগণকে রক্ষার ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আরব ও মুসলিম দেশগুলোর দায়িত্ব রয়েছে।
হিজবুল্লাহ বলেছে, যখন যুদ্ধবিরতি লংঘন করে ইহুদিবাদী ইসরাইল লেবাননে নিয়মিতভাবে আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং গাজায় বর্বর গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে, ঠিক তখন সিরিয়ার ভূমিতে ইহুদিবাদীদের আগ্রাসন চলছে।