ইনামুল হক, বসিরহাট: ওয়াকফ সম্পত্তির উপর হস্তক্ষেপ কেবল আন ইসলামিক নয়, এটি এন্টিনেশনাল কাজ। যা কেন্দ্র সরকার সুকৌশলে করার চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ আন্দোলন জারি থাকবে। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার মাটিয়া থানার পানিগোবরা এ জেড দীনিয়াতি মিশন( বয়েজ) প্রাঙ্গনে ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে এক প্রতিবাদী সমাবেশে এমনই বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজসেবী এবং রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিম।
তিনি বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তি মোদির বাবারও নয়, আমার আপনার বাবারও নয়, ওটা আল্লাহর সম্পত্তি। কারণ আল্লাহর নামে দান করে দেওয়া সম্পত্তি কোন ব্যক্তি বা দল বা সরকারের হতে পারে না। যে সম্পত্তি থেকে কেবল মুসলমানরা নয়, প্রত্যেকটি মানুষ উপকৃত হতে পারে। যাতে পুরো সমাজের ভালো হয়। তিনি কেন্দ্র সরকারকে নিশানা করে বলেন, ওয়াকফ সংশোধনী বিল আনার উদ্দেশ্য মুসলমানদের অর্থনৈতিকভাবে আটকে দেওয়া, যাতে তারা সেই সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এই সম্পত্তির ওপর পুরো নিয়ন্ত্রক হিসেবে সরকার থাকতে চায়। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষে এটা হতে পারে না। আসলে আজ ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে বিভেদ লাগিয়ে দিয়ে একটি দল ভোট আদায় করতে চায়। তাছাড়া এই সরকার কখনো নোটবন্দি, কখনো জিএসটি এনে সাধারণ মানুষ থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করছে। আর এখন নানা বিল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আমি যদি তর্কের খাতি ধরে নেই ওয়াকফ কমিটিতে দু’জন নন মুসলিম রাখতে হবে কোন আপত্তি নেই, তাহলে রাম মন্দির ট্রাস্ট, তিরুপতি মন্দির, তেলেঙ্গানা হিন্দু সমিতিতে দুজন মুসলমানকে রেখে দিন। মুসলমানদের রাখা তো দূরের কথা, তারা প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলায় ঘোষণা দিয়েছে কোন মুসলমানকে দোকান দিতে দেওয়া হবে না। ওরা শুধু জাতপাত আর হিন্দু মুসলমান করতে চায়।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু নিচু জাতের বলে তাকে রাম মন্দিরে প্রবেশ অধিকার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।তিনি কবির কথা উদ্ধৃত করে বলেন, ৩৩ কোটি মোরা নহি কভু ক্ষীন, হতে পারি দীন তবু নহি মোরা হীন। আজ ১০০ কোটির বেশি মানুষের ভারতবর্ষে আমরা কি পারিনা এই বিভাজনের, এই ধর্মনিরপেক্ষতার কাঠামো ভাঙার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে এক হতে? তাই শুধু মুসলমান ভাই-বোনদের বলবো না, প্রত্যেক ভারতীয় হিসেবে আমাদের সকলকে সরব হতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ও পুবের কলম সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান প্রিয়দর্শিনী হাকিমেরর বক্তব্যের প্রশংসা করে বলেন, বাংলার রাজনীতিতে, বাংলার সমাজ সেবায় তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। প্রিয়দর্শিনী আগামী দিনে আমাদের লিড করবে। বসিরহাটে বহু বাঙালি মুসলিম মনীষীর জন্মভূমি বলে আমি পবিত্র মনে করি। এখানকার বীর সন্তান তিতুমীর, আকরাম খাঁন, মাওলানা মুজিবুর রহমান, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আল্লামা রুহুল আমিন সহ সকলকে স্মরণ করতে হয়।
পানিগোবরার পীরে কামেল আব্দুল আজিজ রহ.-র আওলাদদের সঙ্গে এই সভায় উপস্থিত থাকতে পেরে গর্ব প্রকাশ করেন ইমরান সাহেব। ওয়াকাফ সংশোধনী বিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মোদি সরকারের কাছে আবেদন করিনি যে আমাদের ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষা করুন। ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর বসিয়ে এই ওয়াকাফ সম্পত্তি রক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। আমাদের সমস্যা যদি কিছু থেকে থাকে, সেটা আমরাই সমাধান করব। আসলে মোদি সরকার পক্ষান্তরে এই বিল এনে মুসলিমদেরকে আর্থিকভাবে দৈন্য করে দিতে চায়। এই ওয়াকফ সম্পত্তি দিয়ে মানুষের কল্যাণে অনেক কিছু করা যায়। আমরা জানি হামদার্দের মত একটি বিখ্যাত দাওয়াখানা তাদের সমস্ত আয় ওয়াকফ করে দিয়েছে। যা দিয়ে তৈরি হয়েছে হামদার্দ বিশ্ববিদ্যালয়, হামদার্দ মেডিকেল কলেজ, গবেষণাগারসহ আরো অনেক কিছু।
আমাদের এই রাজ্যে যা রয়েছে তা দিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন , প্রবল বাঁধার মুখে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পার্লামেন্টে আনতে পারিনি মোদি সরকার । এখন সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি জে পি সি গড়েছে সকলের মতামত নেওয়ার জন্য। সেই জে পি সি আগামী ২০ তারিখ কলকাতা আসার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই কমিটির চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্যরা তারা তো সংশোধনী বিলের পক্ষেই, তাহলে সেখানে আর বিরোধীদের কথা শুনে কি করবে।
আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি, কল্যাণ ব্যানার্জির মতো সাংসদেরাও এই বিলের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন। কিন্তু তাদের কথা শোনা হচ্ছে কই। তবু পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সেখানে আমি আমার বক্তব্য রাখবো জে পি সি র সামনে। পশ্চিমবঙ্গের ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে তুলে ধরব।বিশিষ্ট শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আমিনুল আম্বিয়া বলেন, বাবরি মসজিদকে দখল করতে তাদের অনেক সময় লেগেছে। অন্য মসজিদ মাদ্রাসা গুলিকে দখল করতে সময় নষ্ট করতে রাজি নয় মোদি সরকার। তাই যাতে মুসলিমদের সম্পত্তি সহজে হস্তগত করা যায় তার শর্ট কাট পথ বের করতে আইন করে ওয়াকফ সম্পত্তি নিজেদের কব্জায় নিতে চায় এই সরকার।
এই বিলকে না আটকাতে পারলে এ দেশের মুসলমানদের মসজিদ মাদ্রাসাসহ সমস্ত চরম ক্ষতি হয়ে যাবে। মোদির অবস্থার পৈতৃক সম্পত্তি নয়, অভাব সম্পত্তি মুসলমানদের মুসলমানরাই জান মাল দিয়ে রক্ষা করবে। অল বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ বলেন, মুসলমানদের হেয় প্রতিপন্ন করা যায়, কীভাবে তাদের দমিয়ে রাখা যায় সেজন্যেই কখনো তিন তালাক কখনও ওয়াকফ এনে কেন্দ্র সরকার ব্যস্ত আছে। এছাড়া আর তাদের কোন এজেন্ডা নেই। এতে মুসলমানদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন সরকার। আমাদের রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ও আমাদের যারা অভিভাবক রয়েছেন তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এর প্রতিবাদ করছেন। আশা করছি এই বিল এনে আমাদের পরাস্ত করা যাবে না।অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ইমাম প্রতিনিধি মাওলানা হাসানুজ্জামান জোরালো ভাষায় প্রতিবাদী বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হজ্ব কমিটির সদস্য কুতুব উদ্দিন তরফদার, পীরজাদা মাহবুব বিল্লাহ।
এদিনের সমাবেশের আহ্বায়ক তথা এজেড দ্বীনিয়াতি মিশনের সম্পাদক পীরজাদা মাওলানা মাসুম বিল্লাহ আহমেদ হাসান ইমরান, প্রিয়দর্শনী হাকিমকে মিশনের পক্ষ থেকে বিশেষ সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন।