আবদুল ওদুদ: সংখ্যালঘু উন্নয়নে ফের অর্থবরাদ্দ বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জন্য ৫০০৪.০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ছিল ৪৬৪৪.১৭ কোটি টাকা। ভোট পরবতী বাজেট অর্থাৎ ২০২১ সালের ৭ জুলাই যে রাজ্য অর্থবাজেট পেশ হয়, তাতে বরাদ্দ করা হয় ৪৭৭৭.৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ২ বাজেট থেকে এবার সংখ্যালঘু উন্নয়নে ২২৬.২৩ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।
কয়েক বছরে সংখ্যালঘু উন্নয়নে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু উন্নয়নে বাজেটে অর্থবরাদ্দ অব্যাহত রাখল। আর এই অর্থ দিয়ে সংখ্যালঘু উন্নয়নে কাজ হবে।
এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা মতে ২০২১-২২ বর্ষে এখনও পর্যন্ত ১, ২৩৯ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে বাজেটে জানানো হয়।
ঐক্যশ্রী প্রকল্পে ২০২১-২২ সালে ৫৩ লক্ষের বেশি বৃত্তির জন্য আবেদন পত্র জমা পড়েছে। এই ৫৩ লক্ষের মধ্যে চলতি বছরেই ১২ লক্ষ ৪৭ হাজার জনকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
এবারের অর্থ বাজেটে বলা হয়, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে সময়োপযোগী শিক্ষণের জন্য দু’দফায় ৩০০টি মাদ্রাসায় ৬০০টি ‘স্মার্ট ক্লাসরুম’ ও ই বুক চালু করা সম্ভব হয়েছে। কম্পিউটার শিক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের কম্পিউটার শিক্ষায় দক্ষ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিতে ১১৫টি মাদ্রাসায় কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তোলা হয়েছে।
সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এমএসকে, এসএসকে ও মাদ্রাসাগুলিতে পড়ুয়াদের ফ্রিতে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হয়েছে। সরকার পোষিত, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র এবং মাদ্রাসা প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির সকল ছাত্রছাত্রীকে বিনামূল্যে স্কুলের পোশাক, স্কুল ব্যাগ এবং জুতো প্রদান করা হয়েছে।
সংখ্যালঘু পরিবারের পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষার মানোয়ন্নের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ৫৪৬টি হস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪২৪টি হস্টেল চালু হয়েছে। এগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রত্যেক ছাত্রপিছু ১০ হাজার টাকা অর্থ ধার্য রয়েছে।
বাজেটে বলা হয়, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য এই ধরনের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই তিনটি প্রকল্প হল এমএসডিপি, আইএমডিপি এবং এমডিডব্লিউ। চলতি বছরে বিভিন্ন জেলায় এমএসডিপি-র জন্য ১৭.২৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। রাজ্যের ১৪টি জেলার ৩২টি ব্লকে আইএমডিপি প্রকল্পে মার্চ ১৪-১৮ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে।
এছাড়াও ২৩টি জেলার বিভিন্ন ব্লকে এমডিডব্লিউ প্রকল্পগুলিকে নির্ধারিত সময়ের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের সংখ্যালঘু পরিবারের ৬৭,৫০০ জনকে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হয়েছে।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে তরুণ-তরুণীদের স্বনির্ভর করতে কুটির শিল্প, কৃষকদের বিপণনের সুবিধার জন্য ৩০৫টি ‘কর্মতীর্থ’ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ২২০টি কর্মতীর্থ চালু রয়েছে। ৫৪টি চলতি মাসেই শেষ হবে। বাকি ২৪টি কর্মতীর্থের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে শেষ হবে।
এছাড়াও সংখ্যালঘু উন্নয়নে, ইংরাজি মাধ্যম মাদ্রাসার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সদরকে আর্থিক সহযোগিতা করা অসহায় মহিলাদের বাসস্থান নির্মাণ, কবরস্থানগুলিতে প্রাচীর দেওয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। সংখ্যালঘু উন্নয়নে আরও নানা কর্মসূচির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে অর্থ বাজেটে বলা হয়।