কলম্বো, ১০ জানুয়ারি: শ্রীলঙ্কায় নয়া বামপন্থী মনোভাবাপন্ন সরকার আসার পর সেখানে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে। প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে মুসলিম, বৌদ্ধ, তামিল, হিন্দু সবাইকে নিয়ে ‘ইনক্লুসিভ’ শ্রীলঙ্কা গড়ার ডাক দিয়েছেন। কিন্তু একশ্রেণির উগ্রবাদী রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও শান্তি-সম্প্রীতি নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা পুরো উপমহাদেশ জুড়েই কাজ করছে। এবার শ্রীলঙ্কায় সেই কাজ শুরু করেছে একশ্রেণির বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। বার্মাতে তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর জেনোসাইড চালিয়েছিল। তাই আজ ১০ লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা ছিন্নমূল। শ্রীলঙ্কাতেও গৃহযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে কি তারা? সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উসকে দেওয়া এবং ইসলাম ধর্ম অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হলেন এক বৌদ্ধ। শ্রীলঙ্কার এই কট্টরপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষুকে ৯ মাসের জেলের সাজা দিয়েছে দেশটির আদালত। কলম্বো ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এই রায় দেয়।
গালাগোদাত্তে জ্ঞানসারা নামে অভিযুক্ত ওই বৌদ্ধ ভিক্ষু দেশটিতে বেশ প্রভাবশালী। তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ক্ষমতা হারিয়েও তিনি স্বৈরাচারের ওকালতি করে যাচ্ছিলেন। আগের শাসনই ভালো ছিল, এমন কথাও প্রচার করেছেন তিনি। দিশানায়েকের জমানায় মুসলিমরা বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে বলে তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে অভিযোগ করেন। আর বারবার মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। দেশটিতে ১০ শতাংশ মুসলিম রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে ৯৫ শতাংশের বেশি মুসলিম। সেখানে বারবার উসকানি দিচ্ছিলেন চিন্ময় প্রভু। আবার রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধেও তিনি অভিযুক্ত। তাই তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তার যদি জেলের সাজা হয় তাহলে তো পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যাবে!
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের শাস্তি দেওয়ার ঘটনা শ্রীলঙ্কায় খুবই বিরল। তবে গালাগোদাত্তে জ্ঞানসারা ধারাবাহিকভাবে ইসলাম বিদ্বেষ ও ধর্মীয় অবমাননা করছিলেন। ২০১৬ সালের একটি ঘটনায় গালাগোদাত্তেকে সাজা দেওয়া হয়েছে। ভীতি প্রদর্শন এবং আদালত অবমাননার জন্য ২০১৯ সালেও তিনি ছয় বছরের সাজা পেয়েছিলেন। তবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় তিনি মুক্তি পান। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। গালাগোদাত্তেকে দেড় হাজার শ্রীলঙ্কান রুপি জরিমানাও করা হয়েছে। অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড হবে তার। সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন জ্ঞানসারা। আপিলের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত তার জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত।
তিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষের একজন বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন। ২০২২ সালে দ্বীপ রাষ্ট্রটির তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন গোতাবায়া। রাজাপক্ষে ক্ষমতাচ্যুত হলে গত বছর জ্ঞানসারাকে দেশের মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়েছিল। তবে চার বছরের এ সাজায় তিনি জামিনে বাইরে ছিলেন। ২০১৮ সালে তাকে আদালত অবমাননার জন্য এবং একজন রাজনৈতিক কার্টুনিস্টের স্ত্রীকে ভয় দেখানোর জন্য ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেই শাস্তির মাত্র ৯ মাস খেটেছেন। কারণ সেই সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছ থেকে ক্ষমা পেয়েছিলেন তিনি।